সাজিদ বিষে নীল বাংলাদেশ
ব্যাটিং বিপর্যয়ের ভয়াবহতা থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম টেস্টে কিছুটা প্রতিরোধ গড়তে পারলেও ঢাকা টেস্টে বালির বাঁধের মতো ভেঙে পড়েছে। পাকিস্তানের ৪ উইকেটে পাক্কা ৩০০ রানে ইনিংস ঘোষণার পর মাত্র ২৬ ওভার ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়ে প্রচণ্ড ধুঁকছে বাংলাদেশ।
খেলা হওয়ার কথা ছিল ৫০ ওভার। কিন্তু আলো স্বল্পতার কারণে তা আর সম্ভব হয়নি। তা না হলে যেভাবে ধুঁকছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা, তাতে অলআউট হওয়া ছিল সময়ের ব্যাপার!আলোর স্বল্পতার কারণে চতুর্থ দিনের খেলা শেষ হওয়ার আগে ৭ উইকেট হারিয়ে রান করেছে মাত্র ৭৬। স্পিনার সাজিদ খান একাই তুলে নেন ৬ উইকেট। এটি তার ক্যরিয়ারে প্রথমবারের মতো ইনিংসে ৫ বা ততোাধিক উইকেট সংগ্রহ। অপর উইকেটটি ছিল রান আউট।
বুধবার (৮ ডিসেম্বর) খেলার শেষ দিন। যেভাবে স্পিনাররা সুবিধা পাচ্ছেন,সেখানে আবার কাল সকালে যোগ হবে পেসারদের গতি। এ দুই মিলে বাংলাদেশের জন্য এখন টেস্ট বাঁচানোই সত্যিকার অর্থে কঠিন হয়ে পড়েছে? আগামীকাল খেলা শুরু হবে সকাল সাড়ে ৯টায়। খেলা হবে ৯৮ ওভার।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ঢাকা টেস্টের প্রথম তিন দিনের দুই দিনেরও বেশি সময় খেলাই হয়নি বৃষ্টি ও আলোর স্বল্পতার কারণে। চতুর্থ দিনও এক ঘণ্টা ২০ মিনিট নষ্ট হয়েছে ভেজা আউট ফিল্ডের কারণে। এ রকম অবস্থায় টেস্টের কোনো প্রাণই থাকে না। গতিপথ ড্র-ই লেখা হয়ে যায়। কিন্তু বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচ হওয়াতে পাকিস্তান ফলাফলের দিকে নজর দিয়েছে। যে কারণে মঙ্গলবার পাকিস্তান খুব বেশি সময় ব্যাট করেনি। চা বিরতির আগেই ৪ উইকেটে ৩০০ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশকে ব্যাট করার আমন্ত্রণ জানায়। যার পুরো ফায়দাই তারা তুলে নিয়েছে। ম্যাচ এখন পুরোটাই তাদের নিয়ন্ত্রণে।
কন্ডিশনের কথা বিবেচনা করলে পেসারদের ফায়দা পওয়ার কথা। কিন্তু সেখানে পাকিস্তানের স্পিনাররা রাজত্ব করেছেন একাই। আলোর স্বল্পতার কারণে ফ্লাড লাইট জ্বালানো হয়। কিন্তু তাতেও পেস বোলারদের বল খেলা সম্ভব নয়। পাক দলপতি বাবর আজম শুধু স্পিনার দিয়ে বোলিং শুরু করেন। আর এর ফায়দা তুলে নেন পুরোটাই। যে ২৬ ওভার খেলা হয়েছে, সেখানে শুধু শাহীন শাহ আফ্রিদী প্রথম ওভার করেছিলেন। এরপর সাদিজ খান ও নোমান আলী মিলে করেন ১২ ওভার করে। সাজিদ খান ৩৫ রানে ৬ উইকেট নেন। নোমন আলী ৩৩ রান দিয়ে কোনো উইকেট না পেলেও বেশ ভুগিয়েছেন। উইকেট স্পিন ধরছে দেখে বাবর আজম ৩৬ টেস্টের ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো বল হাতে তুলে নেন দিনের শেষ ওভারে। ওই এক ওভারেই তিনি ব্যাটসম্যানদের বেশ ভুগিয়েছেন।
সাজিদ খান উইকেট পেয়ে কী আসলেই খুব বেশি ভীতি ছড়িয়েছেন? তার বিষেই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানেরা নীল হয়েছেন? আসলে কিন্তু তা নয়। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সবচেয়ে বড় যে সমস্যা ‘ধৈয্যের অভাব, তা আরো প্রকটভাবে উঠেছে এ ইনিংসে। যেন সবার ভীষণ তাড়া ছিল। উইকেটে এসেই অবস্থা বিবেচনা না করেই সবাই মেরে খেলার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হন! একমাত্র অভিষিক্ত মাহমুদুল হাসান জয় ছাড়া সবাই উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসার প্রতিযোগিতায় নামেন।
