নড়বড়ে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২০৯ রান
ঘরের মাঠে বাঘ বাংলাদেশের ইচ্ছে ইংল্যান্ডকেও ‘বধ’ করা। যা তারা আগে কখনও করতে পারনি। ম্যাচ জিতলেও সিরিজ জিততে পারেনি। তিন ম্যাচের সিরিজে তার জন্য প্রয়োজন ছিল শুরুটা ভালো করা। জেতার মত সংগ্রহ দাঁড় করানো কিন্তু সেই কাজটি খুব একটা ভালোভাবে করতে পারনি বাংলাদেশ দল। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ সংগ্রহ করেছে ৪৭.২ ওভারে মাত্র ২০৯ রান।
বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশ একমত্র ওয়ানডে ক্রিকেটেই যথেষ্ট শক্তিশালী। সর্বশেষ ঘরের মাঠে ভারতকে বধ করে সে প্রমাণ তারা আরেকবার রেখেছে। তার আগে দক্ষিণ আফ্রিকাকে তাদের মাটিতে গিয়ে বধ করে এসেছে। এবার তাই ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডকে বধ করার রণ পরিকল্পনা ঠিক করেছিল। কিন্তু সে লক্ষ্য শুরুতেই কঠিন বাস্তবতার মুখে পড়েছে। আর যাই হোক অন্তত ২০৯ রান করে ইংল্যান্ডকে আটাকানো কঠিনই। সেই কঠিনের জয় করতে হলে বল হাতে বোলারদের নিজেদের সেরাটা মেলে ধরতে হবে। এখন তারা কতটা তা করতে পারবে তার জন্য অপেক্ষার তরি ভাসাতে হবে!
ইংল্যান্ডকে বধ করতে নামার আগে বাংলাদেশ দল কিন্তু শতভাগ মনযোগ দিয়ে মাঠে নামতে পারেনি। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের অযাচিতভাবে হুট করে মিডিয়ার সামনে সাকিব-তামিম দ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রকাশ করে ক্রিকেটারদের মনযোগে চিড় ধরিয়ে দেন। বাংলাদেশের ইনিংসের ‘চিত্রনাট্য’ অন্তত তাই বলে! সর্বোচ্চ ৫৮ রান্ এসেছে নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাট থেকে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করেন মাহমুদউল্লাহ ৩১। অধিনায়ক তামিম ইকবাল করেন ২৩ রান। এই হলো ব্যাটসম্যানদের বলার মত রান।
ব্যক্তিগত সংগ্রহ সংগ্রহ যখন অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখতে হয়, তখন সেখানে বড় জুটিও আশা করা যায় না। ৫০ রানের জুটি ছিল মাত্র একটি। পঞ্চম উইকেট জুটিতে নাজমুল ও মাহমুদউল্লাহ ১৩.২ ওভারে ৫৩ রান করেন। এ ছাড়া মুশফিক ও নাজমুল চতুর্থ উইকেট জুটিতে ১০.১ ওভারে ৪৪ রান যোগ করেন। তামিম ও লিটনের উদ্বোধনী জুটিতে ৪.৫ ওভারে ৩৩ রান করতে পেরেছিলেন।
বাংলাদেশ ৮ জন ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলতে নেমেছিল। এটি অবশ্য বাংলাদেশ সব সময়ই করে থাকে। লম্বা ব্যাটিং লাইনের কারণে বাংলাদেশ দল সাম্প্রতিক সময়ে এ রকম বেশ কয়েকবার ব্যাটিং ব্যর্থতায় পড়ার পরও সেখান থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছিল। এবার আর পারেনি। গোটা ইনিংসে ছক্কা হয়েছে মাত্র ৩টি। বাউন্ডারি সংখ্যা ছিল ১৭টি।
