স্মরণকালের সবচেয়ে বাজে বিশ্বকাপ বাংলাদেশের: সাকিব
ছবি সংগৃহিত
বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে একটি খারাপ দিনই বলা চলে। বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে খেলা ওয়ানডে সুপার লিগের তিন নম্বরে ছিল বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশ একের পর এক হার দেখছে অনায়াসে। সর্বশেষ গতকাল (শনিবার) নেদারল্যান্ডসের কাছে লজ্জাজনক পরাজয়। বিশ্বকাপ আসরে আশার ফানুস উড়িয়ে আসা বাংলাদেশ টানা পাঁচ পরাজয়ে যেন নিমিষেই চুপসে গেল! যাকে ‘স্মরণকালের সবচেয়ে বাজে বিশ্বকাপ’ বলতেও দ্বিধা করলেন না অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
ম্যাচের পর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সাকিব জানান, খেলোয়াড়দের মাথায় কী চলছে, তা তিনি জানেন না। বাংলাদেশ অধিনায়ক আরও অনেক কিছুই জানেন না। তবে একটি ব্যাপার তিনি জানেন, বিশ্বকাপের জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি বাংলাদেশের।
স্বপ্ন ছিল সেমি-ফাইনাল খেলা। বিশ্বকাপ স্বপ্নযাত্রায় আফগানিস্তানকে হারিয়ে শুরুটা মনমতোই হয় বাংলাদেশের। কিন্তু পরের ম্যাচ থেকে যে হারের বৃত্তে ঢুকেছে দলটি, আর বের হওয়া হয়নি। টানা পাঁচ ম্যাচ হারের দুঃস্বপ্নের অধ্যায়ে আজ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে হেরেছে বাংলাদেশ। তাদের বাকি আর তিন ম্যাচ, কিন্তু বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান এখনই বলে দিলেন; এটাই বাংলাদেশের স্বরণকালের সবচেয়ে বাজে বিশ্বকাপ।
বাংলাদেশ দল প্রথমবার বিশ্বকাপে অংশ নেয় ১৯৯৯ সালে। প্রথম আসরে জেতে দুটি ম্যাচ। শক্তিশালী পাকিস্তানকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ে তারা। পরের বিশ্বকাপে ২০০৩ বর্ণহীন পারফরম্যান্স ছিল বাংলাদেশের। একটি ম্যাচেও জিততে পারেনি তারা। তবে তারপর ২০০৭, ২০১১, ২০১৫ ও ২০১৯ বিশ্বকাপে তিনটি করে ম্যাচ জিতেছে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। তার মধ্যে ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে নাম লেখায় বাংলাদেশ। তবে ভারতের বিপক্ষে কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত না এলে হয়তো সেমিফাইনাল খেলাও হয়ে যেতো মাশরাফি বিন মর্তুজার দলটির। এবার সব ছাড়িয়ে যাওয়ার মিশন নিয়ে ভারতে এসেছিলেন তারা। কিন্তু ষষ্ঠ ম্যাচের পরই সাকিবকে স্বীকার করে নিতে হলো অপ্রিয় সত্য কথাটি।
ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সাকিবকে প্রশ্ন করা হয়, আজ পর্যন্ত ধরলে এটাই বাংলাদেশের স্বরণকালের সবচেয়ে বাজে বিশ্বকাপ কিনা? উত্তরে বাংলাদেশ অধিনায়ক বললেন, 'হ্যাঁ, সেটা আপনি নির্দ্বিধায় বলতে পারেন। এবং আমি দ্বিমত করব না।'
বিশ্বকাপের আগে ছন্দে থাকলেও বাংলাদেশ দল টুর্নামেন্টে এসে খেই হারিয়েছে। কেন খেই হারালো বাংলাদেশ, তার উত্তর দিতে পারেননি সাকিব, ‘এই কেনর উত্তর দিতে পারলে আমরা আরও ভালো করতাম। এই কেনর উত্তর আমার কাছে নেই আসলে। আমি ঠিক জানি না। জানি না কী হচ্ছে। আপনি যদি ছয় ম্যাচের ব্যাটিং ইউনিটের পারফরম্যান্সের সারমর্ম টানতে বলেন, বলবো, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম বাদে প্রত্যেকে চরম বাজে পারফর্ম করেছে। বাকিরা কেউ আপ টু মার্ক ছিল না। যতটা আমরা জানি যে আমরা খেলতে পারি। আমরা আমাদের সামর্থ্যের থেকে অনেক পিছিয়ে আছি।’
সাকিব অজুহাত দিতে না চাইলেও প্রস্তুতির ঘাটতির কথা অকপটে স্বীকার করেছেন, ‘আমরা অনেক অপ্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু এখন এই অজুহাত দিয়ে খুব বেশি লাভ হবে না। আমরা অপ্রস্তুত ছিলাম কিছুটা।’
এবার নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও হারল বাংলাদেশ। ২০০৩ বিশ্বকাপে কানাডার কাছে হারের পর বিশ্বকাপে আরেকটি বড় বিপর্যয়—কী ব্যাখ্যা হতে পারে এই লজ্জাজনক হারের? কাল ইডেন গার্ডেনসে বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান সংবাদ সম্মেলনে যা বলেছেন-
প্রশ্ন: এখান থেকে দল কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবে?
সাকিব আল হাসান: সত্যি বলতে এখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো খুব কঠিন। তবে আরও তিন ম্যাচ আছে। সুযোগ আছে। চেষ্টা করতে হবে। এটা ছাড়া আমাদের আর কিছু করার নেই। যদি আজকের (গতকাল) দিনটা ভুলে যেতে পারি, সামনের ম্যাচের জন্য মনোযোগ দিতে পারি। তবে এটা অনেক কঠিন।
প্রশ্ন: আপনাকে নিয়ে অনেক বিতর্ক। আজ বাংলাদেশের অনেক দর্শক উল্লাস করেছেন ম্যাচ বাজেভাবে হারের পর!
সাকিব: হতাশাজনক। তারা আসলে ভালো কিছুরও প্রত্যাশা করে। সেটা না হলে তাদের অধিকার আছে নিজেদের মতো বলার। তাদের নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই। যেভাবে আমরা খেলেছি, এটা আমাদের পাওনা।
প্রশ্ন: মাহমুদউল্লাহ ছয়ে নেমে সেঞ্চুরি করলেন। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে তিনি সাতে নামলেন। কারণ কী?
সাকিব: আমাদের দলে অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। বিভিন্ন সময়ে বোলিং, বিভিন্ন পজিশনে ব্যাটিং এবং বিভিন্ন বোলারকে ফেস করতে স্বচ্ছন্দবোধ করি না। আমাদের অনেক কিছু মানিয়ে চলতে হয়। এ কারণে ব্যাটিং পজিশনে রদবদল করতে হয়। সবাই নিজ নিজ জায়গায় ভালো করলে এত কথা হতো না। ওপরের দিকে ভালো ব্যাটিং হলে মুশফিক-রিয়াদ ভাইয়ের যে আসল ভূমিকা ছিল, সেটা যথার্থ হতো আমাদের জন্য।