৭ উইকেটে হেরে সিরিজ জয়ের অপেক্ষা বাড়ল বাংলাদেশের
বর্ণিল হলো না তামিম ইকবালের ৩৩দম জন্মদিন। হয়নি সিরিজ জিতে ইতিহাস সৃষ্টি করা। দুইটি লক্ষ্যই ছিল এক সূতায় গাঁথা। তার জন্য প্রয়োজন ছিল দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচ জেতা। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে তা করা সম্ভব হয়নি। হেরে গেছে ৭ উইকেটে। বাংলাদেশের ৯ উইকেটে করা ১৯৪ রান দক্ষিণ আফ্রিকা অতিক্রম করে ৩৭.২ ওভারে ৩ উইকেটে ১৯৫ রান করে। সিরিজ জেতার পরিবর্তে সমতা। তিন ম্যাচের সিরিজের শেষ ম্যাচ সিরিজ নির্ধারনি অলিখিত ফাইনাল। ২৩ মার্চ বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে জয়ের ভেন্যু সেই সেঞ্চুরিয়ানই অনুষ্ঠিত হবে দিবা-রাত্রির এই ম্যাচটি।
জোহানেসবার্গের যে উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ছটফট করেছেন, সেই উইকেটেই স্বাগতিক দলের ব্যাটসম্যানরা বিচরন করেছেন স্বাভাবিক। বিশেষ করে বাংলাদেশের টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা প্রোটিয়াদের পেস আক্রমণের সামনে পড়ে হা-হুতাশ করেছেন। ৩৪ রান ফিরে যান যান ৫ ব্যাটসম্যাস তামিম ইকবাল ১, লিটন দাস ১৫, সাকিব ০, মুশফিক ১১, ইয়াসির আলী ২। সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকার যারাই ব্যাট করতে নেমেছেন তারাই রানের দেখা পেয়েছেন। মালান-ডি কক মিলেই উদ্বোধনী জুটিতে ৮৬ রান এনে বাংলাদেশকে কোনো রকমের লড়াই করারই সুযোগ দেননি। মালান ৪০ বলে ২৬ রান করলেও ওডি কক সিরিজে প্রথমবারের মতো খেলতে নেমিই হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে মাত্র ৪১ বলে ৬২ রান করে আউট হন। তার ইনিংসে ছিল ২ ছক্কা ৯ চার। মালানকে মিরাজ ও ডি কককে সাকিব ফিরিয়ে দেন। ৮ রানের ব্যবধানে দুই জন ফিরে গেলেও পরে আসা দুই ব্যাটসম্যান ভেরেন্নি ও দলপতি টেম্বা বাভুমা মিলে যোগ করেন ৮০ রান। বাভুমাকে ৩৭ রানে আফিফ ফিরিয়ে দেয়ার পর ভেরেন্নি ডসনকে নিয়ে জয়ের বাকি কাজ সারেন। ভেরেন্নি ৭৭ বলে ১ ছক্কা ও ৩ চারে ৫৮ রানে ও ডসন ৮ রানে অপরাজিত থাকেন।
বাংলাদেশের তিন পেসার তাসকিন, শরিফুল, কোন প্রভাবই বিস্তার করতে পারেননি। তাদের উপর চড়াও হয়ে খেলেছেন স্বাগতিক দলের ব্যাটসম্যানরা। দুই পেসাররা এতোই বাজেবোলিং করেন যে তাসকিন ও শরিফুলকে দিয়ে ৪ ওভারের বেশি বোলিংই করাননি তামিম ইকবাল। শরিফুল ২৯ ও তাসকিন ৪১ রান দেন। দুই পেসারের এমন ব্যর্থতায় তামিম ইকবাল তৃতীয় পেসার মোস্তাফিজকে দিয়ে ৩ ওভার বোলিং করেন। যদিও মোস্তাফিজ শরিফুল ও তাসকিনের মতো খরুচে ছিলেন না। রান দেন ১৩। পেসারদের মানের এ রকম অবনতির কারণে তামিম ইকবাল স্পিনারদের উপর ভরসা করেন। সাফল্যও এনে দেন তারাই। মিরাজ ১০ ওভারে একটু বেশি ৫৬ রান দিয়ে ১ উইকেট নিলেও সাকিব ১০ ওভারে মাত্র ৩৩ রান দেন ১ উইকটে। পরে তামিম আফিফ ও মাহমুদউল্লাহকে আক্রমণে নিয়ে আসেন। এখানে সফল হন আফিফ। তিনি ৫ ওভারে ১৫ রান দিয়ে নেন ১ উইকেট। মাহমুদউল্লাহ ১.