উইলিয়ামসনের সেঞ্চুরি ছাপিয়ে দ্বিতীয় দিনটা টাইগারদের
বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড সিরিজ
বাংলাদেশের করা ৩১০ রানের জবাবে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৬৬ রান করে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করেছে নিউজিল্যান্ড। তারা এখনও বাংলাদেশের চেয়ে ৪৪ রানে পিছিয়ে আছে তারা। এক কেন উইলিয়ামসন ছাড়া যে কিউই ব্যাটারদের কাউকেই সেভাবে দাঁড়াতে দেননি তাইজুল-মিরাজরা।
স্বস্তির বিষয় হলো, সেঞ্চুরি হাঁকানো উইলিয়ামসনকেও দ্বিতীয় দিনের শেষভাগে এসে ফিরিয়েছেন তাইজুল। প্রথম দিনের মতোই আলোকস্বল্পতায় একটু আগেভাগে খেলা বন্ধ হয়ে যায়। ৮৪ ওভার খেলে নিউজিল্যান্ড তুলেছে ৮ উইকেটে ২৬৬ রান। কাইল জেমিসন ৭ আর টিম সাউদি ১ রানে অপরাজিত আছেন। বাংলাদেশ এখনও এগিয়ে ৪৪ রানে। তাইজুল দিনের সেরা বোলার, একাই নিয়েছেন ৪টি উইকেট।
দ্বিতীয় দিনে খেলতে নেমে প্রথম বলেই বাংলাদেশ অলআউট হয়েছিল ৩১০ রানে। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৪৪ রানের মাথায় ২ উইকেট হারায় কিউইরা। সেখান থেকে ম্যাচ দখলে রাখেন কেন উইলিয়ামসন। জুটি গড়েন হেনরি নিকোলস, ড্যারেল মিচেল ও টস ব্লান্ডেলের সঙ্গে।
একে একে সবাইকে ফেরান তাইজুল-মিরাজ-শরিফুল-নাইমরা। তবে ফেরাতে পারেননি আঠার মতো লেগে থাকা উইলিয়ামসনকে। এই ডানহাতি ব্যাটারের সঙ্গে জুটি গড়া নিকোলস ১৯ রান করে পেসার শরিফুলের শিকার হয়ে ফেরত যান। মিচেল সাজঘরে ফেরেন তাউজুলের ঘূর্ণিতে (৫৪ বলে ৪১)। নাইম হাসানের বলে আউট হওয়ার আগে ব্লান্ডেল করেছেন ৬ রান।
এর আগে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ওপেন করেন ডেভন কনওয়ে ও টম ল্যাথাম। তাইজুল-মিরাজের ঘূর্ণিতে সেটি বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেননি তারা। দলীয় ৩৬ রানের মাথায় ল্যাথাম ও ৪৪ রানের মাথায় আউট হয়ে যান কনওয়ে। ল্যাথামকে ফেরান বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। তাইজুলকে সুইপ খেলতে গিয়ে ফাইন লেগ অঞ্চলে নাইম হাসানের হাতে ক্যাচ হন ল্যাথাম।
এরপর কনওয়েকে ফেরান অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। মিরাজের বলে খেই হারিয়ে শর্টলেগে শাহাদাত হোসেনের তালুবন্দি হন এই কিউই ওপেনার।
মধ্যাহ্নভোজের পর আউট হন নিকোলস। ৪২ বলে ১৯ রান করে শরিফুলের বলে উইকেটরক্ষক নুরুল হাসানের হাতে ক্যাচ হন তিনি। তার আগে উইলিয়ামসনের সঙ্গে ৫৪ রানের জুটি করেছিলেন নিকোলস।
একটা প্রান্ত ধরে ছিলেন কেন উইলিয়ামসন। একের পর এক জুটি গড়ে গেছেন। নিকোলসের সঙ্গে ৫৪, মিচেলের সঙ্গে ৬৬ রানের পর গ্লেন ফিলিপসের সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটেও ৭৬ রান যোগ করেন তিনি। কিছুতেই জুটিটা ভাঙছিল না।
অবশেষে কিউই ইনিংসের ৭৫তম ওভারে মুমিনুল হকের হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। আর বল হাতে নিয়েই অধিনায়ককে উইকেট উপহার দেন মুমিনুল। টার্ন করা বল ফিলিপসের (৪২) ব্যাটে লেগে প্রথম স্লিপে গেলে নিচু ক্যাচ দারুণভাবে লুফে নেন শান্ত।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের লিড নেওয়ার পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায় ছিলেন কেন উইলিয়ামসন। একটা প্রান্ত ধরে জুটির পর জুটি গড়ে যাচ্ছিলেন। টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৯তম সেঞ্চুরিও তুলে নেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার।
অবশেষে দিনের শেষ সময়ে এসে উইলিয়ামসনকে সাজঘরের পথ দেখিয়েছেন তাইজুল ইসলাম। বাঁহাতি এই স্পিনারের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে ডিফেন্স করেও বোল্ড হয়ে গেছেন উইলিয়ামসন। ২০৫ বলে ১০৪ রানের ধৈর্যশীল ইনিংসে ১১টি বাউন্ডারি হাঁকান কিউই তারকা।
গতকাল মঙ্গলবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৮৫.১ ওভারে ৩১০ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৮৬ রান করেছেন ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করার আগেই হন ইশ সোধির শিকার। ১৬৬ বলে ১১ বাউন্ডারি হাঁকানো এই ব্যাটার সোধির বলে ড্যারেল মিচেলের ক্যাচ হন।
এরপর অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুমিনুল হক করেন সমান ৩৭ রান। ফিলিপসের ফুলটস বলে মিড-অনে উইলিয়ামসনের হাতে ক্যাচ তুলে দেন পিচে সেট হওয়া শান্ত। ফিলিপসের দ্বিতীয় শিকার হন মুমিনুল। অভিজ্ঞ এই ব্যাটার ক্যাচ হন উইকেটরক্ষক টম ব্লান্ডেলের হাতে।
এরপরই মূলত বিপত্তি ঘটে বাংলাদেশের। ৫৩ রানে হারায় ৫ উইকেট। শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেট হারিয়ে ৩১০ রানে দিন শেষ করে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় দিনে রানটা আরেকটু বাড়বে আশা ছিল। কিন্তু কোনো রান যোগ না করেই অলআউট হতে হয় টাইগারদের। কিউই পার্টটাইম অফস্পিনার গ্লেন ফিলিপস একাই নেন ৪টি উইকেট। ২টি করে উইকেট শিকার কাইল জেমিসন আর অ্যাজাজ প্যাটেলের। অধিনায়ক সাউদি ও ইশ সোধি নিয়েছেন একটি করে উইকেট।