মোহামেডান শিবিরে অন্য রকম আমেজ!

একটা সময় ফুটবল মানেই ছিল হয় মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন, না হয় আবাহনী। লিগ হোক আর ফেডারেশন কাপ হোক কিংবা হোক অন্য কোনো আসর। এই দুই দলের বাইরে গিয়ে তৃতীয় দলের শিরোপা জেতা ছিল রীতিমতো হিমালয় জয় করার মতোই কঠিন। মূলত শিরোপা লড়াই সীমাবদ্ধই থাকত এই দুই দলের মাঝেই।
কালের বিবর্তনে ধীরে ধীরে ফুটবল তার জৌলুস হারাতে থাকে। একইসঙ্গে হারিয়ে যেতে থাকে আবাহনী-মোহামেডান দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর শিরোপা লড়াইও। মূলত মোহামেডান ক্লাব শক্তিশালী দল না গড়ায় তারাই পিছিয়ে পড়ে শিরোপার লড়াইয়ে। কিন্তু আবাহনী বহাল তবিয়তে শিরোপা লড়াইয়ে টিকে থাকে। জিততে থাকে শিরোপাও। যে কারণে আবাহনীর শিরোপা জেতার ক্ষেত্রে দীর্ঘ বিরতি না পড়লেও মোহামেডানের ক্ষেত্রে দীর্ঘ বিরতি পড়ে যায়। সেই বিরতি এমনই যে ২০১৩ সালে কোটি টাকার সুপার কাপে মোহামেডান আর শিরোপাই জিততে পারেনি। এমনকি কোনো আসরের ফাইনালেও উঠতে পারেনি। ২০১৩ সালে কোটি টাকার সুপার কাপের ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীকে হারিয়ে জিতেছিল সর্বশেষ শিরোপা।
দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে এক দশক পর তারা আবার দেখা পেয়েছে ফাইনালের। ঘ্রাণ পাচ্ছে শিরোপার। প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছে সেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীকে। দুই দল মুখোমুখি হবে কুমিল্লা মুক্তিযোদ্ধা ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে ফেডারেশন কাপের ফাইনালে। খেলা শুরু হবে বেলা সোয়া ৩টায়। টেন স্পোর্টস সরাসরি খেলা সম্প্রচার করবে। এই দুই দল ফেডারেশন কাপের ফাইনাল সর্বশেষ খেলেছিল ২০০৯ সালে। সেবারও প্রতিপক্ষ ছিল আবাহনী। গোলশূন্যভাবে খেলা শেষ হওয়ার পর টাইব্রেকারে ৪-১ গোলে জিতেছিল মোহামেডান।
এক দশক পর ফাইনালে উঠতে পারায় মতিঝিল সাদা-কালো শিবিরে বিরাজ করছে অন্য রকম উত্তেজনা, পাশাপাশি উল্লাস আর আনন্দও। কারণ ফাইনালে উঠতেই ভুলে যাওয়া দলটির জন্য এটি অনেক বড় সাফল্য। তাইতো ধানমন্ডির আবাহনীর শিবিরে বাড়তি উৎসব কিংবা উত্তেজনা বিরাজ না করলেও মোহামেডানের অনেক পরিচালক থেকে শুরু করে সমর্থকরা ছুটছেন দল বেঁধে কুমিল্লায়। ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী গোলাম মোহাম্মদ আলমগীরের পক্ষ থেকে ২০০০ হাজার জার্সি বিতরণ করা হয়েছে পরিচালক ও সমর্থকদের মাঝে। পাশাপাশি সবাইকে কুমিল্লা যাওয়ার জন্যও ক্লাবের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। আবার অনেকেই নিজ থেকেই যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন।
রবিবার (২৮ মে) সন্ধ্যায় মোহামেডান ক্লাবে এসে ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর ৪০ লাখ টাকার বোনাস ঘোষণা করেছেন খেলোয়াড়দের জন্য। বিনিময়ে চান শিরোপা।
মোহামেডান ক্লাবের পরিচালক ও ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান আবু হাসান চৌধুরী প্রিন্স ফাইনালে উঠার আনন্দের মাঝেই তৃপ্তি পেতে চান না। শিরোপা জিতেই তিনি পেতে চান তৃপ্তি। তিনি বলেন, ‘অনেক বছর পর মোহামেডান ফাইনাল উঠেছে, এটি নিঃসন্দেহে আনন্দের। সবাই খুবই খুশি। কিন্তু শুধু ফাইনালে উঠতে পারার মাঝেই আমরা সন্তুষ্ট থাকতে চাই না। আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে চাই। তবেই ফাইনালে উঠা স্বার্থক হবে।’
মোহামেডান ক্লাবের আরেক পরিচালক হানিফ ভুইয়াও আবেগে আপ্লুত। স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে আমি কোটি টাকার প্রথম সুপার কাপ টুর্নামেন্টে মোহামেডান ও আবাহনীর সর্বশেষ ফাইনাল দেখেছিলাম বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের ভিআইপিতে বসে। স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শক দেখে আমি চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। এখন আর সে রকমটি হয় না। আমি আশা করি কুমিল্লাবাসী এবার তা পূরণ করে দেখাবে।’
এমপি/এসজি
