‘সাকিব-তামিম দ্বন্দ্ব’ মিডিয়া থেকে শোনা, বিসিবি সভাপতির ইউটার্ন
সাকিব-তামিম দ্বন্দ্ব নিয়ে ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ‘ক্রিকবাজ’কে দেওয়া বিষ্ফোরক সাক্ষাৎকারের ৭২ ঘণ্টা পান না হতেই বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ইউটার্ন দিয়েছেন। জানিয়েছেন তিনি নিজে কখনো দেখেননি সাকিব-তামিম সমস্যা। এটা তিনি মিডিয়া থেকে শুনেছেন।
সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) টিম হোটেলে খেলেয়াড়দের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান। এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ক্রিকেট অপারেশনস কমিটের চেয়ারমান জালাল ইউনুস। সভায় সাকিব আল হাসান উপস্থিত ছিলেন না।
সকালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেই অনুশীলন করলেও বিকালে একটি মুঠোফোন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তার কাজ থাকায় তিনি বিসিবি সভাপতিকে জানিয়ে অনুপস্থিত থাকেন।
প্রায় ঘণ্টা খানেকের মতো ক্রিকেটারদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বের হয়ে এসে নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘আজ থেকে তিন বছর আগেও আমি ড্রেসিং রুমে কোনও সমস্যা দেখিনি। তো আপনি ১৫ বছর থেকে ১২ বছর কাজ করে দেন। ঠিক আছে। লাস্ট ৩ বছর কিন্তু আমি টিমের সঙ্গে নেই। আগে আমি থাকতাম। টিম হোটেলে থাকতাম। সব কিছু করতাম। কাজেই এই যে কথাটা ড্রেসিং রুমের পরিবেশটা ভালো না। সাকিব আর তামিমের মাঝে সমস্যা। সব কিছু কিন্তু আমার বাইরে থেকে শোনা। সবচেয়ে বেশি মিডিয়া থেকে। মিডিয়ার লোকরাই বেশি বলে।’
একটি সূত্রে জানা গেছে ড্রেসিং রুমের খবর একটি বিদেশি সংবাদ মাধ্যমে এভাবে প্রকাশ করার পর দেশব্যাপী তুমুল সমালোচনা সৃষ্টি হয়। সাকিব-তামিমের দ্বন্দ্বের চেয়েও বেশি গুরুত্ব পায় ইংল্যান্ড সিরিজকে সামনে রেখে এভাবে অন্দর মহলের খবর প্রকাশ করাতে। এ নিয়ে বোর্ড সভাপতিও অনেক বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছিলেন। তাকেও নানা কথা শুনতে হয়েছে। তিনি নিজেও অনেকটা চাপে ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন অনেক কথা বলেছেন যেখানে ছিল বেশ গড়মিল ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
নাজমুল হাসান পাপন গত অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমি গত বিশ্বকাপে গিয়ে দেখেছি কোনো সমস্যা নেই। জালাল ভাই টিমের সঙ্গে ছিল। হয়েতো কিছু একটা আগে হয়েছে, তখন বলা হতো সাকিব আর তামিম বেস্ট ফ্রেন্ড। সবচেয়ে ক্লোজ। হঠাৎকরে ওদের মাঝে কিছু একটা হয়েছে। এখানে অস্বস্তিকর পরিবেশ। অস্বস্তিকর পরিবেশ বলতে অন্য যারা আছে ওরা কথা বলতে ভয় পায় সাকিব ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলব উনার দলে। আবার তামিম ভাইয়ের সঙ্গে কথা বললে ভাববে উনার দলে। আসলেতো ওরা কোনো দলের নয়। গেলে যে ওরা মাইন্ড করেছে এটা আমি শুনিনি।’
