বিসিএল ওয়ানডে ফাইনাল
সেরা হওয়ার লড়াইয়ে নামবে মধ্যাঞ্চল-দক্ষিণাঞ্চল
বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ( বিসিএল) মানেই প্রথম শ্রেণির ম্যাচ। এবার সেখানে বিসিবি প্রথমবারের মতো শুরু করেছে লিষ্ট ‘এ’ ম্যাচ। চার দিনের আসর থেকে ওয়ানডে। শনিবার (১৪ জানুয়ারি) সেই ওয়ানডে আসরের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়ামে অংশ নেবে ওয়ালটন মধ্যাঞ্চল ও বিসিবি দক্ষিণাঞ্চল।
স্বাধীনতা কাপ ওয়ানডে আসরের ফাইনাল যেন প্রথম শ্রেণির আসরের ফাইনালেরই পুনরাবৃত্তি। সেই ফাইনালেও অংশ নিয়েছিল এই দুই দল। মিল শুধু এখানেই নয়। চার দিনের আসরে লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল এই দুই দল। একইভাবে ওয়ানডে আসরেরও শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল তারা। চার দিনে ম্যাচ ড্র করে দুই দল উঠেছিল ফাইনালে। এবার দক্ষিণাঞ্চল জয়ী হলেও ফাইনালে উঠেছে তারাই। দুইবার অন্য ম্যাচের দুই দলও মুখোমুখি হয়ে ফাইনালে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিল। চার দিনের ম্যাচে উত্তরাঞ্চল তিন দিনেই জিতে অপেক্ষায় ছিল। ওয়ানডে আসরে জয়ী হয়ে একইভাবে অপেক্ষা করেছিল পূর্বাঞ্চল। চার দিনের আসরে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মধ্যঞ্চল। এবার কে?
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি সফল ওয়ানডে ম্যাচে। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটে আবার সে রকম নেই কোনো ওয়ানডে আসর। একমাত্র আছে ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ। এবার সেই প্রিমিয়ার লিগ হয়েছে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। বিসিএলের ওয়ানডে সংস্করণের প্রথম আসরের সবচেয়ে বড় চমক ছিল নিউ জিল্যান্ড সফরে থাকা জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা ছাড়া বাকি সবাই খেলেছেন। যেখানে সাকিব-তামিম-মোস্তাফিজ-মাহমুদউল্লাহরা সবাই ছিলেন। তামিম ইকবালের পূর্বাঞ্চল ও মাহমুদউল্লাহর উত্তরাঞ্চল বিদায় নিয়েছে আসর থেকে। সাকিবের মধ্যাঞ্চল ফাইনালে উঠলেও সাকিবকে আগামীকাল পাওয়া যাবে না। কারণ সাকিবের সঙ্গে ওয়ালটন মধ্যাঞ্চলের কর্তাদের কথাই হয়েছিল দুই ম্যাচের জন্য। সাকিবকে দলের জন্য ‘ফ্যাক্ট’ উল্লেখ করে পূর্বাঞ্চলের দলপতি মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত বলেন, ‘সাকিব ভাই সবসময়ই একটা ফ্যাক্ট। শুধু ফ্যাক্ট না, সে যে দলে থাকবে, সে দল অন্যান্য দলের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে থাকবে।’
দুইটি ম্যাচ খেলে দুইটিতেই অলরাউন্ড নৈপুণ্য দেখিয়েছিলেন সাকিব। প্রথম ম্যাচে পূর্বাঞ্চলের বিপক্ষে ৩৫ রান ও বল হাতে ২ উইকেট এবং দ্বিতীয় ম্যাচে উত্তরাঞ্চলের বিপক্ষে ৩৩ রান ও ১ উইকেট পেয়েছিলেন। তাই সাকিবকে ছাড়া মোসাদ্দেকদের সামাল দিতে হবে দক্ষিণাঞ্চলের কাটার মাস্টার মোস্তাফিজকে। আগামীকাল মোস্তাফিজুর রহমানকে দেখা যাবে দক্ষিণাঞ্চলের হয়ে।
ফাইনালে উঠে আসার পথে দুই দলই দুইটি করে খেলায় জিতে এসেছিল। নেট রান রেটে মধ্যাঞ্চল পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে ছিল। মধ্যাঞ্চল লিগ পর্বে হারিয়েলি উত্তরাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলকে। আর মধ্যাঞ্চল হারিয়েছিল পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলকে।
ব্যাট হাতে দারুণ ফর্মে আছেন মধ্যাঞ্চলের দলপতি মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। ৩ ম্যাচে তার রান ১১৫। এক ম্যাচে হয়েছেন ম্যাচ সেরা। এ ছাড়া তিন ম্যাচে শতরানের উপরে আছে আব্দুল মজিদ ( ১০৭ রান)। দক্ষিণাঞ্চলের ব্যাট হাতে যারা রানে আছেন, তারা কেউই জাতীয় দলের নয়, তবে জাতীয় দলে ঢুকার জন্য লাইনে আছেন। অনূর্ধ্ব-১৯ শিরোপা জয়ী দলের সদস্য তৌহিদ হৃদয় ৩ ম্যাচে ১৪৩ রান করে আছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী। সবার উপরে পূর্বাঞ্চলের ইমরুল কায়েস (১৬৫)। দক্ষিণাঞ্চলের ওপেনার পিনাক ঘোষ ৩ ম্যাচে ১১০ রান করে আজ দলকে চ্যাম্পিয়ন করাতে আরেকবার ব্যাট হাতে সফল হওয়ার চেষ্টা করবেন।
বল হাতে ব্যবধান গড়ে দিতে পারেন দক্ষিণাঞ্চলের কাটার মাস্টার মোস্তাফিজ। ৩ ম্যাচে ৭ উইকেট নিয়ে পূর্বাঞ্চলের নাঈম হাসানের সঙ্গে যৌথভাবে আছেন শীর্ষে। ফাইনালে উঠার ম্যাচে তিনি একাই নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। এই কাটার মাস্টারকে নিয়ে পূর্বাঞ্চলের দলপতি মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত আলাদা কোনো পরিকল্পনাই করতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘মোস্তাফিজকে নিয়ে আলাদা কোনো পরিকল্পনা করতে পারবেন না। সবাই জানে মোস্তাফিজ এক্সেপশনাল। ওর কাজ ও করবেই, আমাদের কাজ থাকবে প্রক্রিয়া মেনে সেরা ক্রিকেট খেলা।’
শুধু মোস্তাফিজই নন, মধ্যাঞ্চলের ব্যাটসম্যানদের ছোবল মারার জন্য ৬ উইকেট নিয়ে মোস্তাফিজ-নাঈম হাসানের পরেই থাকা অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান। দক্ষিণাঞ্চলের ম্যানেজার জামাল বাবু বলেন, ‘আমরা চার দিনের ম্যাচে তাদের বিপক্ষে হেরেছি। এবার আমরা প্রস্তুতি নিয়ে নেমেছি। শেষ ম্যাচে তাদের হারিয়েছি। আমাদের মোস্তাফিজের মতো বোলার আছে। আশা করি চ্যাম্পিয়ন হবো।’
তবে বোলিংয়ে পিছিয়ে থাকবে না পূর্বাঞ্চলের বোলাররা। সৌম্য সরকার ব্যাট হাতে খুব একটা সফল হতে না পারলেও বল হাতে অনেকটাই সফল। ৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ৪ উইকেট করে আছে মোসাদ্দেক, মৃত্যুঞ্জয় চক্রবর্তী ও হাসান মুরাদের ঝুঁলিতে।
এমপি/এসআইএইচ