সব বাধা পেরিয়ে বিশ্বমঞ্চে আলো ছড়াচ্ছেন স্বর্ণা

দরিদ্র পরিবারের স্বর্ণা আক্তার। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি আলাদা ভালোবাসা তার। কিন্তু দারিদ্র্যতার ক্রিকেট জীবনের শুরুটা ভালো হয়নি স্বর্ণার। অভাব-অনটনের কারণে ক্রিকেট সরঞ্জাম কেনারও অবস্থা ছিল না তার। তবে পরিবারের সহযোগিতায় স্বপ্নপূরণের পথে পা বাড়ান স্বর্ণা। সব বাধা ডিঙিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে লাল-সবুজ জার্সিতে আলো ছড়াচ্ছেন স্বর্ণা।
বিশ্বকাপে গ্রুপপর্বের প্রথম তিন ম্যাচে ২৩*, ৫০* ও ২২ রানের ইনিংস খেলেন স্বর্ণা। প্রস্তুতি ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে খেলেন ৭৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। বিশ্বমঞ্চে স্বর্ণার এমন পারফরম্যান্সে খুশি জামালপুরবাসী। প্রশংসায় ভাসছেন তার মা-বাবাসহ পুরো পরিবার। স্বর্ণার গ্রামের বাড়ি জামালপুরে বইছে উৎসবের আমেজ।
বাদল হোসেন ও সনেখা বেগমের চার সন্তানের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ স্বর্ণা। পরিবারের কেউ ক্রিকেটার না হলেও ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটে মিশে ছিলেন তিনি। পড়ালেখাতেও বেশ মনোযোগী তিনি। স্থানীয় সিংহজানী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণিতে পড়েন।
ছোটবেলা থেকে ক্রিকেটপাগল স্বর্ণাকে খেলার সরঞ্জাম বানিয়ে দিতেন মা সনেখা বেগমই। মেয়ের ক্রিকেটের শুরুর গল্পটা তিনি শোনালেন এভাবে, ‘ছোট থেকেই স্বর্ণা নারিকেলের ডাগিয়া (পাতা ছাড়া ডালের অংশ) কিংবা ছোট কাঠ পাইলে ওইডা দিয়া খেলত। ওর ভাইরে (সজীব হোসেন) কইত বল আইনা দিত। এমন করেই ওর খেলা শুরু।’
মায়ের সহযোগিতা ও পরিবারকে পাশে পেয়ে এখন বিশ্বমঞ্চে লড়ছেন স্বর্ণা। তার ব্যাটে রানের ফোয়ারা দেখে উচ্ছ্বসিত ভাই সজীব। তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক খুশি। আমরা চাই আমাদের স্বর্ণা সব সময়ই ভালো খেলুক এবং বাংলাদেশ দল চ্যাম্পিয়ন হোক।’
এই ভাঙা ঘর থেকেই নারকেলের ডাগিয়ার ব্যাট হাতে সংগ্রাম শুরু করেছিলেন স্বর্ণা আক্তার। স্বর্ণাকে ঘিরে বড় স্বপ্ন তার পরিবারের। ভবিষ্যতে বোনকে জাতীয় দলে দেখতে চান ভাই সজীবও। সজীব বলেন, ‘স্বর্ণা বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পাক, আমরা এটাই চাই।’
স্বর্ণার বাবা বাদল হোসেন একসময় জামালপুর শহরের দয়াময়ী মোড়ে একটি সেলুনে নরসুন্দরের কাজ করতেন। এখন মাদারগঞ্জ পৌরসভায় একটি দোকানে কাজ করেন তিনি। মেয়েকে ঘিরে তার অনেক বড় স্বপ্ন। শুধু পরিবারই নয়, প্রতিবেশীরাও গর্বিত স্বর্ণার পারফরম্যান্সে।
প্রতিবেশী লিটন ও রাহাত জানান, অভাব-অনটনের সংসারে স্বর্ণারা কখনো ঠিকমতো খেতে পারেনি। যখন থেকে স্বর্ণা জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে ভালো খেলতে শুরু করেছে তখন থেকে ওর আয়ের টাকা-পয়সা দিয়ে বাসা ভাড়া পরিশোধ করেছে তার পরিবার। নিজেরাও ভালোমন্দ কিছু খাচ্ছে। স্বর্ণা দেশের সুনাম কুঁড়িয়ে আনছে। দরিদ্র স্বর্ণার পরিবারের দিকে সরকারের সুনজর প্রত্যাশা করছেন তারা।
এসজি
