কাতার থেকে বাংলাদেশ: ফাইনালে উৎসবের রং
বিশ্বকাপ ফুটবলে খেলার দিক দিয়ে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল-জামার্নি-ফ্রান্স-ইতালি-ইংল্যান্ড অনেক এগিয়ে। এইসব দেশের মাঝে আবার আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বি। নিজ নিজ দেশের সমর্থকরা ছাড়াও অন্য দেশের দর্শকদের হৃদয়ের মনিকোঠায়ও দুইটি দল জায়গা করে নিয়েছে আপন যোগ্যতায়। কিন্তু নিজ দেশ না খেলার পরও সমর্থনের দিক দিয়ে কোন দেশ এগিয়ে? আবেগের বহিঃপ্রকাশ নানাভাবে নানা রঙে ঘটাতে কোন দেশ এগিয়ে? এ রকম প্রশ্ন করা হলে সবার আগে চলে আসবে বাংলাদেশের নাম। বাংলাদেশের মানুষের বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে পাগলামি ফিফারও নজর কেড়েছে। তাদের ওয়েব সাইটেও জায়গা করে নিয়েছে।
বিশ্বে সম্ভবত বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে সমর্থিত দেশের পাতাকা উড়িয়ে থাকে পাল্লা দিয়ে। বিশেষ করে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের। এই দুই দেশের জার্সিও বিক্রি হয় ব্যাপক। তারপর দুই দলের খেলার দিন থাকে বিশেষ আয়োজন। মাঠে বসে খেলা দেখতেও ছুটে যান অনেকেই। সেটা হোক রাশিয়া কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকা, অথবা ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা-যুক্তরাষ্ট্রে। খেলার দেখার জন্য বাংলাদেশের মানুষ ছুটে যান সেখানে। এবার কাতার বিশ্বকাপ সেই হিসেবে যেন পাশের বাড়ি। যারা আগে কখনই মাঠে বসে খেলা দেখেননি, তারাও এবার সেই সুযোগ নিয়েছেন। কেউবা গ্রুপ পর্বের খেলা দেখেছেন। কেউ কেউ নকআউট পর্বের। আবার কেউ কেউ সেমি ফাইনাল আর ফাইনাল দেখতে বর্তমানে কাতারে অবস্থান করছেন।
এমনই একজন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেডের পরিচালক মাসুদ-উজ-জামান। সেমি ফাইনালের পর ফাইনাল খেলাও তিনি মাঠ বসে দেখবেন। আর্জেন্টিনার একনিষ্ঠ সমর্থক। মেসি আছে তার হৃদয়ে মিশে। তিনি বলেন, ‘দুইটা শক্ত দল। মাঝ মাঠে বোঝাপড়ায় আর্জেন্টিনা কিছুটা এগিয়ে। দুই দলের রক্ষণভাগ শক্তিশালী। আমি আর্জেন্টিনার সমর্থক। আশা করি আর্জেন্টিনা জিতবে। মেসির হাতে উঠবে বিশ্বকাপ। এটা শুধু আমার চাওয়া না, ফুটবল বিশ্বের অধিকাংশ মানুষেরই চাওয়া।’
মেসিকে নিয়ে তিনি বলেন, ‘সেমি ফাইনালে মাঠে বসে দেখেছি মেসির খেলা। কী চোখ জুড়ানো খেলা। তার মতো খেলোয়াড়ের হাতে বিশ্বকাপের ট্রফি দেখলে খুবই ভালো লাগবে। শিরোপা জিততে হলে মেসিকেই তার মতো করে জ্বলে উঠতে হবে। আমার বিশ্বাস মেসির হাতে শিরোপা উঠার পাশাপাশি গোল্ডেন বল আর গোল্ডেন বুট দুইটিই জিতবে সে। এ রকম হলে মেসির শেষ বিশ্বকাপটা হবে রঙিন। তা দেখার জন্যই সুদূর বাংলাদেশ থেকে এসেছি।’
বিসিবির সাবেক পরিচালক খন্দকার জামিল উদ্দিন ব্রাজিলের পাঁড় সাপোর্টার। কাতার বিশ্বকাপ তিনি দেখতে গিয়েছিলেন ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার সেমি ফাইনাল দেখতে। তারপর দেখবেন ফাইনাল। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার কাছে হেরে ব্রাজিল সেমিতে উঠাতে পারেনি। এরপর খন্দকার জামিল উদ্দিন হয়ে উঠেছেন আর্জেন্টিনার সাপোর্টার আর মেসির ভক্ত। সেমি ফাইনাল খেলা দেখছেন আর্জেন্টিনার জার্সি পরেই। তিনি বলেন, ‘ব্রাজিল হেরে যাওয়াতে আমার প্রত্যাশা এখন আর্জেন্টিনাকে নিয়ে। আমি আশা করি মেসির হাতেই কাপ উঠবে।’
এদিকে ফাইনাল খেলাকে ঘিরে বাংলাদেশে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। আজ সারাদিনই আলোচনার বিষয় ছিল ফাইনাল খেলা। অধিকাংশেরই চাওয়া মেসির আর্জেন্টিনার হাতে উঠবে শিরোপা। ফাইনাল খেলা দেখার জন্য নানা জায়গায় নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে এমনিতেই উৎসবের আমেজে খেলা দেখা হচ্ছে। ফাইনাল খেলা আর মেসির আর্জেন্টিনা ফাইনাল খেলাতে সেখানে বিরাজ করছে বাড়তি উন্মাদনা। বিভিন্ন পাড়-মহল্লায় খেলার দেখার ফাঁকে ভুরি ভুজেরও বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। অনেক জায়গায় গরুর মাংস কিনতে গিয়ে না পেয়ে অনেকেই ফিরে গেছেন।
ফাইনালের দিন এসেও আর্জেন্টিনার জার্সি অনেক বিক্রি হচ্ছে। গুলিস্তান এলাকাতে বিক্রেতারা মূল্য ছাড় দিয়েছেন অনেক। কেউ কেউ মেসির প্রতিকৃতি বানিয়ে সেখানে তার ছবি জুড়ে দিয়েছেন। ফাইনাল খেলা দেখার সময় এটিও তারা উপভোগ করবেন। কাওরান বাজারের চা বিক্রেতা সোহাগ জানান, আজ সারাদিন তার দোকানে যারাই চা পান করেছেন তাদের আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল শুধুই ফাইনাল খেলা আর আর্জেন্টিনা-মেসিকে নিয়ে।
এমপি/এসএন