সিরিজ জয়ের সঙ্গে মিরাজের নজর বিশ্বকাপ জেতা
এক সময় অসম্ভবকে সম্ভব করা বাংলাদেশের জন্য ছিল আকাশ কুসুম কল্পনা। কালের চক্র ঘুরে এখন সেখানে পরিবর্তন এসেছে। এখন তারা অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলতে পারে। যে সব দেশে ‘জয়’ আকাশের চাঁদ হয়েছিল, তা এখন হাতে এসে ধরা দিতে শুরু করেছে।
নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে প্রথম জয় তুলে নিতে বেছে নিয়েছিল টেস্ট ম্যাচকে। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতেও পেয়েছে জয়। তা এসেছে ওয়ানডে ম্যাচের মাধ্যমে। দেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় পরিবর্তনের ইচ্ছের কথা বলে গিয়েছিলেন দলপতি তামিম ইকবাল। সেই কাঙ্ক্ষিত জয় এসে গেছে। প্রথম ম্যাচেই জয় পেয়ে যাওয়াতে এখন স্বপ্নের পরিধি ঢালপালা বিস্তার করে অনেক বড় হয়েছে। জিততে চায় সিরিজও। এমন কি এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপও। এমনটি জানিয়েছেন প্রথম ম্যাচে ৪ উইকেটে নিয়ে ম্যাচ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখা স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ।
বিসিবির পাঠানো ভিডিও বার্তায় তিনি আজ বলেন, ‘স্বপ্ন যদি বড় না থাকে তাহলে তো এগুনো যায় না। আমাদের সবার স্বপ্ন অনেক বড়। আমরা ভালো কিছু করতে চাই। দেশে যেমন আমরা সিরিজ জিতি, বিদেশেও সিরিজ জিততে চাই। আমরা এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হতে চাই।তাই আমাদের চিন্তাভাবনাও ওরকম যে আমরা কীভাবে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হতে পারি, এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন হতে পারি এবং দেশের বাইরে সিরিজ জিততে পারি। এখন আমরা ওইভাবেই পরিকল্পনা করছি এবং তা অনুসরণ করছি যে আমরা কীভাবে ভালো ক্রিকেট খেলে জয় অর্জন করতে পারি।’
সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল দুপুর ২টায় জোহানেসবার্গে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঘরের মাঠে বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের রেকর্ড আছে। এবার তা দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে করে দেখাকে বদ্ধ পরিকর তামিমরা। মিরাজের কথায় ফুঠে উঠেছে সে রকমেই আভাস।
দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথম জয় তুলে নিতে মিরাজ ব্যাট-বলে রেখেছেন ভালো ভুমিকা। ব্যাট হাতে ২৪ বলে মাটে নেমে ১৩ বলে খেলে ২ ছক্কায় করেন অপরাজিত ১৯ রান। পরে বল হাতে প্রথম দফায় ছিলেন ম্রিয়মান। প্রথম ৪ ওভারে রান দিয়েছিলেন ৩৮। রীতিমতো হতাশজনক। যদিও তখন ম্যাচ হাতছাড়া হয়ে যায়নি। ক্রমেই ডসন আর মিলার ফনা তুলতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসী অনেকটা জোর করে চেয়ে তামিম ইকবালের কাছ থেকে বোলিং পেয়েছিলেন।
তারপর যা করলেন তা নতুন করে যোগ হয়েছে তার কীর্তিতে। টানা ৫ ওভার বোলিং করে ২৩ রান দিয়ে তুলে নেন ৪ উইকেট। সেই সময়ের ঘটনা বর্ণনা করে মিরাজ বলেন, ‘প্রথম চার ওভার করার সময় আমি নিজেও একটু দ্বিধান্বিত ছিলাম। কারণ ওরা খুব ভালো ব্যাটিং করছিল এবং আমার বোলিংয়েই সুযোগ নিচ্ছিল। আমিও একটু দ্বিধায় পড়ে গেছিলাম কোন লেন্থে, কীভাবে বল করব। মুশফিক ভাই বলছিলেন, একটু বৈচিত্র্য এনে বল করলে ভালো হয়। তখন আমি কাজটা সেভাবে করতে পারিনি। কারণ ওরা আমাকে চার্জ করছিল এবং আমিও বেশি রান দিয়ে ফেলেছিলাম। শরিফুল, তাসকিন ভাই খুব ভালো বোলিং করেছিলেন। সাকিব ভাইও মাঝখানে ভালো বোলিং করেন। তখন আমাকে যে একটা বিরতি দেওয়া হলো, সেই বিরতিতে আমি মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিলাম যে আমার ভালো করতেই হবে। কারণ এই ম্যাচে আমি যদি ভালো না করতে পারি, তাহলে হেরে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। কারণ আমার তখন প্রায় ছয় ওভার বাকি ছিল। তাই নিজেকে মানসিকভাবে বুস্ট আপ করেছি এবং নিজেই নিজের কথা বলেছি যে ইনশাআল্লাহ আমি পারব।’
অধিনায়কের কাছে বোলিং পেয়ে নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কাল (১৮ মার্চ শুক্রবার) যখন বেশি রান দিচ্ছিলাম তারপরও আমি তামিম ভাইকে বলেছিলাম, আপনি আমার ওপর বিশ্বাস রাখেন ইনশাআল্লাহ আমি উইকেট নিয়ে ম্যাচ বের করে দিতে পারব। তামিম ভাইয়ের অনেক ভালো লেগেছে এটা। লিটন দাদাও আমাকে কাল অনেক সমর্থন দিয়েছেন। উনি বলছিলেন যে আমি এখান থেকে একটা বের করতে পারলেই আমরা ম্যাচ জিতে যাব।’
এ সময় তিনি সাকিবের পরামর্শ নিয়েছিলেন জানিয়ে মিরাজ বলেন, ‘দ্বিতীয় স্পেলে উইকেট অনুযায়ী বোলিং করেছি। আর ওই পাশের উইকেট থেকে আমি একটু সহায়তাও পাচ্ছিলাম। একটু টার্ন করছিল। সাকিব ভাই আমাকে একটা বলেছিলেন, এখানে আস্তে–ধীরে মিলিয়ে বোলিং করলে ভালো হবে। আমি যখনই দ্বিধায় থাকি, সাকিব ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলি। কারণ, ওনার বোলিংয়ের অভিজ্ঞতা প্রচুর এবং উনি উইকেট বুঝে বোলিং করতে পারেন।’
এমপি/এমএমএ/