বাংলাদেশের মেয়েদের আফসোসের হার
বোলিংয়ের এই উচ্ছ্বাস শেষ পর্যন্ত থাকেনি ব্যাটিং ব্যর্থতায়
এত কাছে, তবু কত দূরে। উইন্ডিজের বিপক্ষে জয়ের জন্য নিগার সুলতানাদের প্রয়োজন মাত্র ১৪১ রান। এবারের মেয়েদের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের আগের তিন ম্যাচের দিকে দৃষ্টি ফেরালে এই রান অতিক্রম করা অসম্ভব কিছু নয়। দক্ষিণ আফ্রিকার ২০৭ রানের জবাব দিতে নেমে ১৭৫ রান, নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে আগে ব্যাট করে ২৭ ওভারে ৮ উইকেটে ১৪০ রান এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ী হওয়া ম্যাচে ৭ উইকেটে ২৩৪ রান। কিন্তু এবার উইন্ডিজকে হাতের মুঠোয় পেয়েও বোতল বন্দি করতে পারলো না বাংলার মেয়েরা। বের হয়ে গেছে ম্যাচ। পাওয়া হয়নি মেয়েদের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে টানা দ্বিতীয় জয়। ৩ বল বাকি থাকতেই ১৩৬ রানে অলআউট হয়ে নিশ্চিত জয়ী হওয়া ম্যাচ হাতছাড়া হয়। প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও এভাবে জয়ী হওয়া ম্যাচ হাতছাড়া হয়েছিল বাংলাদেশের।
এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মেয়েদের ব্যাটিংটাই ছিল আশা জাগানিয়া। কিন্তু সেই তারাই এবার হতাশ করলেন। আগের তিন ম্যাচের সফল উদ্বোধনী জুটি এবার শুরুতেই ব্যর্থ হলেও শারমিন (১৭), ফারজানা (২৩) নিগারের (২৫) ব্যাটে ছিল লক্ষ্য পূরণের পথে। কিন্তু মিডল অর্ডারের একটা মিনি ধস বাংলাদেশকে কক্ষচ্যুত করে দেয়। ২ উইকেটে ৬০ রান থেকে ৫ উইকেটে ৬০ রান। এরপর ৮৫ রানে নেই ৭ উইকেট। বাংলাদেশের জয় তখন হাতের মুঠো থেকে বের হয়ে দূর আকাশের তারা হয়ে গেছে। কিন্তু নাহিদা আক্তার যেন সেই তারাকে আবার হাতের মুঠোয় ভরতে ছিলেন বদ্ধ পরিকর।
বোলিংয়ের এই উচ্ছ্বাস শেষ পর্যন্ত থাকেনি ব্যাটিং ব্যর্থতায়
আট নম্বারে ব্যাট করতে নেমে সালমা, জাহানার ও ফরিয়া তৃষ্ণাকে নিয়ে তিনি অসাধ্য সাদনের দিকে ছুটেছিলেন। সালমাকে (২৩) নিয়ে অষ্টম উইকেট জুটিতে ২৫, জাহানারাকে নিয়ে (৮) নবম উইকেট জুটিতে ১২ ও শেষ উইকেট জুটিতে ফারিয়াকে (০) নিয়ে ১৪ রান যোগ করেন। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৮ রানের। প্রথম ৩ বলে (একটি ছিল ডট বল) তিনি ৩ রান নেন। কিন্তু স্ট্রাইক পেয়ে ফারিয়া আর নিজেকে রক্ষা করতে পারেননি। স্টিফেনি টেলরের বলে বোল্ড হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টিভি পর্দায় ভেসে উঠে বাংলার বাঘিনিদের মাথায় হাত উঠার দৃশ্য। চাখে-মুখে রাজ্যের বিষ্ময় এই ম্যাচও হেরে গেলাম। ম্যাথিউস ১৫ রানে ৪ উইকেট নিয়ে হন ম্যাচ সেরা। টেলর ও ফ্লেচার ২৯ রান করে দিয়ে নেন ৩টি করে উইকেট।
