গাজীতে ধরাশায়ী আবাহনীও
গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স সুপার লিগে উঠে এসেছিল পয়েন্ট টেবিলের ছয়ে থেকে। শিরোপা লড়াইয়ে তারা ছিল না। শুধুই নিয়ম রক্ষার জন্য খেলা। শিরোপা লড়াইয়ে ছিল মূলত বর্তমান চ্যাম্পিয়ন শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব ও আবাহনী। সেই গাজী গ্রুপই সুপার লিগে সবচেয়ে বড় অঘটনের জন্ম দেয়। সুপার লিগে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই তারা হারিয়ে দেয় শেখ জামালকে। এদিকে বুধবার (১০ মে) তারা বৃষ্টি আইনে ৬ উইকেটে হারিয়েছে আবাহনীকে। অবশ্য বৃষ্টি না আসলেও গাজী ছিল জয়ের পথেই।
আবাহনীর ২৪৬ রানের জবাব দিতে নেমে গাজীর রান ছিল একপর্যায়ে ৪১.৫ ওভারে ৪ উইকেটে ২১৫ রান। তখনই শুরু হয় বৃষ্টি। পরে বৃষ্টি আইনে নতুন করে টার্গেট দেওয়া হয় ৪৫ ওভারে ২১৪ রানের। কিন্তু গাজী গ্রুপ আগেই সেই রান করায় আর মাঠে নামতে হয়নি। এখন শেখ জামাল ও আবাহনী দুই দলেরই পয়েন্ট সমান ২৬ করে।
সুপার লিগের প্রথম ম্যাচ থেকে শীর্ষে থাকা আবাহনী এই হারে লিগের প্রথম পর্বে হেড টু হেড লড়াইয়ে শেখ জামালের কাছে হেরে যাওয়ায় বাইলজ অনুযায়ী দুইয়ে নেমে গেছে। শেখ জামাল সুপার লিগের প্রথম ম্যাচে গাজী গ্রুপের কাছে হেরে শীর্ষ স্থান হারিয়েছিল। এখন ১৩ মে দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে নির্ধারিত হবে শিরোপা। অলিখিত ফাইনাল। যে দল জিতবে তারাই চ্যাম্পিয়ন। শীর্ষে থাকা দুই দলের মতো লিগের অপর চার দলের পয়েন্টও কাকতালীয়ভাবে জোড়ায় জোড়ায় সমান করে। প্রাইম ব্যাংক ও লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের ১৮ পয়েন্ট করে এবং গাজী গ্রুপ ও মোহামেডানের ১৫ পয়েন্ট করে।
সুপার লিগের চতুর্থ রাউন্ডের যে ফলাফল হয়েছে তা উল্টো হলে শেষ রাউন্ডে আবাহনী ও শেখ জামালের ম্যাচ নিয়মরক্ষায় পরিণত হতো। আবাহনী জিতলে আর শেখ জামাল হারলে তখন আবাহনীই চ্যাম্পিয়ন হতো।
বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে আবাহনীর শুরুর দিকে ব্যাটসম্যানরা রান পেলেও লেট মিডল অর্ডার ও লোয়ার অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা রান পাননি। ফলে ভালো সূচনার পরও আবাহনী নিজেদের সংগ্রহ বড় করতে পারেনি। উল্টো ৪৭.২ ওভারে ২৪৬ রানে অলআউট হয়ে যায়। আবাহনীকে বেগ দিয়েছেন স্পিনার টিপু সুলতান। তিনি একাই টপ অর্ডারের ৩টিসহ ৪ উইকেট নেন ৪৭ রান দিয়ে।
আবাহনীর শুরুটা ছিল দারুণ। লিগে সফল দুই ব্যাটসম্যান এনামুল হক বিজয় ও মোহাম্মদ নাঈম শেখ ৯০ রান এনে দেন ১৭ ওভারে। জুটি ভাঙে নাঈম শেখ আউট হলে। লিগে নবম হাফ সেঞ্চুরি করে তিনি ৬৪ বলে ২ ছক্কা ও ৬ চারে ৬১ রান করে টিপু সুলতানের বলে মেহেদি মারুফের হাতে ধরা পড়ে বিদায় নেন। বেশ কয়েক ম্যাচ পর রানের দেখা পাওয়া এনামুল হক বিজয় হাফ সেঞ্চুরির কাছাকাছি গিয়ে আউট হন ৪৩ রানে। তাকে আউট করেন আসাদুল্লাহ গালিব। ক্যাচ ধরেন সেই মেহেদি মারুফ। এরপর মাহমুদুল হাসান জয় ৪৮ ও অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ২৬ রান করা ছাড়া আর কেউ রান করতে পারেননি। এই দুইজনকেই আউট করেন টিপু সুলতান। এরপর জাকের আলী (০), খুশদিল শাহ (১২) ইনিংস বড় করতে পারেনি। ফলে একপর্যায়ে যেখানে আবাহনীর রান ছিল ৫ উইকেটে ২০২, সেখানে তারা শেষ ৫ উইকেট হারায় ৪৪ রানে। টিপু সুলতান ছাড়াও জয়নাল ৪৬ রানে নেন ২ উইকেট।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে গাজী গ্রুপ শুরুতেই হাবিবুর রহমান সোহানের (৮) উইকেট হারায়। ওপেনার মেহেদি মারুফও ফিরে যান দলীয় ৪৩ ও ব্যক্তিগত ৩০ রানে। এই শেষ। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দলীয় ৮৭ রানে ফরহাদ হোসেন ২৩ রান করে ফিরে যাওয়ার পর চতুর্থ উইকেট জুটিতে মেহরব ও আসাদুল্লাহ গালিব ৭৫ রান যোগ করে দলের জয়ের ভিত গড়ে দেন। মেহরব ৬৭ বলে ৩ ছক্কা ও ২ চারে ৫২ রান করে আউট হওয়ার পর গালিব ও আকবর আলী দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান। দুইজনে পঞ্চম উইকেট জুটিতে ১১.১ ওভারে ৫৩ রান করে অবিচ্ছিন্ন থাকেন। এ পর্যায়ে আসে বৃষ্টি। পরে বৃষ্টি আইনে নিষ্পত্তি হয় খেলা। ম্যাচসেরা গালিব ৯৫ বলে ১১ চারে ৮৫ রান করে অপরাজিত থাকেন। তার সঙ্গে ১১ রানে অপরাজিত ছিলেন অধিনায়ক আকবর আলী। তানভীর ইসলাম ৫০ রানে নেন ২ উইকেট।
এমপি/এসজি