কামিন্সের বোলিং তোপে সিরিজ জয় অস্ট্রেলিয়ার
ছবি: সংগৃহীত
যতবারই মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে পাকিস্তান, আশা জাগিয়ে তুলেছে জয়ের, বারবারই সেখানে আঘাত করেছেন প্যাট কামিন্স। প্রথম ইনিংসের ৫ উইকেটের সঙ্গে দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক যোগ করেছেন আরও ৫টি। মেলবোর্ন টেস্টের চতুর্থ দিনে শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) অস্ট্রেলিয়া জিতেছে ৭৯ রানে। টানা দুই জয়ে তারা নিশ্চিত করেছে সিরিজ জয়ও।
শেষ পর্যন্ত জয়ের ব্যবধান বড় হলেও একটা সময় লড়াই জমে উঠেছিল তুমুলভাবে। রিজওয়ান ও সালমান আঘার জুটির সময় তো পাকিস্তানকেই মনে হচ্ছিল কিছুটা ফেভারিট। এক পর্যায়ে ৫ উইকেট নিয়ে ৯৮ রান প্রয়োজন ছিল তাদের। এরপরই কামিন্সের বলে রিজওয়ানের সেই আলোচিত আউট এবং এরপর পাকিস্তানের হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়া। ১৮ রানের মধ্যে শেষ ৫ উইকেট হারায় তারা। দুর্দান্ত বোলিং আর নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের নায়ক তাদের অধিনায়ক কামিন্স। দুই ইনিংস মিলিয়ে ১০ উইকেট নিয়েছেন তিনি।
টেস্ট ক্যারিয়ারে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ধরলেন তিনি ম্যাচে ১০ শিকার। তবে একটি জায়গায় তিনি গড়েছেন ইতিহাস। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের সুদীর্ঘ ইতিহাসে এক টেস্টে ১০ উইকেট শিকারি প্রথম অধিনায়ক তিনিই। প্রায় ১২১ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ান অফ স্পিনি অলরাউন্ডার হিউ ট্রাম্বলের ৮ উইকেট এত বছর ধরে অধিনায়কদের মধ্যে এই মাঠের সেরা বোলিং। এই পরাজয়ে অস্ট্রেলিয়ার ব্যর্থতার ধারা অব্যাহতই থাকল পাকিস্তানের। এই নিয়ে এখানে টানা ১৬ টেস্ট হারল তারা। সবশেষ জয়টি ছিল তাদের সেই ১৯৯৫ সালে সিডনিতে।
নাটকীয় চতুর্থ দিনে সব মিলিয়ে উইকেটের পতন হয়েছে ১৪টি। দিনের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে লড়াই করেন অ্যালেক্স কেয়ারি। ৬ উইকেটে ১৮৭ রান নিয়ে দিন শুরু করা দল আর যোগ করতে পারে ৭৫ রান। কেয়ারির ব্যাট থেকে আসে এর অর্ধেক। লোয়ার অর্ডারদের নিয়ে লড়াই করে লিড তিনশ ছাড়িয় নিয়ে যান তিনি। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে অস্ট্রেলিয়ান কিপার-ব্যাটসম্যান আউট হন ৫৩ রান করে। চারটি করে উইকেট নেন ইনিংসজুড়ে দারুণ বোলিং করা দুই বাঁহাতি পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি ও মির হামজা। আগের দিন উইকেটশূন্য থাকা আমে জামালের শিকার এ দিন দুটি।
পাকিস্তানের লক্ষ্য এমনিতেই ছিল কঠিন। গত ৯৫ বছরে মেলবোর্নে তিনশর বেশি রান তাড়ায় জেতেনি কোনো দল। সেই অভিযানে শুরুতেই পাকিস্তান ধাক্কা খায় আব্দুল্লাহ শফিককে হারিয়ে। প্রথম ইনিংসে ফিফটি করা ওপেনার এবার মিচেল স্টার্কের অনেক বাইরের বল তাড়া করে ধরা পড়েন স্লিপে। শান মাসুদ তিনে নেমে প্রথম ইনিংসের মতোই দারুণ সব শট খেলতে থাকেন। আরেক প্রান্তে উইকেট আগলে পড়ে থাকেন ইমাম-উল-হক। তবে রাউন্ড দা উইকেট থেকে ভেতরে ঢোকা দারুণ ডেলিভারিকে ইমামকে ফিরিয়ে এই জুটি থামান কামিন্স।