সাজিদের প্রথম শিকার হয়ে অভিষেকেই শূন্য রানে ফিরে যান এ তরুণ। সাদমান ইসলাম (৩) অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে হাসান আলীর হাতে ক্যাচ। মুশফিকুর রহিমের (৫) মতো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানও পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা করেননি। সাজিদের আগের বলে কাট করে চার মারার পরের বল সুইপ করতে গিয়ে শর্ট মিড উইকেটে ফাওয়াদ আলমের হাতে বন্দি।
চট্টগ্রাম টেস্টের দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরি হাঁকানো লিটন দাস (৬) এসেও ছটফট করতে থাকেন। যার মাশুলও দেন। উইকেট ছেড়ে বের হয়ে খেলতে এসে সাজিদের বলে তার হাতেই ধরা পড়েন। এক প্রান্ত আগলে রাখা নাজমুল হোসেন শান্ত ৩০ রানে আউট হওয়ার আগে বেশ কয়েকবার রক্ষা পেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হয়নি। সাজিদের টার্ন করা বলে শান্ত পরাস্ত হলে এলবিডব্লিউয়ের শিকার হন।
মিরাজ অহেতুক স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন। বাকি থাকলেন দলপতি মুমিনুল। তিনি রান আউটের শিকার হন অহেতুক ঝুঁকিপূর্ণ রান নিতে গিয়ে। এ রান তিনি নাও নিতে পারতেন। ২৩ রানে অপরাজিত থাকা সাকিব যে এখনও উইকেটে আছেন এটিই রাজ্যের বিস্ময়। কারণ তিনি প্রচণ্ড ছটফট করছেন। বেশ কয়েকবার উইকেট ছেড়ে বের হয়ে এসে শট খেলেছেন। একবার রান আউটের হাত থেকে বেঁচে গেছেন। তার সঙ্গে কোনো রান না করে অপরাজিত আছেন তাইজুল।
দিনের শেষ বেলা ম্যাচের যে চিত্র,তা কিন্তু দিনের শুরুতে মোটেই আন্দাজ করা যায়নি। কারণ চতুর্থ দিন বৃষ্টি না হলেও ভেজা আউট ফিল্ডের কারণে ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট দেরি। পাকিস্তান ইনিংস ঘোষণা করেছে ৩০০ রানের পাশাপাশি ফাওয়াদ আলমের ফিফটির সঙ্গে সঙ্গে। খালেদের করা ইনিংসের ৯৮ ওভার ৩ বলের সময় ফাওয়াদ ১ রান নিয়ে নিজের হাফ সেঞ্চুরি করেন। একই সঙ্গে পাকিস্তানের ৪ উইকেটে ৩০০ রানও পূর্ণ হয়। এরপরই পাক দলপতি বাবর আজম ইনিংস ঘোষণা করেন।
এ দিন পাকিস্তান ৩৫ ওভার ১ বল খেলে রান যোগ করে ১২২। ফাওয়াদ আলম ৫০ ও মোহাম্মদ রিজওয়ান ৫৩ রানে অপরাজিত থাকেন। চর্তুথ দিন এবাদত ও খালেদ একটি করে উইকেট নেন। প্রথম দিন দুইটি উইকেট পেয়েছিলেন স্পিনার তাইজুল।
চতুর্থ দিন পাকিস্তানের ব্যাটিং ছিল অনেকটা প্রথম দিনের কার্বন কপি। প্রথম দিন টস জিতে ব্যাট করতে নামার পর প্রথম সেশনেই ২ উইকেট তুলে নিয়ে পাকিস্তানকে চাপে রেখেছিল বাংলাদেশ। পরে দলপতি বাবার আজম ও আজহার আলী হাল ধরে আর কোনো উইকেটের পতন হতে দেননি প্রথম সেশনে।
এ জুটি দ্বিতীয় সেশনেও কোনো উইকেট পড়তে দেয়নি। আজ চতুর্থ দিনও পাকিস্তান প্রথম সেশনেই হারায় আগের দিনের অপরাজিত ২ ব্যাটসম্যানকে। বাবার আজম ৭৬ ও আজহার আলী ৫২ রানে ফিরে যান। এরপর ফাওয়াদ আলম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান জুটি বেঁধে প্রথম সেশনে কোনো উইকেট পড়তে দেননি। এমনকি ইনিংস ঘোষণার আগ পর্যন্তও তারা ছিলেন অবিচ্ছিন্ন।
এমপি/এসএন