দুই দলের ইনিংসে একটা মিল ছিল। উইইন্ডিজের ৭০ রানে ৭ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর বাকিরা মিলে যোগ করেছিলেন আরো ৭০ রান। বাংলাদেশের ৭ উইকেট পড়েছিল ৮৫ রানে। বাকিরা মিলে ৫১ রান যোগ করে ম্যাচকে জমিয়ে তুলেছিলেন।
এর আগে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের বে ওভালে টস জিতে যে উদ্দেশ্য নিয়ে অধিনায়ক নিগার সুলতানা বোলারদের হাতে বল তুলে দিয়েছিলেন, তার সেই লক্ষ্য পূরণ যথাযথভাবেই করেন তারা। পিচকে উইন্ডিজের ব্যটসম্যানদের জন্য বিচরনভুমি হয়ে উঠতে দেয়নি। মেতে উঠেন রান না দেওয়ার কৃপণতায়। ফলে উইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেননি। মাত্র ৪ জন ব্যাটসম্যান দুই অংকের রান করেন। এর মাঝে সর্বোচ্চ অপরাজিত ৫৩ রান করেন ক্যাম্পবল। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছিল ওপেনার হাইলি ম্যাথিউসের ১৮। ১৭ রান করে করেন আরেক ওপেনার ডেন্দ্রা ডট্টিন ও লোয়ার অর্ডারে ফ্লেচার। গোটা ইনিংসে কোনো ছক্কা হতে দেননি বাংলাদেশের বোলাররা। বাউন্ডারি ছিল মাত্র ১২টি। এর মাঝে ইনিংসের এক পর্যায়ে ১২ ওভার ৩ বল থেকে ৩৩ ওভার অর্থ্যাৎ ২০ ওভার ৪ বল পর্যন্ত কোনো বাউন্ডারি মারতে পারেননি উইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরা।
বোলিংয়ের এই উচ্ছ্বাস শেষ পর্যন্ত থাকেনি ব্যাটিং ব্যর্থতায়
উইন্ডিজের শুরুটা একেবারে মন্দ হয়নি। ২৯ রান আসে দুই ওপেনারের ব্যাট থেকে। ডেন্দ্রা ডটিনকে ১৮ রানে জাহানারা ফিরিয়ে দেয়ার পরই শুরু হয় তাদের উইকেটে আসা-যাওয়ার মিছিল। এরপর নাহিদা-সালমার তোপে পড়ার সঙ্গে দুইটি রান আউটে মেরুদন্ড ভেঙে পড়ে উইন্ডিজের। ৭০ রানে হারায় ৭ উইকেট। একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে সতীর্থদের আসা-যাওয়া দেখার পাশাপাশি ক্যাম্পবল হাল ধরে দলের ভান্ডারে কিছু রান জমা করার চেষ্টা করেন। সেখানে তিনি সফলও হন। তাকে কেউ আউট করতে পারেনি। ১০৭ বলে ৫ বাউন্ডারিতে ৫৩ রান করে তিনি অপরাজিত থাকেন। অষ্টম ও নবম উইকেট জুটিতে তিনি ফ্লেচারকে নিয়ে ৩২ ও ৩৮ রানের জুটি গড়লে উইন্ডিজ অলআউট না হয়ে দলের সংগ্রহকে ১৪০ পর্যন্ত নিয়ে যান। পরবর্তী সময়ে তাদের জয়ে রাখে বড় ভুমিকা।
অধিনায়ক নিগার সুলতানা ৭ জন বোলার ব্যবহার করেন। ৪ জনই রান দিয়েছেন ওভার প্রতি তিনের অনেক কম। সবচেয়ে বেশি কৃপণতা দেখান রুমানা ওভার প্রতি ১ দশমিক ৮৩ করে রান দিয়ে। জাহানারা ও ফারিয়া তৃষ্ণা ওভার প্রতি তিনের উপরে রান দেন। শুধুমাত্র রিতু মনি ওভার প্রতি ৫ করে রান দেন মাত্র ৩ ওভার হাত ঘুরিয়ে ১৫ রান দিয়ে।
বাংলাদেশের বোলারদের মাঝে ১০ ওভারের কোটা পূরণ করেন সালমা খাতুন ও নাহিদা আক্তার। দুই জনই ২৩ রান করে দিয়ে ২টি করে উইকেট নেন। আগের ম্যাচের সেরা বোলার ফাহিমা খাতুন কোনো উইকেট না পেলেও ৮ ওভারে ১৯ রান দেন।
এমপি/এসএ/