আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টকে সাকিবের না, গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র হয়ে ভারত!
মুদ্রার এক পিঠে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে সাফল্যের উপচে পড়া ডালিতে বাইরে উৎসবের ঢেউ, অপর পিঠে অন্দরে অস্বস্তিকর পরিবেশ। উৎসবের ডালির কারণ ইংল্যান্ডের পর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেও সিরিজ জয়।
আর অস্বস্তিকর পরিবেশের কারণ আইপিএলে সাকিব-লিটন-মোস্তাফিজদের অনাপত্তি পত্র দেওয়া নিয়ে। বিসিবির পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে আগে জাতীয় দল, পরে আইপিএল। এই হিসেবে তিন ক্রিকেটারদের আইপিএলে খেলার ছাড়পত্র দিবে বিসিবি। তাতে দেখা যায় সর্বোচ্চ এক মাসের মতো আইপিএল খেলতে পারবেন ক্রিকেটারদের কেউ। টেস্ট না খেলাতে মোস্তাফিজ বেশি খেলার সুযোগ পাবেন।
কিন্তু বিসিবিরি এমন কঠোর মনোভাব আবার মেনে নিতে পারছেন না ক্রিকেটাররা। বিশেষ করে সাকিব। তাকে পুরো মৌসুমের ছাড়পত্র দেওয়ার জন্য তিনি জোর তদবির করে যাচ্ছেন। এমন কী নানাভাবে বিসিবিকে চাপও প্রয়োগ করছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। সূত্রে এমনও জানা গেছে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট না খেলার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন সাকিব।
বিসিবি যদি তার ছাড়পত্র এগিয়ে না আনে, তাহলে সাকিব পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে ছুটি নিয়ে চলে যাবেন যুক্তরাস্ট্রে, যেটা তিনি প্রায় করে থাকেন। পরে সেখান থেকে বিসিবির দেয়া ছাড়পত্র অনুযায়ী খেলতে যাবেন আইপিএল!
যখনই আইপিএলে আসে. জাতীয় দলে খেলা, না খেলা নিয়ে ভারত ছাড়া বিশ্ব ক্রিকেট উত্তপ্ত হয়ে উঠে। বাংলাদেশও এর থেকে বাদ পড়ে না। এবার সেই উত্তাপের ঢেউ একটু বেশিই পড়েছে বাংলোদেশ। কারণ, এবার আইপিএলে বাংলাদেশের ক্রিকেটারের সংখ্যা বেশি, ৩ জন।
আগের মৌসুমগুলোতেও একমাত্র সাকিবকে ছাড়পত্র দেওয়া নিয়েই বিসিবিতে টালমাটাল অবস্থা সৃষ্টি হতো। বিশেষ করে টেস্ট খেলা নিয়ে। আইপিএলেকে সাকিব এতটাই গুরুত্ব দিতেন যে জাতীয় দলের হয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচও খেলতে রাজি হতেন না। তার একগুঁয়েমির কাছে বিসিবি বারবারই হার মেনেছে।
কিন্তু তখন সাকিব একা থাকায় শুধুমাত্র একজনের দায়ই নিতে হত বিসিবিকে। মোস্তাফিজ টেস্ট খেলা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়াতে তাকে নিয়ে এ জাতীয় সমস্যা কখনই তৈরি হত না। আবার ছাড়পত্র দেওয়া নিয়ে তিনি কখন সেভাবে সমস্যা তৈরি করেননি। কিন্তু এবার সাকিবের সঙ্গে যোগ হয়েছেন লিটন দাসও। এ ব্যাপারে বিসিবির ক্রিকেট অপারেশনস কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস ঢাকা প্রকাশকে বলেন, ‘আগের সিদ্ধান্তই টিক আছে। আমরা পরিবর্তন করি। যদি করি আপনাদের জানাব। সাকিবতো এখনো দেশে আছে। খেলছে। দেখা যাক সামনে কী হয়?’
সাকিব-লিটন দুইজনই তিন ফরম্যাটে জাতীয় দলের গুরুত্বপূর্ন খেলোয়াড়। আবার দুই জনেই টেস্ট দলের অধিনায়ক ও সহ অধিনায়ক। দুই জনকেই ছেড়ে দিলে জাতীয় দল অনেক দূর্বল হয়ে পড়বে। আবার নতুন করে নেতৃত্বকে দেবেন, সেটাও সামনে চলে আসে। এ নিয়ে বিসিবি পড়েছে দোটানায়! সূত্রে জানা গেছে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন কয়েকজন ঘনিষ্ট ও প্রভাবশালী পরিচালকদের নিয়ে আলোচনা করেছেন সুন্দর একটি সমাধানের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পরিচালক ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘শুধু সাকিব একা হলে বিষয়টি জটিল হতো না। এখনতো লিটনও আছে। সাকিবকে দিলে লিটনকেও দিতে হবে। সাকিকে দিয়ে লিটনকে না দিলে বিষয়টি আবার সমালোচিত হবে। দেখতেও ভালো দেখাবে না। আবার দলের কথা বিবেচনা করে দুই জনকেই ছাড়া যাচ্ছে না। ভালো একটি সমাধানের পথ খুঁজছে বিসিবি।’
অন্যএকটি সূত্রে জানা গেছে শুরু থেকে ছাড়পত্র পেতে সাকিব বিসিবির সভাপতি নাজমুলে হোসেন পাপন, ক্রিকেট অপারশনস কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুসসহ আরও কয়েকজন পরিচালককে বুঝানোর চেষ্টা করছেন। তখন তারাও সাকিবকে বাস্তবাতা বুঝানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু সাকিব নাছোড়বান্দা। পরে জানা গেছে সাকিব তাদের জানিয়ে দিয়েছেন তিনি আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট খেলবেন না। ছুটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পরিবারের কাছে চলে যাবেন। সেখান থেকে খেলতে যাবেন আইপিএল।
সাকিবের এমন সিদ্ধান্ত আবার বিপাকে ফেলে দিয়েছে বিসিবিকে। তারা ভাবছেন যদি সে টেস্টই না খেলে, তাহলে পরিস্থিতি ঘোলা না করে ছুটির পরিবর্তে আইপিএলের ছাড়পত্রের তারিখ এগিয়ে এনে তার কথামত দিয়ে দেওয়ার।
‘সূত্রে জানা গেছে সাকিব এরকম হুমকি দিলেও লিটন দাস আবার সে রকম কিছু বলেননি। তিনিও চান আগে থেকেই খেলতে। কিন্তু বিসিবি যেভাবে ছাড়পত্র দিবে, সেভাবেই তিনি খেলতে যাবেন।
সাকিবের ছাড়পত্র চিত্রনাট্য সমাপ্তির পথে। তার শেষ দৃশ্য দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আগামাীকাল ৩১ মার্চ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচ পর্যন্ত।
এমপি/এমএমএ/