ক্রোয়েশিয়ার ব্রাজিল পরীক্ষা
হেক্সা মিশনে ব্রাজিল। অন্যদিকে প্রথম শিরোপার জয়ের খোঁজে ক্রোয়েশিয়া। গতবার ফাইনালে উঠেও ক্রোয়াটদের হারতে হয়েছে ফ্রান্সের কাছে। এবার কাতার বিশ্বকাপে সেই ক্রোয়েশিয়া কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি ব্রাজিলের। যে দলটির চোখে চিকচিক করছে ষষ্ঠবারের মতো শিরোপা জয়ের। সেমিতে যাওয়ার লড়াইয়ে ব্রাজিল-ক্রোয়েশিয়া আজ রাতে মুখোমুখি হবে কাতারের এডুকেশন স্টেডিয়ামে, বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায়।
ম্যাচ কোয়ার্টার ফাইনাল হলেও ক্রোয়েশিয়ার কাছে এটি ফাইনালের মতোই মনে হচ্ছে। তারপরও চাপ উতরে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে জয় পেতে উন্মুখ লুকা মডরিচ শিবির।
চার বছর আগে রাশিয়া আসরে ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে ৪-২ গোলে হেরেছিল ক্রোয়েশিয়া। এবার ব্রাজিল ম্যাচটা টুর্নামেন্টের শেষ দিকে হলে আরও ভালো হতো বলে মনে করেন ক্রোয়েশিার কোচ জ্লাতকো দালিচ।
তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় এই ম্যাচটি সবার আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকবে সবচেয়ে বেশি। এটিকে গত বিশ্বকাপে ফ্রান্সের বিপক্ষে ফাইনালের সঙ্গে তুলনা করতে পারি। ব্রাজিল দুর্দান্ত প্রতিপক্ষ এবং আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এই দুই বিশ্বকাপে আমাদের ১১ ম্যাচের মধ্যে আমরা কেবল একটিতে হেরেছি। এই ম্যাচটি আরেকটু পরে আসলে ভালো হতো।’
তিনি আরও বলেন, ‘ক্রোয়েশিয়া ছোট দেশ। দুই বিশ্বকাপের সাফল্য দেশের মানুষ উপভোগ করছে। আমরা এই পর্যায়ে পৌঁছতে পেরেছি, তবে আমাদের চাওয়া আরও বেশি, আমরা এখানে থামতে চাই না।’
কাতার আসরে ফেভারিটদের একটি ব্রাজিল। ক্রোয়েশিয়া দলে ১৮ জন নতুন খেলোয়াড় আছেন, যারা গত আসরে ছিলেন না। অভিজ্ঞদের মধ্যে সবচেয়ে বড় নাম ৩৭ বছর বয়সী মডরিচ। ব্রাজিল ম্যাচকে তরুণ খেলোয়াড়দের নিজেদের প্রমাণ করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখছেন দালিচ। তার মতে, ‘এই দলে ১৮ জন নতুন খেলোয়াড় আছে, যারা ২০১৮ বিশ্বকাপে ছিল না। তাদের উন্নতি করার এবং আরও পরিণত হওয়ার জন্য সময় দরকার। সেরা আট দলের মধ্যে আমাদের থাকার সাফল্য অসাধারণ।’
ব্রাজিলের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত চার ম্যাচ খেলে তিনবারই হেরেছে ক্রোয়েশিয়া, ড্র হয়েছে অন্যটি। এবার ইতিহাস বদলে দেওয়ার প্রত্যয় ক্রোয়াট অধিনায়ক মডরিচের কণ্ঠে, ‘আমরা বেশ কয়েকবার ব্রাজিলের মুখোমুখি হয়েছি এবং কখনোই তাদের বিপক্ষে জিততে পারিনি। আশা করি, এবার আমরা ইতিহাস বদলে দিতে পারব।’
ব্রাজিল এবার বেশ ছন্দেই আছে। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ক্যামেরুনের কাছে হারলেও গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই শেষ ষোলোতে এসেছিল দলটি। যেখানে দক্ষিণ কোরিয়াকে স্রেফ উড়িয়ে কোয়ার্টারে চলে আসে সেলেসাওরা। দলটির বড় খবর ইনজুরি থেকে ফিরেছেন নেইমার। শেষ ম্যাচে করেছেন পেনাল্টি থেকে একটি গোলও। এ ছাড়া ভিনিসিউস, রিচার্লিসন, রাফিনহারাও আছেন ফর্মে। ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে জয় ছাড়া তাই ভাবছে না কিছু তিতে শিবির।
কোয়ার্টার ফাইনালে নামার আগে অনুশীলনে ব্রাজিল দলকে খুবই চনমনে দেখিয়ছে। চোট সারিয়ে রক্ষণে দানিলো ও অ্যাটাকে নেইমারের ফেরা আত্মবিশ্বাসী আকাশ সমান করে দিয়েছে সাম্বা ব্রিগেডের। দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে যে অ্যাটাকিং ফুটবলটা খেলেছে ব্রাজিল তা ধরে রাখতে পারলে যে জয় পেতে খুব একটা অসুবিধা হবে না বলেই জানিয়েছেন ব্রাজিল কোচ তিতে।
তবে ক্রোয়াটদের রক্ষণাত্মক ফুটবল ও ম্যাচ টাইব্রেকার পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়ার কৌশল নিয়ে একটু চিন্তায় রয়েছে নেইমারদের কোচ। ম্যাচের আগে প্রতিপক্ষকে যথেষ্ট সমীহ করছেন ব্রাজিল কোচ। তিনি জানিয়েছেন, 'ওদের টেকনিক্যাল জ্ঞান অনেক ভালো। ব্যক্তিগত নৈপুণ্য রয়েছে। ধৈর্য রাখতে পারেন এবং উচ্চ পর্যায়ে খেলার জন্য যেটা দরকার সেটা রয়েছে। তবে আমরা আগের ম্যাচে যে ভাবে খেলেছি, সেটাই বজায় রাখতে চাই। যারা ভালো খেলবে তারাই জিতবে।'
অপরদিকে, জাপানের বিরুদ্ধে টাইব্রেকারে জিতে শেষ আটে পৌঁছালেও ব্রাজিলের বিরুদ্ধে যে লুকা মডরিচ, ব্রোজোভিচদের কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে চলেছে তা মানছেন ক্রোয়েশিয়ার কোচ দালিচ। অনুশীলনে ব্রাজিলের শক্তিশালী অ্যাটাকি লাইনকে রুখতে আলাদা পরিকল্পনাও তৈরি করেছেন তিনি। ক্লোজ ডোর অনুশীলন করিয়েছেন দলকে।
ম্যাচের আগে জ্লাতকো দালিচ বলেছেন, 'টুর্নামেন্টের সবচেয়ে শক্তিশালী দল ব্রাজিল। কারণ ব্রাজিল ফুটবল খেলতে ভালোবাসে। আমরা যদি বাস্তবতার কথা চিন্তা করি, তা হলে ব্রাজিল এ টুর্নামেন্টের সবচেয়ে শক্তিশালী দল। তাদের হাতে দারুণ সব অপশন রয়েছে। দুর্দান্ত একটা স্কোয়াড আছে ওদের, যা ভীতিকর। ফলে আমাদের জন্য এটি কঠিন পরীক্ষা হতে যাচ্ছে।'
এসএন