ফিফার বিরুদ্ধে ফুটবলারদের ধর্মঘটের হুমকি, কারণ কি?
ছবি: সংগৃহীত
ক্লাব ফুটবলের ব্যস্ত সূচি থাকে পুরো বছরেই। বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল খেলতে খেলোয়াড়দের ভ্রমণ করতে হয় বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। এমন ঠাসা সূচিতে খেলাধুলার পাশাপাশি ভ্রমণেও ফুটবলারদের চলে যায় অনেকটা সময়। খেলোয়াড়েরা যখন ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত, তখন তাঁদের সিদ্ধান্ত বিশ্ব ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা ফিফার বিরুদ্ধে ধর্মঘটে যাওয়ার।
সম্প্রতি ফিফা ৩২ দলের নতুন ক্লাব বিশ্বকাপের আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই নতুন ফরম্যাটের ক্লাব বিশ্বকাপ পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে। পেশাদার ফুটবলারদের অ্যাসোসিয়েশনের (পিএফএ) প্রধান নির্বাহী মাহেতা মোলাঙ্গো এবং বিশ্ব ফুটবলারদের ইউনিয়ন ফিফপ্রো মৌসুম শেষে পর্যালোচনার পর খেলোয়াড়দের হতাশার কথা প্রকাশ করেন।
মোলাঙ্গো সম্প্রতি একটি ক্লাবের ড্রেসিং রুম সফরের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন যেখানে খেলোয়াড়রা তাদের সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা তাকে জানিয়েছেন। তিনি তার ওই অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলেন ‘তাদের মধ্যে কয়েকজন বলাবলি করছিল ‘ আমি আর পারছি না, আমাদের ধর্মঘট ভিন্ন অন্য কোন উপায় নেই। কয়েকজন তো এও বলেছিল ‘কী লাভ? হ্যাঁ, আমি একজন কোটিপতি, কিন্তু আমার এই টাকা খরচ করার সময নেই।’
শুধু ফুটবলাররা না লিভারপুলের বিদায়ী ম্যানেজার ইয়র্গেন ক্লপ এবং ম্যানচেস্টার সিটির বস পেপ গার্দিওলাও এই উদ্বেগ জানিয়েছেন। তারা খেলোয়াড়দের কল্যাণের জন্য এই কঠিন অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য পিএফএ, ফিফপ্রো এবং বিশ্ব লিগ অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিউএলএ) মে মাসে ফিফাকে একটি চিঠি পাঠিয়েছিল যেখানে তারা ফিফা যদি সম্প্রসারিত ক্লাব বিশ্বকাপের পরিকল্পনা থেকে সরে না আসে তবে আইনি পদক্ষেপের হুমকি দিয়েছে।
ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো এবং সাধারণ সম্পাদক ম্যাটিয়াস গ্রাফস্ট্রমকে উদ্দেশ্য করে চিঠিতে জাতীয় লিগ এবং খেলোয়াড়দের উপর আরোপিত এই পরিবর্তনগুলোকে অমানবিক বলে সমালোচনা করা হয়েছে। ‘ফুটবল লিগ এবং খেলোয়াড়দের উপর ম্যাচের পর ম্যাচের বোঝা চাপানো ক্ষমতার অপব্যবহারমূলক।’ চিঠিতে উল্লেখ করা হয় এছাড়াও এত বেশি ম্যাচ লিগ এবং খেলোয়াড়দের সুস্থতা বিপন্ন করছে বলেও তারা জানান।
অবশ্য খেলোয়াড়দের কল্যাণ বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে বলে ফিফা আশ্বাস দিলেও পিএফএ এতে সন্তুষ্ট নয়।
মোলাঙ্গো উল্লেখ করেন যে ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ফুটবল ক্যালেন্ডারে পরিবর্তনগুলো ফিফা এবং উয়েফার সময়সূচির সিদ্ধান্ত দ্বারা নিতে বাধ্য হয়েছে।
"আমরা সবসময় কূটনৈতিক উপায়ে সমাধান খোঁজার চেষ্টা করি" মোলাঙ্গো বলেছেন, তবে সেই সময় সম্ভবত ফুরিয়ে আসছে। এখন তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার প্রয়োজন হতে পারে।
সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় তরুণ খেলোয়াড়দের উপর অত্যধিক চাপের কথা তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে দেখা গেছে রিয়াল মাদ্রিদ এবং ইংল্যান্ডের তারকা ফুটবলার জুড বেলিংহ্যাম ২১ বছর হওয়ার আগে ১৮,৪৮৬ মিনিট ফুটবল খেলেছেন, যেখানে একই বয়সে ডেভিড বেকহ্যাম ৩,৯২৯ মিনিট এবং ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড ৬,৯৮৭ মিনিট খেলেছেন।
ফিফপ্রোর ইউরোপের সভাপতি ডেভিড টেরিয়ার খেলোয়াড়দের শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তির কথা উল্লেখ করে সতর্ক করেছেন, যেখানে একটি জরিপে দেখা গেছে ৫০% এরও বেশি খেলোয়াড় আহত অবস্থায় খেলেছেন। ‘এটি একটি জরুরি অবস্থা - আমরা বিপদে আছি’ টেরিয়ার জোর দিয়ে বলেন।