মেসির আলোতে আঁধারে এমবাপের হ্যাটট্রিক

ফুটবল গোলের খেলা। যতই ভালো খেলা হোক না কেন, গোল না করলে সেই ভালো খেলার কোনো মূল্যই থাকে না। ফুটবলের সৌন্দর্য গোলের মাধ্যমেই। খেলার নিষ্পত্তিও হয় গোলের মাধ্যমে। কিন্তু কখনো কখনো সেই গোলও আড়ালে পড়ে যায় অন্যের দ্যুতিতে। এই যেমন কাতার বিশ্বকাপে মেসির আর্জেন্টিনার শিরোপা জয় আড়ালে পড়ে গেছে এমবাপের হ্যাটট্রিক। কী অবিশ্বাস্যই না!
আসরের শুরু থেকে ধাপে ধাপে ফাইনালে উঠে আসার পর দুই দলেরই লক্ষ্য থাকে শিরোপা জেতা। তার জন্য চাই গোল। নির্ধারিত সময়ে নিষ্পত্তি না হলে অতিরিক্ত সময়, সেখানো নিষ্পত্তি না হলে টাইব্রেকারে।
ফাইনালে একটি গোলই খেলার ভাগ্য গড়ে দিতে পারে। সেখানে যদি হ্যাটট্রিক হয়, তাহলেতো কথাই নেই। কিন্তু সেই হ্যাটট্রিক করার পরও যদি দল না জিতে সেটাকে অবিশ্বাস্য বলেই মনে হবে। এমনই তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন ফ্রান্সের এমবাপে। অবশ্য এমবাপের গোলগুলো কখনো ফ্রান্সকে লিড এনে দিতে পারেনি। পিছিয়ে পড়া ফ্রান্সকে খেলায় ফিরিয়ে এনেছিল। খেলাকে নিয়ে গিয়েছিল টাইব্রেকারে। সেখানেও ফ্রান্সের হয়ে প্রথম গোল করেছিলেন এমবাপে। সতীর্থরা গোল করতে ব্যর্থ হলে মেসির শেষ বিশ্বকাপে মরুর বুক কাতারে রাত আলো ঝলমল হয়ে ওঠে আর্জেন্টিনার খেলোয়াড় আর সমর্থকদের উল্লাসে।
বিশ্বকাপের ৯২ বছরের ইতিহাসে এবারের আয়োজন ছিল ২২তম। এই ২২ আসরের মাঝে এমবাপে হলেন দ্বিতীয় খেলোয়াড় যিনি ফাইনালে হ্যাটট্রিক করেন। তবে তার মতো হতভাগা ছিল না প্রথম হ্যাটট্রিক করা ইংল্যান্ডের স্যার জেফরি চেরিস হার্স্ট। তার হ্যাটট্রিকে ইংল্যান্ড ৪-২ গোলে পশ্চিম জার্মানিকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতেছিল ১৯৬৬ সালে। এখন পর্যন্ত ইংল্যান্ডের এটিই একমাত্র শিরোপা।
১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ড ছিল স্বাগতিক। ফাইনালের আসর ছিল লন্ডনের বিখ্যাত ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম। ফাইনাল খেলা দেখতে মাঠে দর্শক উপস্থিত হয়েছিলেন ৯৬,৯২৪ জন। বিশ্বকাপের আসরে ইংল্যান্ডের প্রথম ফাইনাল। খেলার শুরুতেই ১২ মিনিটে হলের গোলে পশ্চিম জার্মানি এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ১৮ মিনিটে হার্স্টের গোলে ইংল্যান্ড খেলায় সমতা আনে। ১-১ গোলে খেলা যখন শেষের দিকে গড়াচ্ছিল, তখনই গোল করে এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড। তবে গোলদাতা ছিলেন না হার্স্ট। ৭৮ মিনিটে পিতার্সের গোলে ইংল্যান্ড এগিয়ে গিয়েছিল সেই গোল পশ্চিম জার্মানে পরিশোধ করেছিল খেলা শেষ হওয়ার এক মিনিট আগে। গোল করেছিলেন ওয়েবার। এরপর খেলা গোড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। আর তখনই নায়ক হয়ে হাজির হন হার্স্ট। ১০১ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় গোল করে দলকে ৩-২ গোলে এগিয়ে নেন হার্স্ট। খেলার শেষ বাঁশি বাজার অপেক্ষা, যখন-তখন রেফারি বাজাবেন শেষ বাঁশি। ইংল্যান্ডের সমর্থকরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার উল্লাস শুরু করে দিয়েছেন, ঠিক তখনই সেই উল্লাসে জোয়ার তৈরি করেন হার্স্ট ১২০ মিনিটে নিজের হ্যাটট্রিক করা গোল পূর্ণ করে। প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সঙ্গে বোনাস হার্স্টের হ্যাটট্রিক।
হার্স্ট হ্যাটট্রিক করলেও সর্বোচ্চ গোল করে জিততে পারেননি গোল্ডেন বুট। সেবার গোল্ডেন বুট জিতে ছিলেন ৯ গোল করে পর্তুগালের সর্বকালের সেরা ফুটবলার ইউসেবিও। কিন্তু এমবাপে এই হ্যাটট্রিক করেই মেসিকে পেছনে ফেলে জিতেছেন গোল্ডেন বুট। তার গোল আটটি, মেসির সাতটি।
ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর সব আলো এসে যেমন পড়েছিল হার্স্টের উপর তেমনি ফ্রান্স জিতলে সব আলো এসে পড়ত এমবাপের উপর। কিন্তু মেসির সাফল্যে এমবাপের হ্যাটট্রিক পড়ে গেছে আড়ালে!
এমপি/এসএন