এরপর তিনি বলেন,‘গত বিশ্বকাপে আমি ব্যক্তিগতভাবে বসেছিলাম ওদের সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে। দুই জনেই আমাকে আস্বস্ত করেছে যাই থাক খেলায় এর কোনো প্রভাব পড়বে না।’
কিন্তু বাস্তবতা হলো গত বিশ্বকাপে তামিম ইকবাল দলের সঙ্গেই ছিলেন না। বিসিবি সভাপতি কথা বলার সময় একজন সাংবাদিক তাকে মনে করিয়ে দেন তামিম ইকবালের না থাকার বিষয়টি। তখন বিসিবি সভাপতি মাথা নেড়ে সম্মতি দেয়ার পরও তিনি দুই জনের সঙ্গে কথা বলার বিষয়টি বলেন।
আবার তিনি বলেছেন, বিষয়টি নিজে কখনো দেখেননি। মিডিয়া থেকে শুনা। কিন্তু তার কথায় তার প্রমান ছিল না। তিনি যে কথা বলেছেন, তা শুনে যে কারও মনে হবে তিনি সবই জানতেন এবং জেনে-শুনেই পদক্ষেপ নিয়েছেন। নিজের উপর দায় না নিতে তিনি মিডিয়ার উপর বিষয়টি চাপিয়ে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি প্রথম যে কাজটা করেছি গত বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়াতে ওখানে সব কিছু ছিল খুবই ভালো। আমি কিন্তু ড্রেসিংরুমে কোনও সমস্যা শুনিনি। এর আগের কথা আমি কিন্তু নিজে দেখিনি। আমি যে টা বলেছি তামিমও সেটা বলেছে। আমি ওদেরকে ডেকে বলেছি কথা বলেছি। দুই জনের মাঝে কোনও সমস্যা আছে কি না। দু্ই জনেই আমাকে নিশ্চিত করেছে খেলায় এর কোনো প্রভাব পড়বে না। যাই থাকুক খেলায় কোনও প্রভাব পড়বে না।’
এরপর তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু কথাটা এসেছে, এমন কোন মানুষ মিডিয়া জগতে নেই যারা জানে না। আমাকে এত লোকে প্রশ্নটা করেছে। ভেতরে ভেতরে আমার কাছে ভালো লাগছিল না। অস্বস্তিকর পরিবেশ, এমনকি খেলোড়দের জন্য। আমি এটা শেষ করে দিতে চেয়েছিলাম। এটার সঙ্গে খেলার কোনো সমস্যা নেই।’
সাংবাদিকরা যখনই কোনো প্রশ্ন করেছেন নাজমুল হাসান পাপনের কথায় ছিল গড়মিল। আবার তিনি দুই ক্রিকেটারের সমস্যা্ সমাধানের উপায় কী?
জবাবে তিনি বলেন, ‘আসলে সমস্যা কি তাইতো জানি না। সমস্যা জানলেতো এগুনো যায়। আমি তাদের কাছ থেকে জানতেও চাইনি কি সমস্যা্। আমি প্রথম যে কাজটা করেছিলাম যে ওরা আমাকে আস্বস্ত করেছে খেলায় এর কোনও প্রভাব পড়বে না। এটা হয়ে গেছে।’
দীর্ঘ বিরতির পর আবার সাকিব ও তামিম এক সঙ্গ মাঠে নামবে। এর প্রভাব কী মাঠে পড়বে কি না? এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,‘অনেক দিন পর দুই জনে আবার এক সঙ্গে খেলছে। আবার দেখার সুযোগ হবে। এর আগেতো সুযোগ পাইনি। ভারতের বিপক্ষে সিরিজে তামিম খেলেনি। সিনিয়র ক্রিকেটার অনেকেই টি-টোয়েন্টিট ছেড়ে দিল। আমার মনে হয় কোনো সমস্যা হবে না। ওরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ জায়গায় দায়ীত্বশীল। ম্যাচুউরড, পেশাদার। দলের ক্ষতি হয় এমন কিছু তারা করবে না।’
এমপি/এমএমএ/