কাতার বিশ্বকাপ থেকে এশিয়ার বিদায়
বিশ্বকাপের ২২তম আসর বসেছে মরুর বুক কাতারে। মরুর বুকে প্রথম হলেও এশিয়াতে প্রথম নয়। ২০০২ সালে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান যৌথভাবে প্রথম আয়োজন করেছিল এই আসর। সে বারই এশিয়ার প্রথম দল হিসেবে কোরিয়া সেমিফাইনাল পর্যন্ত গিয়েছিল। ল্যাটিন আমেরিকা ও ইউরোপের বাইরে ১৯৩০ সালে প্রথম আসরে যুক্তরাষ্ট্র সেমিফাইনালে খেলার পর দক্ষিণ কোরিয়া ছিল দ্বিতীয় দল। কিন্তু এবার এশিয়াতে আসর বসলেও শেষ ষোলো থেকেই একে একে বিদায় নিয়েছে এশিয়ার সব দেশ। সর্বশেষ দেশ হিসেবে বিদায় নিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া ব্রাজিলের কাছে ৪-১ গোলে হেরে।
কাতার বিশ্বকাপে এশিয়ার প্রতিনিধি ছিল ৫টি দেশ। স্বাগতিক হিসেবে কাতার ছাড়া বাকি ৪ দেশ ছিল- ইরান, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও সৌদি আরব। কাতার, সৌদি আরব ও ইরান গ্রুপপর্বেই বিদায় নিয়েছিল। জাপান ‘এ’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে ও দক্ষিণ কোরিয়া ‘এইচ’ গ্রুপের রানার্সআপ হয়ে শেষ ষোলোতে জায়গা করে নিয়েছিল।
স্বাগতিক হিসেবে কাতার সবার আগে মাঠে নেমে সবার আগে আসর থেকে বিদায় নেয়। ‘এ’ গ্রুপে পয়েন্ট টেবিলে তাদের অবস্থান হয় সবার নিচে। তিনটি ম্যাচেই তারা একে একে হার মেনেছিল। প্রথম ম্যাচে ইকুয়েডরের কাছে ২-০ গোলে হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচে সেনেগালের কাছে ৩-১ গোলে ও শেষ ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের কাছে ২-০ গোলে হেরেছিল।
মধ্যপ্রাচ্যের দল ইরান ছিল ‘বি’ গ্রুপে। গ্রুপে তাদের সঙ্গী ছিল ইংল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েলস। শেষ ষোলোতে যাওয়ার লড়াইয়ে ইরান শেষ পর্যন্ত ছিল। প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে ৬-২ গোলে বিধ্বস্ত হওয়ার পর দ্বিতীয় ম্যাচে ইনজুরি সময়ের ঝলকে ২ গোল দিয়ে ওয়েলসকে হারিয়ে শেষ ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে শেষ ষোলোতে যাওয়ার লড়াইয়ে মুখোমুখি হয়। শেষ ষোলোতে যাওয়ার জন্য ইরানের প্রয়োজন ছিল জয়। কিন্তু তারা ১-০ গোলে হেরে বিদায় নেয়।
কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে ২-১ গোলে হারিয়ে প্রথম অঘটনের জন্ম দেওয়া সৌদি আরবকে নিয়ে অনেকেই আশাবাদী হয়ে উঠেছিলেন। আর্জেন্টিনার কাছে প্রথমে গোল হজম করেও দ্বিতীয়ার্ধে ৬ মিনিটের চমকে ২ গোল দিয়ে ম্যাচ জিতে মরুর দেশ। কিন্তু তাদের নিয়ে যে আশার আলো জ্বলেছিল, সেখানে পানি ঢেলে দেয় প্রথমে পোল্যান্ড ও পরে মেক্সিকো। পোল্যান্ড ২-০ গোলে ও মেক্সিকো ২-১ গোলে জয়ী হয়েছিল।
