লো-স্কোরিং ম্যাচেও উত্তেজনা, জয় কুমিল্লার
সিলেট সানরাইজার্স অলআউট হয়েছে মাত্র ৯৬ রানে। সেই রান তাড়া করতে নেমে তারকা সমৃদ্ধ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের সে কী গলদগর্ম অবস্থা। টানটান উত্তেজনার ম্যাচ শেষ পর্যন্ত কুমিল্লা জিতেছে ২ উইকেটে।
এক ম্যাচ পরই বিপিএল আবার ফিরেছে নিজেদের চিরচেনা রূপে। বিপিএল মানেই লো-স্কোরিং ম্যাচ। এবার শুরুর ম্যাচেও তারই প্রতিফলন ছিল। পরের ম্যাচে আবার রানের দেখা মিলেছিল। কিন্তু দ্বিতীয় দিন শনিবারের (২২ জানুয়ারি) প্রথম ম্যাচেই লো-স্কোরিং। তা এমনই যে শতরানও পার হতে পারেনি। সেই রান অতিক্রম করতে গিয়ে জয়ী দলের অবস্থাও কাহিল হয়ে উঠেছিল। টস হেরে ব্যাট করতে নামা সিলেটর সংগ্রহ ওভার প্রতি ৫ করে। সেখানে কুমিল্লা ম্যাচ জিতেছে ওভার প্রতি ৫.১৯ রান করে। টি-টোয়েন্টি মানেই চার-ছক্কার ফুলঝরি। বিপিএলে যেন তা অধরাই থেকে যায়। মাঝে কিছু ম্যাচ দেখা যায় বড় রানের। এই ম্যাচে দুই দলে মিলে খেলেছে ৩৮.৪ ওভার। রান উঠেছে ১৯৩। উইকেট পড়েছে ১৮টি! তবে লো স্কোরিং ম্যাচেও নাটকীয়তা থাকায় অনেকেই দুধের স্বাদ ঘোলে মিটিয়েছেন।
দুই দলেরই ছিল প্রথম ম্যাচ। শক্তির বিবেচনায় সিলেট খুবই সাধারণ মানের দল। নেই দেশি-বিদেশি তেমন কোনো তারকা। সেখানে কুমিল্লা দেশি-বিদেশি তারকায় সমৃদ্ধ। এমন একটি দল টস জিতে বোলিং বেছে নিয়ে প্রতিপক্ষকে ৯৬ রানে অলআউট করে দেওয়ার মাঝে অবাক হওয়ার কিছু ছিল না। যেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যখনই সেই রান তাড়া করতে নেমে কুমিল্লাও হাবুডুবু খেতে থাকে, তখনই সেটা অস্বাভাবিক হয়ে উঠে।
যে দলে ডু প্লেসি, ডেলপোটের মতো ব্যাটসম্যান থাকেন, আর তাদের সহযোগী হিসেবে থাকেন দেশের মুমিনুল, ইমরুল কায়েস, নাহিদুল আরিফুলের মতো ব্যাটসম্যানরা তাদের সামনে ৯৬ রান তাড়া করা কোনো ব্যাপারই না। কতো দ্রুত তারা ম্যাচ জিততে পারে-এমন ভাবনার মানুষই বেশি পাওয়া যাবে। কিন্তু চিন্তার সঙ্গে বাস্তবের কোনো যোগসূত্র আর স্থাপন করতে পারেননি কুমিল্লার ব্যাটসম্যানরা।
কুমিল্লার দুই বিদেশি রিক্রুট ডু প্লেসি ও ডেলপোর্ট হতাশ করেন দর্শক-সমর্থদের। ডু প্লেসি বিপিএলে প্রথম ম্যাচে খেলতে নেমে মাত্র ২ রানে আউট হয়ে যান সোহাগ গাজী নিজের বলে নিজেই ক্যাচ ধরে। পরে সেই সোহাগ গাজীই ডেলপোর্টকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন ১৬ রানে। তখনো বুঝা যায়নি ম্যাচে এমন উত্তেজনা সৃষ্টি হবে। মুমিনুল ২০ বলে ১টি করে চার-ছয়ে ১৫ রান করে আউট হওয়ার একটা মৃদু ধাক্কা লাগে। ১০ রানে হারায় ৩ উইকেট। দলের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ৫৫। এ সময় মুমিনুল ছাড়াও আউট হন ইমরুল কায়েস (১০) ও আরিফুল হক (৪)। মোসাদ্দেক আনেন জোড়া আঘাত। আফগানিস্তানের করিম জানাত এসে নাহিদুলকে নিয়ে নির্বিঘ্নে এগুচ্ছিলেন। উত্তেজনার যে ভাব ছিল, তাও মিষে যেতে থাকে। তাসকিনের শিকার হয়ে করিম জানাত ১৩ বলে ১৮ রান করে ফিরে যাওয়ার পর আবার ধ্বস নামে। যে ধ্বসে ম্যাচ দোদুল্যমান হয়ে উঠে। ৬ রানে কুমিল্লা হারায় ৩ উইকেট। নাজমুল আনেন জোড়া আঘাত। তিনি ফিরিয়ে দেন নাহিদুলল (১৬) ও শহিদুলকে (১)। ৫ উইকেটে ৮২ থেকে দলের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৮ উইকেটে ৮৮। তখন কুমিল্লার জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২১ বলে ৯ রানের। বলের দিকে সমস্যা না হলেও উইকেটের দিক থেকে সমস্যা দেখা দেয়। কারণ সবাই লো-অর্ডার। কোনো ভরসা নেই। মোসাদ্দেক আসেন ১৮ নাম্বার ওভারে এসে ২ রান দিয়ে খেলাকে আরো জমিয়ে তুলেন। কিন্তু ১৯ নাম্বার ওভার করতে আসা কেসরিক উইলয়ামস কোনো হুংকার ছড়াতে পারেননি। সেই ওভারেই চলে আসে প্রয়োজনীয় রান। জয়সূচক রান আসে ওয়াইড বল থেকে। নাজমুল ইসলামস অপু ১৭ রানে ৩ উইকেট। ২টি করে উইকেট নেন মোসাদ্দেক ও সোহাগ গাজী।
৯৭ রান করতে গিয়ে কুমিল্লার ব্যাটসম্যানরা যেমন ধুকেছিলেন, একই অবস্থা হয়েছিল আগে ব্যাট করতে নামা সিলেটেরও। দক্ষিণ আফ্রিকার কলিন ইনগ্রাম ও ইংল্যান্ডের রবি বোপারা ছাড়া আর কেউ রান করতে পারেননি। ইনগ্রাম ২০ ও রবি বোপারা ১৭ রান করেন। এ ছাড়া সোহাগ গাজী করেন ১২ রান। আর কেউ দুই অংকের রান করতে পারেননি। অতিরিক্ত থেকে আসে ১৯ রান। ২টি করে উইকেট নেন কুমিল্লার মোস্তাফিজুর, শহীদুল ও নাহিদুল।
বল হাতে ২ উইকেট ও ব্যাট হাতে ১৬ রান করে ম্যাচ সেরা হয়েছেন নাহিদুল।
এমপি/এসআইএইচ