বাংলাদেশের ইনিংসে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জস বাটলার ৩ জনে করে পেসার ও স্পিনার ব্যবহার করেছেন। উইকেটও ভাগাভাগি করে নিয়েছেন দুই পক্ষই। পেসারা ৫টি, স্পিনাররা ৫টি। কিন্তু বাংলাদেশকে বেশি ভুগিয়েছেন দলের ৩ পেসার ক্রিস ওকস, জোফরা আর্চার ও মার্ক উড। প্রথম ২ জন ওভার প্রতি রান দিয়েছেন চারের নিচে। মার্ক উডের রান ছিল চারের উপরে। অপরদিকে স্পিনারদের মাঝে আদিল রশিদ পাঁচ, মঈন আলী চার ও নবগাত উইল জ্যাকস তিনের উপরে রান দেন।
বাংলাদেশের ইনিংসে যে এভাবে ২০৯ রানে গুটিয়ে যাবে, তা কিন্তু তামিম ও লিটনের সূচনায় ইঙ্গিত ছিল না। সেখানে সম্ভাবনা ছিল বড় সংগ্রহ করার। উদ্বোধনী জুটিতেই ৪.৫ ওভারে রান আসে ৩৩। ওভার প্রতি ছয়ের উপরে। তামিম ছিলেন একটু মারমুখী। লিটন ছিলেন আড়ালে। ছক্কা মেরে নিজের খোলস ছেড়ে বের হয়ে আসার ইঙ্গিত দিয়েই লিটন (১৫ বলে ৭ রান) ফিরে যান ক্রিস ওকসের বলে এলবিডব্লিউর শিকার হয়ে। নিজেকে বাঁচাতে রিভিউ নিয়েও রক্ষা হয়নি।
তামিম ও বিপিএলে ব্যাট হাত দরুণ ফর্মে থাকা নাজমুল জুটি গড়ে লম্বা করার আগেই ভাঙন আসে তামিমের বিচ্ছেদে। ৩২ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ২৩ রান করা তামিম ইকবাল উডের ১৪৯ কিলোমিটার গতির বলে পরাস্ত হন বোল্ড হয়ে। হঠাৎ করে বলটি লাফিয়ে উঠে। তামিম বুঝতেই পারেননি। তার কনুইয়ে লেগে বল গিয়ে স্ট্যাম্পে আঘাত হানে। দারুণ খেলতে থাকা তামিমের ইনিংসেরঅপমৃত্যু ঘটে।
মঈন আলীল বলে ফিল সল্টের হাতে ৮ রানে জীবন পাওয়া মুশফিক উইকেটে থিতু হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু ইনিংসকে টেনে নিয়ে যেতে পারেননি। আদিল রশিদকে উডকে ছক্কা মারতে গিয়ে তিনি মার্ক উডের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে আসেন ৩৪ বলে ১ ছক্কায় ১৬ রান করে। সাকিবও এসে টিকতে পারেননি বেশি সময়। মঈন আলীর বলে বোল্ড হয়ে যান ১২ বরে ১ চারে ৮ রান করে। এ সময় দলের রান ২২.৪ ওভারে ৪ উইকেটে ১০৬।
বাংলাদেশ কিছুটা চাপে। সেই চাপেকে মুক্ত করার প্রয়াস চলান নাজমুল ও মাহমুদউল্লাহ। দুই জনে বেশ সফলও হন। জুটিকে ৫০ রানও চরে আসে। কিন্তু তখনই জুটি ভাঙে। মাত্র ৩ রানের ব্যবধানে দুই জনেই ফিরে গেলে বাংলাদেশ চাপে পড়ে যায়। প্রথমে আউট হন নাজমুল। ৬৭ বলে ৫ চারে ১৬তম ম্যাচে প্রথম ওয়ানডে ফিফটি তুলে নেয়ার পর তিনি আউট হন রশিদের বলে তুলে মারতে গিয়ে শর্ট মিড উইকেটে জেসন রয়ের দারুন ক্যাচে পরিণত হয়ে। তার ৮২ বলে ৫৮ রানের ইনিংসে ছিল ৬টি বাউন্ডারি। ৩ রান পরে ফিরে যান মাহমুদউল্লাহও ৩ চারে ৪৮ বলে ৩১ রান করে উডের বলে উইকেটের পেছনে জস বাটলারের হাতে ধরা পড়ে।
অতীতে ধ্বংসস্তুপের মাঝে দাঁড়িয়ে আফিফ (৯)ও মিরাজ (৭) দলের ত্রাতা হয়ে উঠেছিলেন। এবার আর পারেননি। দলের রান তখন ৮ উইকেটে ১৮২। সেখান থেকে পরে দলের রান দুইশ অতিক্রম করে তাসকিন ১৪, তাইজুল ১০ রান করলে।
ইংল্যান্ডের মার্ক উড ৩৪,মঈন আলী ৩৫, জোফরা আর্চার ৩৭ ও আদিল রশিদ ৪৭ রানে নেন ২টি করে উইকেট। উইল জ্যাকস ১৬ ও ক্রিস ওকস ২৮ রানে নেন ১টি করে উইকেট।
এমপি/আরএ/