সৌদি আরব যে চমক দেখিয়েছিল, সেখানে জাপান দেখায় আরও বড় চমক। প্রথমে চারবারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে ২-১ গোলে হারানোর পর শেষ ম্যাচে স্পেনকেও হার মানায় একই ব্যবধানে। দুটি ম্যাচেই জাপান প্রথমে গোল হজম করেছিল। দ্বিতীয় ম্যাচে জাপান হেরে গিয়েছিল কোস্টারিকার কাছে ১-০ গোলে। জাপান হয় ‘ই’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। স্পেন হয় রানার্সআপ। বাদ পড়ে জার্মানি।
দক্ষিণ কোরিয়া ছিল ‘এইচ’ গ্রুপে। উরুগুয়ে-ঘানার মতো দলকে পেছনে ফেলে তারা গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে পৌঁছে যায় শেষ ষোলোতে। প্রথম ম্যাচে কোরিয়া উরুগুয়ের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে। দ্বিতীয় ম্যাচে তারা ঘানার কাছে ৩-২ গোলে হেরে শেষ ষোলোতে যাওয়াটাকে কঠিন করে তুলে। সেই কঠিনকেই তারা জয় করে পর্তুগালের বিপক্ষে। শেষ ষোলোতে যেতে হলে পর্তুগালের বিপক্ষে জিততেই হবে। কিন্তু রোনালদোর পর্তুগাল যে রকম দুর্দান্ত খেলছে তাতে করে কোরিয়ার জয় আশাই করা যায় না। সেখানে আবার তারা খেলার শুরুতেই ৫ মিনিটে গোল হজম করে বসে। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে কোরিয়া দুই গোল দিয়ে ম্যাচ জিতে শেষ ষোলোর ভিসা পেয়ে যায়।
শেষ ষোলোতে এশিয়ার দুই প্রতিনিধি জাপান ও কোরিয়ার খেলা ছিল একই দিনে। জাপানের প্রতিপক্ষ ছিল বর্তমান রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়া, কোরিয়ার প্রতিপক্ষ পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। দুই দল নিজ নিজ ম্যাচে জয়ী হলে কোয়ার্টার ফাইনালে তারা পরস্পরের বিপক্ষে খেলত। কিন্তু জাপান লড়াই করতে পারলেও কোরিয়া লড়াই-ই করতে পারেনি।
জাপান প্রথমে গোল দিয়ে এগিয়ে গেলেও পরে ক্রোয়েশিয়া গোল পরিশোধ করে। নির্ধারিত সময় খেলা সমতা থাকার পর অতিরিক্ত সময়েও খেলা নিষ্পত্তি হয়নি। পরে টাইব্রেকারে জাপানের পক্ষে ভাগ্য হাসেনি। তাদের দুর্বল শট ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক লিভাকোভিচ খুব সহজেই আটকে দেন। প্রথম দুটি ঠেকানোর পর চতুর্থ শটও তিনি রুখে দেন। হারের পর কান্নায় ভেঙে পড়েন জাপানি ফুটবলার ও দর্শকরা।
ব্রাজিলের বিপক্ষে কোরিয়া কিছু বুঝে উঠার আগেই দুই গোল হজম করে বসে। ১১ মিনিটের মাঝে দুই গোল হজম করার পর প্রথমার্ধেই তারা ৪ গোলে পিছিয়ে পড়ে। ব্রাজিল যে রকম ছন্দময় খেলা উপহার দিচ্ছিল, তাতে করে দ্বিতীয়ার্ধে আরও গোল দেখার অপেক্ষায় ছিলেন সাম্বা নৃত্যকারীরা। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে কোরিয়া দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায়। আর কোনো গোল হজম করেনি। পরিশোধ করে একটি গোল। ব্রাজিলের গোলরক্ষক অ্যালিসন প্রতিরোধের দেয়াল হয়ে না উঠলে কোরিয়া আরও গোল পেতে পারত।
এমপি/এসজি