এক মিনিটের রং বদলে বিশ্বকাপের সেরা ফাইনাল

শুরুতে সমালোচনা। তির্যক কথা। আয়োজনের নানা শঙ্কা। সফল সমাপ্তিতে বন্দনার স্বস্তি। যার শুরু আছে তার শেষও আছে। শুরু এবং শেষের মাঝে আয়োজনটা কেমন হয় তার উপর নির্ভর করে সফলতা। কাতার বিশ্বকাপ দেখিয়ে দিয়েছে কীভাবে নজরকাড়া আয়োজন করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেওয়া যায়। এই সফল আয়োজনের সব সমাপ্তি ছিল বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসে সেরা ফাইনাল খেলা উপহারের মাধ্যমে।
বিশ্বকাপ চলাকালীনই ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনু সংবাদ সম্মেলনে বেশ গর্ব করে বলেছিলেন, কাতার বিশ্বকাপ এ যাবৎকালের সেরা। সেই সেরার সমাপ্তি ফাইনাল খেলাটা কি একতরফা হতে পারে। সেখানে তো একটু রং বৈচিত্র্য লাগতেই হয়। সেই রং বৈচিত্র্যের সৃষ্টি হয়েছে ইতিহাসের সেরা ফাইনাল।
ফাইনাল খেলা শুরুর আগে সবাই ধারণা করেছিলেন আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্সের একটি জমজমাট আকর্ষণীয় ফাইনাল খেলা হবে, যা হৃদয়ের মানস পেটে ভাসতে থাকবে অনেকদিন। কিন্তু আর্জেন্টিনার একচেটিয়া দাপটের সামনে ফ্রান্সকে যেন খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছিল না। প্রথমার্ধেই মেসি ও ডি মারিয়া দেওয়া গোলে এগিয়ে থাকা আর্জেন্টিনা ৮০ মিনিটে পর্যন্ত লিড ধরে রেখেছিল। এসময় পর্যন্ত ফ্রান্সকে নিয়ে বলা যায় আর্জেন্টিনা একরকম ছেলে খেলায় খেলছিল। আর্জেন্টিনার গোলপোস্ট লক্ষ্য করে ফ্রান্স একটি মাত্র শট নিয়েছিল, যেটি তেমন বিপজ্জনক ছিল না। কর্নার ছিল একটি।
ফুটবল খেলায় এক মিনিটেরও ভরসা নেই। এক মিনিটেও হতে পারে দুই গোল। কিন্তু ফ্রান্স যেভাবে খেলছিল আর আর্জেন্টিনা এগিয়েছিল দুই গোলে, তাতে করে বাকি সময়ে ফ্রান্সের খেলায় ফিরে আসার সম্ভাবনা ছিল একেবারেই শূন্যের কোটায়। কিন্তু হঠাৎ করেই খেলার রং বদল হয়ে যায়। পেনাল্টি থেকে একটি গোল করে এমবাপে ব্যবধান কমিয়ে আনেন ২-১। পরের মিনিটেই দুরন্ত এক আক্রমণ থেকে এমবাপের দর্শনীয় এক গোলে খেলার সমতা। কিছুক্ষণ আগে যে স্টেডিয়ামে আকাশী সাদা জার্সিধারীদের শব্দে ছিল উত্তাল, সেখানে নেমে আসে পিন পতন নীরবতা। জেগে উঠে নীল জার্সিধারী ফ্রান্সের দর্শকদের আওয়াজ। অনেকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। বিশ্বাস না করারই কথা। যে দলকে মাঠে খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছিল না, তারাই কি না এক মিনিটে দুই গোল পরিশোধ করে দেয়। একতরফা খেলায় জেগে উঠে উত্তেজনা। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ফ্রান্স। মুহুর্মুহু আক্রমণে আর্জেন্টিনার রক্ষণকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলেন ফ্রান্সের খেলোয়াড়রা। পাল্টা আক্রমণে যায় আর্জেন্টিনাও। এভাবেই শেষ হয় নির্ধারিত সময়।
কিন্তু এখানেই শেষ হয়নি চিত্রনাট্য। এটা ছিল শুরু। অতিরিক্ত সময়ের জন্য অবশিষ্ট ছিল বাকিটুকু। অতিরিক্ত সময় ৩০ মিনিটে খেলা হয়ে উঠে আরও প্রাণবন্ত। আক্রমণ পাল্টা আক্রমণে হৃদপিণ্ড উঠানামা বেড়ে যায় সমর্থকদের। অনেকেই টেনশন নিতে না পেরে টিভির সামনে থেকে উঠে যান। এরা ছিলেন আর্জেন্টিনার সাপোর্টার। ১০৮ মিনিটে মেসির গোলে আর্জেন্টিনা শিবিরের স্বস্তি এনে দিলেও ১১৮ মিনিটে পেনাল্টি থেকে এমবাপে আবারও গোল করায় খেলার সমতা আসে ৩-৩। শেষ হয়ে অতিরিক্ত সময়ের খেলা। গড়ে ইতিহাসের সেরা ফাইনাল।
বিবিসির লাইভে থাকা ইংল্যান্ডের স্ট্রাইকার গ্যারি লিনেকার বলেন, এটি ইতিহাসের সেরা ফাইনাল।
এমপি/এসজি
