অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট
ব্যাটিং ব্যর্থতায় বাংলাদেশের বিদায়
থেমে গেল যুবাদের চালিকা শক্তি। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশকে এবার সেমিফাইনালেই উঠতে দেয়নি ভারতের যুবারা। শেষ কোয়র্টার ফাইনালে বাংলাদেশ হেরেছে ৫ উইকেটে। গত আসরে এই ভারতকে ৩ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। এবার সেই ভারতই তাদের থামিয়ে দিল। যদিও এবারের আসরে বাংলাদেশের টার্গেট ছিল সেমিফাইনাল পর্যন্ত যাওয়া। সেই চাওয়া পূরণ হয়নি।
বাংলাদেশ হেরেছে ব্যাটিং ব্যর্থতার জালে আটকে পড়ে। আগে ব্যাট করে যদি ভাণ্ডারে ৩৭ ওভার ১ বলে মাত্র ১১১ রান যোগ করে, তাহলে সেই রান নিয়ে বোলার আর কতটুকু লড়াই করতে পারবেন? তারপরও তারা ছেড়ে কথা বলেননি। ভারতীয় যুবাদের সহজেই জিততে দেননি। ভারত ৩০ ওভার ৫ বল অবশিষ্ট রেখে জয় পেলেও বাংলাদেশ দল তাদের উইকেট তুলে নিয়েছে ৫টি। ভারত এখন আসরের দ্বিতীয় সেমিফাইনাল খেলবে ২ ফেব্রুয়ারি, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। এই দুই দলই আবার যুবাদের বিশ্বকাপের সবচেয়ে বেশি মুকুটধারী। ভারত চারবার, অস্ট্রেলিয়া তিনবার চ্যাম্পিয়ন।
বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ চলতি আসরে বড় দলগুলোর বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে ভালো করতে পারেনি। প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আগে ব্যাট করে মাত্র ৯৭ রানে অলআউট হয়েছিল। পরে বোলাররা এই স্বল্প পুঁজি নিয়েও ইংল্যান্ডের ৩ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন। এবারও স্বল্প পুঁজি নিয়ে তারা লড়াই করেছেন ভারতের বিপক্ষেও।
অ্যান্টিগায় টস হেরে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রিত হয়ে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা অকুল সাগরে হাবুডুবু খেতে থাকেন। টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা ছিলেন আসা-যাওয়ার মিছিলে। শুরুতেই দুই ওপেনার ইফতেখার (১) ও মফিজুলের (২) ব্যর্থতার সঙ্গে তাল মেলান ওয়ান ডাউনে নামা প্রান্তিক নওরোজ নাবিলও (৭)। তিনজনের তড়িৎ বিদায়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ১৪। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা ম্যাচেরই যেন পুনরাবৃত্তি এটি! আইচ মোল্লা হাল ধরলেও অপর প্রান্তে কিন্তু চলছিল সেই আসা-যাওয়ার মিছিল। আরিফুল (৯), মো. ফাহিম (০) ও দলপতি রকিবুল হাসান (৭) বিদায় নেন। তখন দলীয় রান ৬ উইকেটে ৫০। এর একটু পর আইচ মোল্লারও প্রতিরোধ ভেঙে যায় ব্যক্তিগত ১৭ ও দলীয় ৫৬ রানে। তার ইনিংসে ছিল ৪৮ বলের ব্যবহার। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫১ রানে ৯ উইকেট হারানোর পর শেষ উইকেট জুটিতে রিপন মন্ডল ও নাঈমুর রহমান ৪৬ রান যোগ করে দলের রানকে ৯৭ পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলেন। এবার দলকে শতরান পার করান মেহরব ও আশিকুর জামান। অষ্টম উইকেট জুটিতে তারা ৫০ রান যোগ করেন ১১ ওভার ৪ বলে। জুটি ভাঙে মেহরাব ৩০ রান করে আউট হলে। তার ৪৮ বলের ইনিংসে ছিল ৬টি চার। মেহরাব আউট হওয়ার পর আশিকুর জামানও আউট হয়ে যান ২ রান পর দলীয় ১০৮ রানে। তখন তার ব্যক্তিগত রান ছিল ১৬। এরপর দলীয় ১১১ রানে অলআউট হয় তারা। শেষ তিন উইকেট পড়ে মাত্র ৫ রানে। ভারতের হয়ে রবি কুমার ১৪ রানে নেন ৩ উইকেট। ২টি উইকেট নেন ভিকি।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫১ রানে ৯ উইকেট হারানোর পর ১১ নম্বরে নামা রিপন মন্ডল অপরাজিত ৩৩ রানের ইনিংস খেলে দলের সংগ্রহকে ৯৭ পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলেন। এবার সেই রিপন মন্ডলই ভারতের ইনিংসে ভীতি সঞ্চার করেন। শুরুতে তানজিম হাসান সাকিব ওপেনার হারনুর সিংকে কোনো রান না করতে দিয়েই সাজ ঘরের পথ দেখিয়ে দেন। তখন দলেরও রান ছিল শূন্য। শুরুর এই পতনে ভারতীয়রা সাবধানী হয়ে যায়। এগুতে থাকে ধীরে ধীরে। অংকুশ রাগুভানসাই ও শেখ রশিদ শক্ত হাতে হাল ধরে ১৮ ওভার ৩ বলে ৭০ রান যোগ করে দলের বড় জয়ের পথই তৈরি করে দিয়েছিলেন। কিন্তু এত বড় ব্যবধানে ভারতকে জয়ী হতে দিতে নারাজ ছিলেন রিপন মন্ডল। শুরু করেন আক্রমণ। তার গোলায় দিশেহারা হতে থাকেন বড় জয়ের পথে থাকা ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। পটাপটা তুলে নিতে থাকেন উইকেট। উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়া দুই ব্যাটসম্যান অংকুশ (৪৪) ও শেখ রশিদকে (২৬) ফিরিয়ে দেন ৫ রানের ব্যবধানে। এরপর তার শিকার হন সিদ্ধার্থ যাদব (৬) ও রাজ বাওয়া (০)। রিপনের এই আঘাতে ভারতীয় শিবিরে কাঁপন ধরালেও টার্গেট কম থাকায় তাদের সামনে আর বড় বিপদ আসেনি। দলপতি ইয়াশ ধুল (অপরাজিত ২০) ও কুশাল টামবে (অপরাজিত ১১) বাকি কাজ সারেন। জয়সূচক রান আসে রকিবুলের বলে কুশালের ব্যাট থেকে ছক্কায়।
বাংলাদেশ এখন স্থান নির্ধারণের জন্য সুপার লিগের প্লে অফ সেমিফাইনাল খেলবে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩০ জানুয়ারি।
এমপি/টিটি