মেসি আসলেন, দেখলেন এবং জয় করলেন

এ যেনো জাদুকরের প্রত্যাবর্তন ! আসলেন, দেখলেন এবং জয় করলেন।মেসি যোগ দেওয়ার পর থেকেই রীতিমত বদলে যায় মায়ামি।তলানিতে পড়ে থাকা একটি দলকে অভিষেকের মাত্র এক মাসের মধ্যে এনে দিলেন নিজেদের ইতিহাসের প্রথম শিরোপাও। আজ লিগস কাপের ফাইনালে ন্যাশভিলকে টাইব্রেকারে ১০-৯ গোলে হারায় মেসির দল ইন্টার মায়ামি।
বিশ্বকাপ জিতে গত ডিসেম্বরেই বৃত্ত পূরণ করেছিলেন লিওনেল মেসি। কিন্তু সেখানেই থেমে যেতে চাননি আর্জেন্টিনার অধিনায়ক। নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে ইউরোপের ফুটবলকে বিদায় বলে ছুটে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। যে দেশে জনপ্রিয়তায় ফুটবলের অবস্থান ৪ নম্বরে, সেই দেশেই তিনি জাগিয়ে দিলেন নতুন ফুটবল-উন্মাদনা।
লিগস কাপের অন্যান্য ম্যাচের মতো ফাইনালেও মেসি ছিলেন উজ্জ্বল। মায়ামির জার্সিতে এখন পর্যন্ত সব ম্যাচেই গোল পেয়েছেন তিনি। আজও তাঁর গোলেই প্রথমে এগিয়ে যায় ইন্টার মায়ামি। ২৩ মিনিটে বাঁ পায়ের শটে লক্ষ্য ভেদ করেন মেসি। প্রথমার্ধ শেষ হয় ১-০ গোলে। দ্বিতীয়ার্ধে অল্প সময়েই সমতায় ফেরে ন্যাশভিল এসসি। ৫৭ মিনিটে দুর্দান্ত হেডে লক্ষ্য ভেদ করেন ফাফা পিকাল্ট। গোলে অ্যাসিস্ট করেছেন স্যাম কারিজ। এরপর গোল করতে দুই দলই মরিয়া হয়ে ওঠে। তবে কোনো দলই গোল করতে পারছিল না। কখনো গোলরক্ষকদের দৃঢ়তা, কখনো বা খেলোয়াড়েরা ঠিকমতো লক্ষ্য ভেদ করতে পারেননি। এই ম্যাচে ৫৯ শতাংশ বল দখলে রেখেছিল মায়ামি, ন্যাশভিল বল দখলে রেখেছিল ৪১ শতাংশ।
৯০ মিনিটে ১-১ গোলে ড্র হলে খেলা গড়ায় পেনাল্টি শ্যুটআউটে। সব রোমাঞ্চ যেন জমা ছিল টাইব্রেকারের জন্যই।
চ্যাম্পিয়ন নির্ধারণে ম্যাচটি এরপর টাইব্রেকারে গড়ায়। পেনাল্টি শ্যুট আউটেও কেউ কাউকে ছাড়ার পাত্র নয়। স্পটকিক থেকে মায়ামির হয়ে প্রথম শটেই বল জালে ফেলেন মেসি। প্রথম শটে গোল পায় নাশভিলেও, তবে দ্বিতীয় শটে মিস করে তারা। টানা চার শটে গোলের দেখা পাওয়া মায়ামি হোঁচট খায় পঞ্চম শটে গিয়ে। মিস করে বসেন ভিক্টর উল্লোয়া। এরপর খেলা গিয়ে ঠেকে ১১তম শটে। যেখানে নাশভিলে গোলরক্ষকের শট ঠেকিয়ে দেন ড্রেক ক্যালেন্ডার। যার ফলে নিজেদের ইতিহাসে প্রথম শিরোপা জয়ের উল্লাসে মাতে মায়ামি।
এর আগে ২৪তম মিনিটে সতীর্থের কাছ থেকে বল পেয়ে দুই ডিফেন্ডারকে ড্রিবলিংয়ে বোকা বানান মেসি, এরপর বাঁ-পায়ের সেই চিরচেনা শট। ডি-বক্সের কিছুটা বাইরে থেকে নেওয়া তার শটটি ন্যাশভিলে গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে জালে জড়ায়। এ নিয়ে টানা সপ্তম ম্যাচে গোল পেলেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। যার ওপর ভর করেই জয়খরায় ভোগা মায়ামি এতদূর এসেছে। এটি চলমান লিগে মেসির দশম এবং ফাইনালের মঞ্চে ৩৭ গোল।প্রতিটি ম্যাচেই গোল করা মেসি টুর্নামেন্টসেরা এবং মূল্যবান খেলোয়াড়ের পুরস্কারও জিতেছেন।
এর মধ্য দিয়ে নিজের ট্রফি ক্যাবিনেটটাও আরেকটু সমৃদ্ধ করে নিলেন মেসি। ফুটবল ইতিহাসে এককভাবে শিরোপা জয়ে সবার ওপরে উঠলেন মেসি। এ পথে তিনি পেছনে ফেলেছেন দীর্ঘদিনের সতীর্থ দানি আলভেজকে। যৌন নিপীড়নের অভিযোগে কারাগারে আটক ব্রাজিলিয়ান তারকা আলভেজ তাঁর ক্যারিয়ারে জিতেছেন ৪৩টি শিরোপা। তাঁকে ছাড়িয়ে এবার মেসি জিতলেন ৪৪তম শিরোপা। এখানেই হয়তো শেষ নয়। সামনের দিনগুলোয় মেসির নামের সঙ্গে হয়তো যুক্ত হবে নতুন নতুন শিরোপা।
মেসির ৪৪ শিরোপা
বার্সেলোনা (৩৫)
লা লিগা: ১০
কোপা দেল রে: ৭
সুপারকোপা: ৮
চ্যাম্পিয়নস লিগ: ৪
উয়েফা সুপার কাপ: ৩
ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ: ৩
পিএসজি (৩)
লিগ ‘আঁ’: ২
ট্রফি দে চ্যাম্পিয়নস: ১
ইন্টার মায়ামি (১)
লিগস কাপ: ১
আর্জেন্টিনা (৫)
ফিফা বিশ্বকাপ: ১
কোপা আমেরিকা: ১
লা ফিনালিসিমা: ১
অলিম্পিক: ১
যুব বিশ্বকাপ: ১
