কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভারত
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠার লড়াইয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে পাত্তাই দেননি বাংলাদেশের যুবারা। বৃষ্টি আইনে ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানেই হারিয়ে ‘এ’ গ্রুপ থেকে রানার্সআপ হয়ে শেষ আটে জায়গা করে নিয়েছে।
টস হেরে ব্যাট করতে নামা আরব আমিরাতকে ৪৮ ওভার ৫ বলে ১৪৮ রানে গুটিয়ে দেয় বাংলাদেশ। সেই রান তাড়া করতে গিয়ে বড় জয়ের পথেই ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ২১ ওভার ২ বলের সময় বৃষ্টি এলে খেলা বন্ধ হয়ে যায়। তখন রান ছিল ১ উইকেটে ৮৬। বৃষ্টি শেষে আবার খেলা শুরু হলে নতুন করে বাংলাদেশের সামনে টার্গেট দেওয়া হয় ৩৫ ওভারে ১০৭ রানের। সেই রানও বাংলাদেশ নির্বিঘ্নে পাড়ি দেয় আর কোনো উইকেট না হারিয়ে ২৪ ওভার ৫ বলে ১১০ রান করে। শেষ আটে বা কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশ প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছে ভারতকে। ২৯ জানুয়ারি দুই দল হবে মুখোমুখি। এ ভারতকে হারিয়েই গতবার শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। আবার এবারের বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে এশিয়া কাপের সেমি ফাইনালে ভারতের কাছে হেরেই বাংলাদেশের যুবাদের শিরোপা জেতার স্বপ্ন শেষ হয়ে গিয়েছিল। ভারত পরে জিতেছিল এশিয়া কাপ। বাংলাদেশের গ্রুপ থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইংল্যান্ড। তারা কোয়ার্টার ফাইনাল খেলবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২৬ জানুয়ারি। অপর দুই কোয়ার্টার ফাইনাল খেলবে শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান ( ২৭ জানুয়ারি) এবং পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়া ( ২৮ জানুয়ারি)।
বাংলাদেশের যুবাদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ব্যাটসম্যানদের সামনে টার্গেট ছিল ১৪৯ রান করা। দুই পেনার ইফতেখার হোসেন ও মফিজুল ইসলাম মিলেই দলকে বড় জয়ের রাস্তা দেখাতে থাকেন। তাদের জুটিতে ৮৬ রান আসার পরই একদিকে ভাঙন আসে, অপরদিকে বৃষ্টি শুরু হয়। আগের ম্যাচের হাফ সেঞ্চুরিয়ান ইফতেখার ৩৭৮ রান করে গিয়ানানির বলে সতিশের হাতে ধরা পড়ে বিদায় নেন। এরপর বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ হয়ে যায়। বৃষ্টি থামার পর আবার খেলা শুরু হলে বাংলাদেশের সামনে নতুন টার্গেট দেওয়া হয় ৩৫ ওভারে ১০৭ রানের। তার মানে বাংলাদেশের প্রয়োজন পড়ে ২১ রানের। বাকি ১৩ ওভার ৪ বল। উইকেট ৯টি। মফিজুল ও প্রান্তিক নওরোজ নাবিল মিলে ২১ বলেই ২১ রান সংগ্রহ করে নেন। মফিজুল ৬৯ বলে ২ ছক্কা ও ৬ চারে ৬৪ ও প্রান্তিক ১০ বলে ৫ রান করে অপরাজিত থাকেন।
ম্যাচ সেরা হন মফিজুল। এর আগে সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে টস জিতে বাংলার সেনাপতি রকিবুল হাসান প্রতিপক্ষকে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। যে আত্মবিশ্বাস নিয়ে তিনি বোলারদের হাতে বল তুলে দিয়েছিলেন, তার শতভাগ প্রতিদান দেন তারা। আগের ম্যাচে কানাডাকে গুড়িয়ে দিয়েছিলেন রিপন মণ্ডল ও মেহরব। এ ম্যাচে মেহরাব কোনো কিছু করতে না পারলেও রিপন মণ্ডল ঠিকই ছড়ি ঘুরান। ৯ ওভার ১ বলে ৩১ রান দিয়ে তুলে নেন ৩ উইকেট। গতবার বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য তানজিম হাসান সাকিব গত ম্যাচে কোনো উইকেট না পেলেও এ ম্যাচে ১০ ওভার বোলিং করে ৩২ রানে নেন ২ উইকেট। ২ উইকেট শিকার ছিল আশিকুর জামানেরও। তিনি ৮ ওভারে ১৪ রানে নেন ২ উইকেট। একটি করে উইকেট ছিল সেনাপতি রকিবুল হাসান ও আরিফুল হকের।
ব্যাট করতে নামা আরব আমিরাতের দুই ওপেনারের উপর একই ওভারে জোড়া আঘাত হানেন আশিকুর জামান। সুরিয়া সতিশ ও কাই স্মিথকে তিনি আউট করেন দলীয় ৬ ও ৮ রানে। দুইজনেরই রান ছিল ২ করে। এরপর মিডল অর্ডারে ধ্রুব পরেশ্বর দলপতি আলিশা শারাফু পুনিয়া মিত্র দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। পরেশ্বর ও আলিশা জুটি যখন ক্রমেই বড় হচ্ছিল, তখনই আঘাত হানেন তানজিম। তিনি আলিশাকে আউট করেন ২৩ রানে। জুটিতে রান আসে ৪৪। পুনিয়া মেহরার সঙ্গে জুটি গড়ে পরেশ্বরও আবার এগুনের চেষ্টা করেন। এবার তাকে ব্যক্তিগত ৩৩ রানে থামিয়ে দেন দলপতি রকিবুল হাসান। এ জুটি ভেঙে যাবার পর পরবর্তী কালে আর কোনো বড় জুটি গড়ে উঠতে পারেনি। আসলে বাংলাদেশের বোলাররা হতে দেননি। একমাত্র পুনিয়া মেহেরাই একা হাল ধরে ইনিংসে বড় করার চেষ্টা করেন। কিন্তু অপর প্রান্তে তখন শুধুই ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়া। খুব দ্রুত বিদায় নেন কেশওয়ানি (৩) আলী নাসের (৭)। কিন্তু আসল কাজটি করেন রিপন মণ্ডল। তিনি ক্রমেই ইনিংস বড় করতে থাকা পুনিয়া মেহেরাকে ফিরিয়ে দেন ৪৩ রানে। এরপর তিনি ছেঁটে দেন ইনিংসের শেষ ২ উইকেটও। মাঝে একটি উইকেট নেন তানজিম। ফলে ৪৮ ওভার ১ বলে ১৪৮ রানে অলআউট হয় সংযুক্ত আরব আমিরাত।
এমপি/এসএন