পাকিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ‘বাঘ’
জয়াবর্ধনে-সাঙ্গাকারা-মুরালিধরনের যুগ শেষ হয়ে যাওয়ার পর বিশ্ব ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কা দল খর্ব শক্তিতে পরিণত হয়। এ রকম ধারনা অবশ্য আগে থকেই অনুমিত ছিল। বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশ কখনিই সে রকম শক্তিশালী দল হয়ে উঠতে পারেনি। তবে উত্তোরনের পথে ছিল। আর এখানে ‘ভীত’ হিসেবে কাজ করেছিলেন ‘ পঞ্চপাণ্ডব ‘ মাশরাফি-সাকিব-তামিম-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ।
এদের বিদায়ের পর বাংলাদেশ যতোটুকু উত্তোরণের পথে ছিল, সেখান বিরাট এক দাড়ি পড়বে। এখনও পঞ্চ পান্ডবের সবাই বিদায় নেননি। মাশরাফি ২০১৭ সালে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ছেড়ে দেয়ার পর ‘ পঞ্চপান্ডব ‘ উপাধি আর থাকেনি। নেমে আসে চারজনে। এদিকে ইনজুরির কারণে সেই চারজন অনেক সময় একত্রে খেলতে পারেননি। কখনো কখনো তিন, কখনো দুইয়ে নেমে এসেছিল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তামিম ইকবালের ইনজুরির কারণে তা নেমে আসে তিন জনে। আসর চলাকালীন শেষ দুই ম্যাচে সাকিব আল হাসান ইনজুরিতে পড়লে দুই জন নিয়েই খেলতে নামে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেই দুই ম্যাচে পঞ্চপান্ডব ছাড়া বাংলাদেশের ক্রিকেট যে দিক হারা পথিক হতে চলেছে তাই যেন ফুটে উঠেছিল। দুইটি ম্যাচেই বাংলাদেশ আগে ব্যাটিং করে শতরানও করতে পারেনি। কিন্তু কাল থেকে পাকিস্তানের বিপক্ষে শুরু হতে যাওয়া তিন ম্যাচের টি –টোয়েন্টি র সিরিজে বাংলাদেশ খেলবে পঞ্চপান্ডবের মাত্র একজনকে নিয়ে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। বলা যায় পঞ্চাপান্ডব বিহীন বাংলাদেশ দলের যেন একটা ড্রেস রিহার্সেলই ! একদিকে দূর্ধষ পাকিস্তান, বিপরীতে হারে হারে বিধস্ত বাংলাদেশ। অভিজ্ঞতার পরিবর্তে তারুণ্যের শক্তিতে নির্ভরশীল বাংলাদেশ। এ যেন এক নতুন পরীক্ষা।
পরীক্ষায় ভালো করতে হলে প্রস্তুতি ভালোভাবে করতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশ দল কী তা করতে পেরেছে? টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ব্যর্থতা বঙ্গোপোসাগরে ফেলে দিতে যে তরুণদের উপর ভর করা হয়েছে, তাদের উপর কী আসলেই নির্ভরা হওয়া যায়। নাজমুল হোসেন শান্ত তিন ম্যাচ খেলে সাকুল্যে রান করেছেন মাত্র ২৪। ইয়াসীর আলী রাব্বি জাতীয় দলে আগেও সুযোগ পেয়েছেন কিন্তু খেলা হয়নি কোন ম্যাচ। এবারও তিনি আছেন দলে। টেস্টের পরিচিত মুখ সাইফ হাসান সুযোগ পেয়েছেন প্রথম বারের মতো। আজ নাঈম শেখের সঙ্গে তার ইনিংসের গোড়া পত্তন করার সম্ভাবনা খুব বেশি। নতুন মুখ হিসেবে আরও আছেন অনূধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের অধিনায়ক আকবর আলী ও পেসার শহীদুল ইসলাম। ছয় জনের অপরজন হলেন লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। এই তিন জনেরই খেলার সম্ভাবনা কম।
দলের যে চিত্র তাতে ব্যাটিং লাইনে ভর করার মতো নাম কোথায়। আশার আলো সেই পঞ্চপান্ডবেরই শেষ সলতে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। নাঈম শেখ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে রান পেলেও তা ছিল স্রোতের বিপরীত। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সাথে মানানসই ছিল না। আর আছেন আফিফ হোসেন ধ্রুব, মোস্তাফিজুর রহমান। দুই জনেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ছিল চরমভাবে ব্যর্থ। সেখানে মেহেদী হাসান অনেক ভালো খেলেছেন। নুরুল হাসান সোহান ও তাসকিন আহমেদ ছিলেন মন্দের ভালো। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের নায়ক নাসুম আহমেদ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিয়মিত খেলেননি। আজ থাকছেন তিনি প্রথম বিবেচনাতেই। এদের নিয়েই ঘরের মাঠ ‘বাঘ’ হয়ে উঠা বাংলাদেশ দলকে নিজেদের খেতাব ধরে রাখার মিশনে নামতে হবে। এদের নিয়েই বাঘ হয়ে উঠা সম্ভব ছিল! কিন্তু নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে উইকেটকে হাতিয়ার বানিয়ে যে ফায়দা নেয়া হয়েছিল, যা বিশ্বকাপে গিয়ে হয়েছিল বুমেরাং, এবার পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই পথে হাঁটছে না বিসিবি।
না হাঁটার কারণও আছে। নিউজিল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে রকম উইকেটে খেলা হয়েছে, সেরকম উইকেটে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতে গেলে আরও বড় বিপদ নেমে আসতে পারে। কারণ পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা যেমন স্পিন ভালো খেলতে পারেন,তেমনি আবার তাদের স্পিন আক্রমণও বাংলাদেশের চেয়ে অনেক ভালো। কাজেই বিপদ সব দিক থেকেই। একমাত্র ভালো খেলাই হতে পারে এই ভয়ংকর বৈতরনি পাড়ি দেয়ার একামাত্র রাস্তা। বাঘের খেতাব ধরে রাখা।