ছাদখোলা বাস প্রস্তুত হচ্ছে সাবিনাদের জন্য
১৯৫৩ সালের ২৯ মে প্রথম এভারেস্টের চুড়ায় উঠেছিলেন এডমুন্ড হিলারি ও শেরপা তেনজিং। তারপর থেকে অনেকেই এই চুড়ায় উঠেছেন। সেই তালিকায় আছে বাংলাদেশে মুসা ইব্রাহিম, এম এ মুহিতের পাশাপাশি নিশাত মুজদারের নামও।
এবার সেই হিমালয়ের দেশ জয় করেছেন বাংলাদেশের সূর্যকন্যারা। সাবিনা-মারিয়া-কৃষ্ণা-সানজিদারা উঠেছেন অন্যরকম চুড়ায় । এভারেস্ট জয় না করেও তারা বিজয়ী। সাফের নতুন রানি। ভারতের আধিপত্য খর্ব করে বাংলাদেশ বসেছে মসনদে। ১৯ সেপ্টেম্বর সোমবার রাতে তারা হিমালয় কন্যাকে হারিয়েছে ৩-১ গোলে। তারপর থেকেই চলছে উৎসব, আনন্দ আর বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। এখন দেশ ফিরে আসার পালা । আজ কাঠমান্ডু থেকে বিমানের কোনো ফ্লাইট না থাকাতে তারা আগামীকাল বুধবার দুপুর ১টার দিকে দেশে ফিরবেন।
এ্ই বিমানের ফ্লাইট না থাকাটাও আরেক অর্থে সাবিনাদের জন্য ভালো হয়েছে। ছাদখোলা বাসে তাদের বরণ করে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে এবং সেটি সম্ভব হয়েছে হাতে পুরো একটি দিন পাওয়াতে।
বিআরটিসির একটি দ্বিতল বাসের ছাদ কেটে ফেলা হয়েছে সাবিনাদের জন্য। বিআরটিসির চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের নারী ফুটবল দলকে সংবর্ধনা দিতে বিআরটিসির একটি ডাবল-ডেকার বাসের ছাদ খুলে ফেলা হয়েছে। আসনগুলোও সরিয়ে ফেলার কাজ চলছে।’
তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের চ্যাম্পিয়নশিপ উপহার দিয়েছে। আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। সরকারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত আসার পরই আমরা মতিঝিল ডিপোতে কাজ শুরু করি। আজ রাতের মধ্যেই বাসটি প্রস্তুত হয়ে যাবে।’
এই ছাদ খোলা বাসে চড়ে উৎসবে রাঙাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাইনাল খেলার আগে-হৃদয় ছোঁয়া লেখা পোস্ট করেছিলেন খেলোয়াড়রা। সানজিদা ফাইনালের আগে লিখেছিলেন, ‘ছাদখোলা চ্যাম্পিয়ন বাসে ট্রফি নিয়ে না দাঁড়ালেও চলবে, সমাজের টিপ্পনীকে এক পাশে রেখে যে মানুষগুলো আমাদের সবুজ ঘাস ছোঁয়াতে সাহায্য করেছে, তাদের জন্য এটি জিততে চাই।’
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে ফাইনালে ২ গোল করে মুখ্য ভুমিকা পালন করা কৃষ্ণা রানী সরকার ছাদ খোলা বাসের একটি ছবি দিয়ে ফাইনালের আগে লিখেছিলেন ‘এমন মুহূর্তের অপেক্ষায়।’
এদিকে সোমবার ফাইনাল খেলা শেষ হওয়ার পর যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘সাবিনাদের আক্ষেপ দেখে আমাদের অন্তরে ব্যথা লেগেছে। আমাদের দেশে যদিও ছাদখোলা কোনো বাস নেই, তারপরও তাদের জন্য আমরা একটা ব্যবস্থা করেছি। তাদের ছাদখোলা বাসে বিমানবন্দর থেকেই আমরা সংবর্ধনা আমরা দেব। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাফুফে ভবন পর্যন্ত তাদের আমরা নিয়ে যাব। তাদের মনের আশা পূরণ করব।’
মেয়েরা দেশবাসীকে শিরোপা উপহার দিয়েছে। সবাইকে আনন্দে ভাসিয়েছে। এবার তাদের প্রতিদান দেওয়ার পালা। সোমবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরওই ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে বিআরটিসির সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি জানানো হয়। বিআরটিসি এমন প্রস্তাব পাওয়ার পর মুহূর্তেই তারা বাস্তবায়নে নেমে পড়ে। সকাল থেকেই মতিঝিলের ডিপোতে শুরু হয় ছাদ কাটার কাজ। চেয়ার সরানোর কাজ। বাসের গায়ে সাফ জয়ী সূর্যকন্যাদের ছবি দিয়েও সাজানো হবে বলে জানা গেছে।
এমপি/এমএমএ/