মাসুদকে অবশ্য থামানো যাচ্ছিল না। বাবর আজমের সঙ্গে জুটিতে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন তিনি বেশ দ্রুত রান তুলে। ৫৭ বলেই ফিফটি ছুঁয়ে ফেলেন তিনি।পাকিস্তান অধিনায়ককে ফিরিয়ে তখন অস্ট্রেলিয়াকে আবার স্বস্তি এনে দেন কামিন্স। প্রথম ইনিংসে ৫৪ রানের পর মাসুদ এবার ফেরেন ৬০ রানে। স্লিপে ভালো ক্যাচ নেন স্টিভেন স্মিথ। জুটি থামে ৬১ রানে। পাকিস্তান তবু লড়াই চালিয়ে যেতে থাকেন। কিন্তু জুটি গড়ে তোলার মুখেই বারবার আঘাতে থমকে যেতে হয় তাদের।
সফরে প্রথমবারের মতো স্বচ্ছন্দ মনে হচ্ছিল বাবর আজমকে। কিন্তু ভেতরে ঢোকা দুর্দান্ত ডেলিভারিতে তার সম্ভাবনাময় ইনিংস ৪১ রানে থামান জশ হেইজেলউড। সাউদ শাকিল ২৪ রান করে আউট হন স্টার্কের বলে আপার কাট খেলার চেষ্টায়। ম্যাচ তখন অস্ট্রেলিয়ার দিকেই হেলে। কিন্তু রিজওয়ান ও সালমান মিলে আবার লড়াইয়ে ফেরান পাকিস্তানকে। শুধু জুটিই গড়েননি দুজন, বেশ দ্রুততায় রান তুলতে থাকেন তারা। বিশেষ করে ন্যাথান লায়নকে থিতুই হতে দেননি তারা।
এই জুটি যখন অস্ট্রেলিয়ার মাথা ব্যথার কারণ, তখনই আবার উদ্ধারকর্তা কামিন্স। তার শর্ট অব লেংথ বলে ‘ডাক’ করে ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন রিজওয়ান। কিন্তু বল অতটা লাফায়নি। কিপারের হাতে বল জমা হতেই লাফিয়ে ওঠেন কামিন্স ও অস্ট্রেলিয়ার অন্যরা। কট বিহাইন্ডের আবেদনে আউট দেননি আম্পায়ার। রিভিউ নেয় অস্ট্রেলিয়া। হটস্পট দেখেও পরিষ্কার বোঝা যায়নি কিছু। বারবার রিপ্লে ও স্নিকোমিটার দেখে শেষ পর্যন্ত তৃতীয় আম্পায়ার রিচার্ড ইলিংওয়ার্থ রায় দেন, ‘রিজওয়ানের রিস্ট ব্যান্ডে (আর্ম গার্ড) হালকা ছুঁয়ে গেছে বল।’ যেটির মানে, তিনি আউট!
৩৫ রানে অসন্তুষ্ট মনে বিদায় নেন রিজওয়ান। জুটি ভাঙে ৫৭ রানে। কামিন্স পূর্ণ করেন ২৫০ টেস্ট উইকেট।
এরপর কেবলই বাকি ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার পালা। কামিন্সের শর্ট বল সামলাতে না পেরে বিদায় নেন আমের জামাল ও শাহিন শাহ আফ্রিদি। আরেক প্রান্তে সালমান ফিফটিতে পা রাখেন ৬৯ বলে। এরপরই আউট হয়ে যান স্টার্কের বলে মিচে মার্শের অসাধারণ এক ক্যাচের। পরের বলেই ম্যাচের সমাপ্তি। এবার স্টার্কের বলে দারুণ ক্যাচ নেন স্টিভেন স্মিথ। পাকিস্তানের শেষ চার ব্যাটসম্যানের কেউ কোনো রানই করতে পারেননি। প্রথম ইনিংসে উইকেটশূন্য স্টার্ক এবার শিকার করেন ৪ উইকেট। তবে ম্যাচের সেরা তো কামিন্সই। সিরিজের ফয়সালা হওয়ার পর সিডনিতে নিউ ইয়ার টেস্ট শুরু আগামী বুধবার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ৩১৮
পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ২৬৪
অস্ট্রেলিয়া ২য় ইনিংস: (আগের দিন ১৮৭/৬) (কেয়ারি ৫৩, স্টার্ক ৯, কামিন্স ১৬, লায়ন ১১, হেইজেলউড ১*; আফ্রিদি ২৭-৪-৭৬-৪, হামজা ১৮.১-৬-৩২-৪, হাসান ১৭-২-৫৩-০, জামাল ১৬-২-৭৪-২, সালমান ৬-১-১৬-০)।
পাকিস্তান ১ম ইনিংস: (লক্ষ্য ৩১৭) ৬৭.২ ওভারে ২৩৭ (শফিক ৪, ইমাম ১২, মাসুদ ৬০, বাবর ৪১, শাকিল ২৪, রিজওয়ান ৩৫, সালমান ৫০, জামাল ০, আফ্রিদি ০, হাসান ০*, হামজা ০; স্টার্ক ১৩.২-১-৫৫-৪, হেইজেলউড ১৫-৭-৩৪-১, লায়ন ১৯-১-৮৪-০, কামিন্স ১৮-২-৪৯-৫, মার্শ ২-০-৮-০)।
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৭৯ রানে জয়ী।
সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ: প্যাট কামিন্স।