বিশ্বকাপের পর ভেঙে ফেলা হবে ‘৯৭৪’ স্টেডিয়াম
বিশ্বকাপের জন্য কাতারের তৈরি করা ৭টি স্টেডিয়ামের মধ্যে একটি টুর্নামেন্টের পর আর ব্যবহার করা হবে না। এই স্টেডিয়ামের নাম ‘৯৭৪’। রাজধানী দোহায় বন্দরের পাশেই অবস্থিত এই স্টেডিয়াম। যেখানে সিট আছে ৪০ হাজার। বাতিল শিপিং কনটেইনার এবং স্টিল দিয়ে তৈরি হয়েছে এই স্টেডিয়াম।
কাতার জানিয়েছে, এই স্টেডিয়ামটি বিশ্বকাপের পর পুরোপুরিভাবে ভেঙে ফেলা হবে। যে দেশগুলো স্টেডিয়ামের বিভিন্ন অংশ প্রয়োজন মনে করবে তাদের কাছে তা বিক্রি করা হবে। তবে বিশেষজ্ঞরা স্টেডিয়ামের নকশার প্রশংসা করেছেন।
বিশ্বকাপের জন্য পরিবেশ পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন লন্ডনভিত্তিক চ্যাটাম হাউজ থিংক ট্যাংকের সহযোগী ফেলো করিম এলগেনদি। তিনি বলেন, ‘টেকসই নির্মাণের অন্যতম মৌলিক নিয়ম হলো বিচ্ছিন্ন করার জন্য ডিজাইন করা। যেকোনো ভবন তার স্বাভাবিক প্রয়োজনে বা অন্য কোনো কারণে আবার নির্মাণ বা ভাঙা নিয়মের মধ্যে আছে। আমরা যেকোনো ভবন টেকসই বলার আগে কয়েকটি বিষয়কে বিবেচনা করে থাকি। সেগুলোর মধ্যে একটি হলো- বিশ্বের মোট কার্বন নিঃসরণের প্রায় ৪০ ভাগ শক্তি সম্পর্কিত কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী ভবনগুলো। এসব ভবন থেকে প্রায় ১০ ভাগ অথবা এই পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ ঘটে গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণের মাধ্যমে, যেটি সম্পর্কিত নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও ধ্বংসের সঙ্গে।’
কাতার মূলত তাদের আন্তর্জাতিক ডায়ালিং কোড এবং যে পরিমাণ কনটেইনার ব্যবহার স্টেডিয়াম তৈরি করেছে সে অনুযায়ী নাম রাখা হয়েছে ৯৭৪। এবারের বিশ্বকাপে এই স্টেডিয়ামটিই একমাত্র স্টেডিয়াম যেখানে এয়ার কন্ডিশনের ব্যবস্থা নেয়। এ ছাড়া স্টেডিয়ামটি অনেক বেশি স্যাঁতস্যাঁতে এবং অন্য স্টেডিয়ামগুলোর চেয়ে অনেক বেশি গরম এখানে। ফলে স্টেডিয়ামটিতে কেবল সেই খেলাগুলো করা সম্ভব, যখন আবহাওয়া খুব ঠান্ডা থাকে।
এই স্টেডিয়ামটির ডিজাইন করেছে ফেনিক ইরেরারেন আর্কিটেকস। তারা আরও দুটি স্টেডিয়াম তৈরি করেছেন।
কাতার জানিয়েছে, তারা বিশ্বকাপের পর বাকি ৬টি স্টেডিয়ামের বিষয়ে পরিকল্পনাগুলো তৈরি করেছে। সেগুলোর অনেক সিট চিরকালের জন্য সরিয়ে ফেলা হবে।
স্টেডিয়াম ৯৭৪ তৈরির সময় ভবনগুলোর ব্লক তৈরিতে নানা রঙের শিপিং কনটেইনার ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া ঘরগুলো বিশ্রামাগারের ভেতরের সুবিধাগুলোর জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। বিরাট লোগো ব্লক, উজ্জ্বল লাল ব্লক, হলুদ এবং নীল স্টিলের বাক্সগুলো স্টিলগুলোর নিচের দিকে স্থাপন করা হয়েছে। এই নকশা স্টেডিয়ামটিকে একটি কারখানার আদল দিয়েছে।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, পরে এই স্টেডিয়ামটিকে আবার একই আকারের একটি স্টেডিয়াম হিসেবে তৈরি করা হতে পারে বা এমন ধরনের আরও কয়েকটি স্টেডিয়াম বানানো হতে পারে।
এ ছাড়া এই স্টেডিয়ামের উপাদানগুলো কীভাবে কোথায় যাবে সেটিও চিন্তার বিষয়। তবে আয়োজকরা বলেছেন, এগুলো হাজার কিলোমিটার দূরে নিয়ে যাওয়া হবে।
বিশ্বকাপের আয়োজক কাতারের সুপ্রিম কমিটি ফর ডাইভারসিটি অ্যান্ড লিগাসি স্টেডিয়ামটির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
স্টেডিয়ামের সামনের শিল্পকাঠামো এবং আধুনিকতায় খুব খুশি ফুটবল ভক্তরা। তারা স্টেডিয়ামের আশপাশ ও ভেতরে সেলফি তুলেন। বিশ্বকাপে স্টেডিয়ামটিতে ৭টি ম্যাচ আয়োজিত হয়। সর্বশেষ ম্যাচে সোমবার (৫ ডিসেম্বর) রাতে মুখোমুখি হয় ব্রাজিল ও দক্ষিণ কোরিয়া।
ওএফএস/এসজি