চ্যাম্পিয়ন হতে সিলেটের মূলধন ১৭৫
দীর্ঘদিনের দীর্ঘশ্বাসের অবসান ঘটিয়ে সিলেট স্ট্রাইকার্স প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ফাইনাল খেলছে। ফাইনাল ম্যাচটি দেখতে সিলেট থেকে ঢাকায় এসেছে বাসভর্তি দর্শক। তাদের শিরোপা জয়ের আশা পূর্ণ হবে কি না তা পরের বিষয়। আপাতত টস হেরে ব্যাট করতে নেমে সিলেট সংগ্রহ করেছে ৭ উইকেটে ১৭৫ রান। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে সিলেটের এটিই সর্বোচ্চ রান। আগের দুইবার আগে ব্যাট করে তারা করেছিল ৭ উইকেটে ১৩৩ ও ১২৫।
সিলেটের এই সংগ্রহে অবদান মাত্র দুইজনের। মুশফিকের ৪৮ বলে অপরাজিত ৭৫ ও নাজমুল হোসেন শান্তর ৪৫ বলে ৬৪ রান। এ ছাড়া রায়ান বার্ল করেন ১৩ রান। আর কোনো ব্যাটার দুই অঙ্কের রান করতে পারেননি।
কুমিল্লার বিপক্ষে টানা তৃতীয়বার টস হেরে ব্যাট করতে নামার পর সিলেটের শুরুটা হয়েছিল দারুণ। আন্দ্রে রাসেলের ওভারে দুটি ওভার থ্রো থেকে ৯ রানসহ ১৮ রান তুলে নেয় সিলেট। শান্তর একাই ছিল ১৩। বাকি ৫ রান ছিল অতিরিক্ত। সিলেটের দর্শকদের তখন বাঁধভাঙা উল্লাস। কুমিল্লা শিবিরে পিনপতন নীরবতা। কিন্তু পরের ওভারেই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। ১৬ উইকেট নিয়ে সর্বাধিক উইকেটশিকারির লড়াইয়ে থাকা বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলাম তার প্রথম বলেই তোহিদ হৃদয়কে ০ রানে ফিরিয়ে দেন বোল্ড করে। অফ স্টাম্প বরাবর বল কিছুটা নিচু হয়ে আসলে হৃদয় আর উইকেট বাঁচাতে পারেননি। এই ওভারে রান আসে মাত্র ২। পরের ওভারে আবার উইকেট হারায় সিলেট। যথারীতি রান বাড়াতে তিনে নামেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। কিন্ত আজ আর সুবিধা করতে পারেননি। ৪ বলে ১ রান করে আন্দ্রে রাসেলের বলে ইমরুল কায়েসের হাতে সহজ ক্যাচ তুলে দেন।
পরপর দুই ওভারের ধাক্কা সিলেট ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে আর সেভাবে কাজে লাগাতে পারেনি। ২ উইকেটে সংগ্রহ করে ৪২ রান। প্রথম ওভারে ১৮ রান নেওয়ার পর, পরের ৫ ওভারে সংগ্রহ করে ২৪ রান। এসময় ৩৬ বলের ২৪ বল খেলে ৩২ রান করেন শান্ত। মুশফিকের রান ছিল ৬ বলে ২।
দুইজন উইকেট অক্ষত রেখে দলের রান বাড়ানোর চেষ্টা করেন। শান্ত অশান্ত হওয়ার চেষ্টা করলেও মুশফিক ছিলেন কিছুটা 'কুল'। ১০ ওভার শেষে সিলেটের রান ছিল ২ উইকেটে ৭৯। নাজমুল ৪৯, মুশফিক ২২। দুইজনের ৯.২ ওভারে ৭৯ রানের জুটিতে নাজমুল ৩৮ বলে চলতি বিপিএলে নিজের চতুর্থ হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন। তার আগে তিনি ৪০ রানের সময় ২০২০ সালে মুশফিকের এক আসরে করা ৩৯১ রান অতিক্রম করেন। ৪৮ রানের সময় বিপিএলের ইতিহাসে প্রথম ব্যাটার হিসেবে ৫০০ রান পূর্ণ করেন।
১০ ওভার পর সিলেটের রানের চাকা বাড়তে থাকে। প্রথম ৫০ রান যেখানে এসেছিল ৪৩ বলে, সেখানে পরের ৫০ রান আসে ২৭ বলে। হাফ সেঞ্চুরি করার পর শান্ত পুরোপুরি অশান্ত হয়ে উঠেন। মুকিদুলের ওভারে বিশাল এক ছক্কা মারেন। যা গিয়ে পড়ে গ্যালারিতে। সেই উন্মাদনা থেকেই তিনি আউট হয়ে যান মঈন আলীর নিচু হয়ে আসা বল বুঝতে না পেরে। ব্যাট নামিয়েও শেষ রক্ষা করতে পারেননি তিনি। শেষ হয় তার ৪৫ বলে ৯ চার ও ১ ছক্কায় ৬৪ রানের ইনিংস।
১০ ওভার পর শান্তর অশান্ত হয়ে উঠায় ১১তম ওভারে ১১, ১২তম ওভারে ১৫ রান আসে। পরের ওভারে শান্ত আউট হওয়ার পর রানের গতি কমে আসে। পরের দুই ওভারে রান আসে ৫ ও ৬। শুরুতে 'কুল' থাকা মুশফিক কুলনেস ভেঙে এগ্রেসিভ হয়ে উঠেন। যে কারণে মঈন আলীর করা ১৫তম ওভারে ১ ছক্কায় ১০ রান আদায় করেন। ১৫ ওভার শেষে সিলেটের রান ছিল ৩ উইকেটে ১২৫। মুশফিক ৩৩ বলে ৪৫ ও রায়ান বার্ল ৬ বলে ৬।
শেষ ৫ ওভারকে আরও কাজে লাগাতে মুশফিক ও বার্ল তৎপর হন। ১৬তম ওভারের প্রথম বলেই মোস্তাফিজকে চার মেরে শুরু করলেও শেষ বলে ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হয়ে যান ১১ বলে ১৩ রান করা বার্ল মোসাদ্দেকের হাতে ক্যাচ দিয়ে। রান আসে ৯। পরের ওভারে নারিনের বলে থিসারা পেরেরা কোনো রান না করে আউট হলেও মুশফিকের ২ বাউন্ডারিতে রান আসে ১০। মুশফিক হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৩৫ বলে ১ ছক্কা ও ৪ চারে। মোস্তাফিজের করা ১৮তম ওভারেও সিলেট উইকেট হারায় জর্জ লিন্ডের। পরপর ২ বলে জীবন পেয়ে তৃতীয়বার আর তাকে জীবন দেননি লিটন। ৬ বলে ৯ রান করেন তিনি। রান আসে ৮।
সুনিল নারিনের করা ১৯তম ওভার থেকে মুশফিক ১ ছক্কায় ১১ রান নেন। শেষ ওভারে জাকিরের (৪ বলে ১ রান) উইকেট হারিয়ে রান আসে ১২। মুশফিক ৪৮ বলে ৩ ছক্কা ও ৫ চারে ৭৫ রান করে অপরাজিত থাকেন। মোস্তাফিজ ৩১ রানে নেন ২ উইকেট। ১টি করে উইকেট নেন আন্দ্রে রাসেল, তানভীর ইসলাম, সুনিল নারিন ও মঈন আলী।
এমপি/এসজি