স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের সেরা ক্রীড়াবিদ সাকিব
বাংলাদেশ ক্রীড়া সাংবাদিকদের প্রাচীনতম সংগঠন বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতির বিবেচনায় স্বাধীনতা পরবর্তি বাংলাদেশের সেরা ক্রীড়াবিদ হয়েছেন সাকিব আল হাসান। শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে মনোজ্ঞ ও ঝাকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে সাকিবের নাম ঘোষণা করেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন এআইপিএস এশিয়ার সভাপতি কোরিয়ার হি দং জং, পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপের ক্লাব বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান, বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতির সনৎ বাবলা, সাধারণ সম্পাদক সামন হোসেন।
সাকিবকে এই সম্মান দেয়া হয়েছে ক্রীড়া লেখক সমিতির ৬০ বছর পূর্তি তথা হিরক জয়ন্তিতে। সাকিবকে এই পুরষ্কার জিতে নিতে লড়াইয়ে শামিল হয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন খেলাধুলার এক একজন সেরা সেরা ক্রীড়াবিদরা। যারা বিভিন্ন সময় নিজ নিজ অঙ্গণে দেশের জন্য সম্মান বয়ে এনেছেন। কেউ কেউ ছিলেন বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ের মনি। যেমন সালাহউদ্দিন, মরহুম মোনেম মুন্নার মতো ফুটবলার যেমন ছিলেন এই তালিকায়, তেমনি ছিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। আবার ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম গ্রান্ড মাস্টার নিয়াজ মোর্শেদ। ছিলেন গলফার সিদ্দিকুর রহমান। তালিকায় নাম ছিল সাফ গেমসে বাংলাদেশের দ্রুততম মানব মরহুম শাহআলম। তিনি সড়ক দূর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন। একইভাবে ছিলেন ১৯৮৫ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাফ গেমস সাঁতারে বাংলাদেশের জেতা ৯ স্বর্ন পদকের ৫টি একাই জেতা মোশাররফ হোসেন খান। ছিলেন আরেক মোশাররফ হোসেন। তিনি ১৯৮৬ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসে বক্সিংয়ে ব্রোঞ্জ পদক জিতে এশিয়ান গেমসের ইতিহাসে পদক তালিকায় প্রথম বাংলাদেশের নাম লেখান তিনি। শুটিংয়ে বাংলাদেশকে অনেক সাফল্য এনে দেওয়া শুটার আসিফ হোসেন খানও ছিলেন এই তালিকায়।
একটি স্বতন্ত্র ও স্বাধীন বিচারক প্যানেলের মাধ্যমে ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাফল্য বিবেচনা করে এই ১০ জনের তালিকা বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতি আগেই প্রকাশ করেছিল। শুক্রবারের জমকালো আয়োজনে তাদের মাঝ থেকে ১ থেকে ১০ সেরার তালিকা করা হয়।
ক্রমান্বয়ে প্রথমে সাত জনের নাম ঘোষণা করা হয়। যেখানে গলফার সিদ্দিকুর রহমান দশম, বক্সার মোশাররফ হোসেন নবম, দ্রুততম মানব শাহ আলম অষ্টম, শুটার আসিফ হোসেন খান সপ্তম, জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা ষষ্ঠ, সাঁতারু মোশাররফ হোসেন খান পঞ্চম ও ফুটবলার মোনেম মুন্না চতুর্থ হন।
এরপর স্বাধীনতা পরবর্তী সেরা ক্রীড়াবিদ নেছে নিতে মঞ্চে ডেকে নেয়া হয় ফুটবলার কাজী সালাহউদ্দিন, দাবাড়ু নিয়াজ মোর্শেদ ও ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে। এ সময় নাম ঘোষণা করতে গিয়ে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বারবার বিব্রত হচ্ছিলেন। তিনি বলছিলেন, এখান থেকে একজনের নাম ঘোষণা করা আসলেই কঠিন। এ সময় এআইপিএসের সভাপতি হি দং জং তৃতীয় হিসেবে নিয়াজ মোর্শেদের নাম ঘোষণা করেন। এরপর ঘোষণা আসবে কে হয়েছেন সেরা। অবশেষে আর কোনও রকমের ভূমিকাতে না যেয়ে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল সাকিব আল হাসানের নাম ঘোষণা করেন। পুরস্কারপ্রাপ্ত সবাইকে একটি সুদৃশ্য ক্রেস্ট ও এক লাখ টাকা করে চেক প্রদান করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে পাকিস্তান একাদশের হয়ে কমনওয়েলথ একাদশের বিপক্ষে একটি ম্যাচে রকিবুল হাসান তার ব্যাটে ‘জয় বাংলা’ লিখে খেলতে নেমেছিলেন। তিনি একাধারে বীর মুক্তিযোদ্ধা, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক, ক্রীড়া সাংবাদিক, ম্যাচ রেফারিও। এই অনুষ্ঠানে তাকে দেওয়া হয় বিশেষ সম্মাননা। এ ছাড়া ১০ ক্রীড়া সাংবাদিক ও লেখককেও সম্মাননা জানানো হয় এই অনুষ্ঠানে। তারা হলেন প্রয়াত আব্দুল হামিদ, প্রয়াত তৌফিক আজিজ খান, প্রয়াত বদি-উজ-জামান, প্রয়াত আতাউল হক মল্লিক, মুহাম্মদ কামরুজ্জামান, আব্দুল তৌহিদ, মতিউর রহমান চৌধুরী, দিলু খন্দকার, শহিদুল আজম ও মোস্তফা মামুন। এদের সবাইকে সুদৃশ্য ক্রেস্ট ও ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক পুরস্কার দেয়া হয়।
বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতি এর আগে ২০১২ সালে সুবর্ন জয়ন্তিও পালন করেছিল ঘটা করে।
এমপি/এএস