ম্যারাডোনা ও আর্থিক দেউলিয়া থেকে সিরি’আ চ্যাম্পিয়ন
ডিয়েগো ম্যারাডোনার মৃত্যুর খবরে অন্ধকার নেমে এসেছিল নেপলসে। যতটা কেঁদেছিল আর্জেন্টিনা, ততটাই শোকে আচ্ছন্ন ছিল দক্ষিণ ইতালির শহরটি। পুরো নেপলস ছেঁয়ে গিয়েছিল ফুটবল ঈশ্বরের ব্যানার-ফেস্টুনে। আজ যখন উৎসবের নগর নেপলস, তখনো শহরজুড়ে স্মরণে ম্যারাডোনা।
ফুটবল নেপলসের ডিএনএ ম্যারাডোনার কারণেই। ইতালির দক্ষিণ আর্জেন্টাইনের পা পড়েছিল ১৯৮৪ সালে। বার্সেলোনা থেকে তৎকালীন বিশ্বরেকর্ড ১০.৫ মিলিয়ন ডলার ট্রান্সফার ফিতে যোগ দিয়েছিলেন নাপোলিতে। ফুটবল ঈশ্বরের আগমনে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে যায় তারা। ক্লাবের ইতিহাসে প্রথমবার সিরি’আ জিতে ১৯৮৭ সালে।
তিন বছর পর শিরোপা পুনরুদ্ধার করে নাপোলি। আবারও ম্যারাডোনাকে সামনে রেখে। যেখানে ফুটবলে তাদের অবজ্ঞার চোখে দেখত দক্ষিণের প্রতিদ্বন্দ্বীরা, সাফল্যের হাওয়ায় এই নাপোলিকেই সম্মানের চূড়ায় তুলেছিলেন ম্যারাডোনা। যদিও নাপোলি লিজেন্ডসের বিদায়টা ছিল না মোটেও সম্মানজনক।
১৯৯১ সালে ড্রাগ টেস্টে পজিটিভ হন ম্যারাডোনা। ১৫ মাসের নিষেধাজ্ঞার পর অপমানের বোঝা কাঁধে নিয়ে তাকে ছাড়তে হয়েছিল ইতালি। ওই বছর একের পর এক খেলোয়াড় ছাড়তে থাকে নেপলস। যার প্রভাব পড়ে মাঠে এবং পারফরম্যান্স হ্রাস পায় নাপোলির।
ক্রমাগত পতনের কয়েক বছর পর, ক্লাবটি ৩৪ ম্যাচে মাত্র ১৪ পয়েন্ট পাওয়ায় সিরি’আ ছিটকে যায়। ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ৮ বছর পর নাপোলিকে খুঁজে পাওয়া যায় দ্বিতীয় স্তরের লিগ সিরি’বিতে। নেপলসের ফুটবলপ্রেমীদের হতাশা সেখানেই শেষ হয়নি।
২০০০-০১ মৌসুমে শীর্ষ লিগে ফিরেছিল নাপোলি। পরের দুই মৌসুমে ফের খেলতে হয় দ্বিতীয় স্তরে। এরপর দেউলিয়া হয়ে যাওয়ায় ২০০৩-০৪ মৌসুমে মাঠেই ছিল না তারা। সেই ধাক্কা কাটিয়ে ২০০৪-০৫ মৌসুমে তৃতীয় স্তরের লিগ দিয়ে নতুন পথচলা শুরু করে নাপোলি।
ফিনিক্সের মতো ধ্বংস্তূপ থেকে উঠে আসে নেপলসের ক্লাবটি। এই অসম্ভব সম্ভব হয়েছিল ত্রাণকর্তাদের নেতৃত্বে। যখন ক্লাবটি আর্থিকভাবে সবচেয়ে বেশি দুর্বল ছিল, তখন তাদের হারানো জৌলুস ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ইতালিয়ান চলচ্চিত্র জায়ান্ট অরেলিও ডি লরেন্তিস ঝাঁপিয়ে পড়েন।
লরেন্তিস তার প্রতিশ্রুতি পূরণ করেন, নাপোলিকে তিন বছরে ইতালির টপ-ফ্লাইটে এবং সিরি’আতে ফেরার দ্বিতীয় বছরে ইউরোপিয়ান টুর্নামেন্টে ফিরিয়ে আনেন। সিরি’আতে ক্লাবের প্রত্যাবর্তনের ১৬ বছরে, নাপোলি ভক্তরা ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা স্টেডিয়ামে দেখেছেন ইউরোপের সেরা কিছু খেলোয়াড়।
মাঠের লড়াইয়ে নাপোলির জার্সি গায়ে দেখা গেছে- এডিনসন কাভানি এবং হিগুয়েন থেকে ড্রায়েস মের্টেন্স এবং মারেক হ্যামসিককে। এমনকি ডাগআউটে দেখা যায় ওয়াল্টার মাজাররি, রাফায়েল বেনিটেজ, মাউরিজিও সারি এবং কার্লো আনচেলত্তির মতো এলিট কোচদের।
কিন্তু সেরাদের ভিড়িয়েও ধরা দিচ্ছিল না স্কুডেটো। অবশেষে অপেক্ষা ঘুচল ২০২২-২৩ মৌসুমে। নেপলসে আরাধ্য শিরোপা এনে দিয়েছেন লুসিয়ানো স্পালেত্তি। কোচিং ক্যারিয়ারে প্রথমবার সিরি’আ জিতলেন এই ইতালিয়ান কোচ। নাপোলিও ঘুচাল ৩৩ বছরের অপেক্ষা।
সুখের দিনে নেপলস ভেসে উঠছে সবকিছুই: ম্যারাডোনার কীর্তি, তার বিদায়ের দুর্বিষহ স্মৃতি, দেউলিয়ার সময়কাল। এক কথায়, নাপোলির একাল-সেকাল ভক্তদের চোখে মিলেমিশে একাকার।
এসজি