২ ওভারে ৮ রান দেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের সময় উইকেটের চরিত্র ছিল সম্পূর্ণ ব্যাটিং বান্ধব। যা বাংলাদেশের ইনিংসের পুরো বিপরীত। তবে বাংলাদেশের ইনিংসের প্রথম ৫ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে ব্যাটিং বান্ধব হয়ে উঠতে থাকে। যে কারণে মাত্র ১২.৪ ওভারে টপ অর্ডারের ৫ ব্যাটসম্যানকে হারানোর পরও বাংলাদেশ অলআউট হয়নি। দুইটি বড় জুটি হয়েছে। একটি ষষ্ট উইকেট জুটিতে মাহমুদউল্লাহ ও মিরাজ ৬০ ও এবং আফিফ ও মিরাজ সপ্তম উইকেটি জুটিতে ৮৬ রান যোগে করেন। আফিফ খেলেন ১০৭ বলে ৯ চারে ৭২ রানের ইনিংস।
স্কোরবোর্ডে বাংলাদেশের ৯ উইকেটে ১৯৪ রান দেখে হতাশ হওয়াটাই স্বাভাবিক। আবার ৩৪ রানে টপ অর্ডারর ৫ ব্যাটসম্যানকে হারানোর পর এই সংগ্রহ অনেকে বেশি। অন্তত বোলারদের লড়াই করার মতো। যদিও তাার মোটেই লড়াই করতে পারেননি।
জোহানেসবার্গের পেস স্বর্গরাজ্য উইকেটে তামিম ইকবালের সিদ্ধান্তকে ভুল প্রমাণ করতে মোটেই সময় নেননি প্রোটিয়া পেসাররা। শুরুটা বার্থডে বয় তামিম ইকবালকে দিয়ে। মুহূর্তে তা পরিণত হয় ৩৪ রানে ৫ উইকেট। শুরুটা করেন এনগিডি। পরে ভয়ংকর রুপে আবির্ভত হন রাবাদা। যে কারণে ৩০০ বলের ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ডট বল দিয়েছেন ১৮৯টি। ছয় ছিল ২টি। আর বাউন্ডারি ১৬টি।
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা মূলত পরাস্ত হয়েছেন পেসারদের গতি আর বাউন্সের কাছে। ৩৪ রান ৫ উইকেট হারানোর পর বাংলাদেশের শতরান পার হওয়াই শঙ্কায় ছিল। সে শঙ্কা দূর করেন আফিফ ৭২ রানের ইনিংস খেলে। সঙ্গি হিসেবে পেয়ে যান মাহমুদউল্লাহ ও মিরাজকে। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে রান আসে ৬০। মাহমুদউল্লাহ ২৫ রান করে সামসির বলে ফিরে যাওয়ার পর আফিফ ও মিরাজ সপ্তম উইকেট জুটিতে যোগ করেন ৮৬ রান। এই দুই জনকে যখন কিছুতেই ফেরানো যাচ্ছে না, তখন আবার আক্রমণে এসে রাবাদা একই ওভারে ফিরিয়ে দেন প্রথমে আফিফ ও পরে মিরাজকে। আফিফ ৭৯ বলে ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি করার পর ১০৭ বলে ৯ চারে ৭২ রান করে আউট হন বাভুমার হাতে ধার পড়ে। মিরাজকে ৩৮ রান ক্যাচ ধরেন মালান। রাবাদা ৩৯ রানে নেন ৫ উইকটে। ১টি করে উইকেট নেন এনগিডি, পার্নের, ডসন ও সামসি।
এমপি/