গোল্ডেন বুট কার: মেসি, এমবাপ্পে না অন্য কারও?
বিশ্বকাপ ফুটবলে আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্সের এবারের ফাইনাল ম্যাচ অন্যরকম একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চলেছে। দুই দল শিরোপা লড়াইয়ে অবতীর্ণ হওয়ার পাশাপাশি দুই দলের দুইজন করে চারজন খেলোয়াড় অবতীর্ণ হয়েছেন গোল্ডেন বুট জেতার লড়াইয়ে।
পাঁচ গোল করে এ লড়াইয়ে এগিয়ে আছেন আর্জেন্টিনার মেসি ও ফ্রান্সের এমবাপ্পে। এর পরেই চার গোল করে লড়াইয়ে আছেন আর্জেন্টিনার আলভারেজ ও ফ্রান্সের
জিরোড। এরকম ঘটনা বিশ্বকাপ ফুটবলে বিরল।
বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসে দেখা গেছে ফাইনালে দুই দল খেললেও সেখানে গোল্ডেন বুটের লড়াইয়ে দুই দলের কেউই নেই। যেমন, ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপ ফাইনালে খেলেছে ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়া কিন্তু তার আগেই ছয় গোল করে অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায় ইংল্যান্ডের হ্যারিকেনের গোল্ডেন বুট জেতা।
বিশ্বকাপ ফুটবলের আগের ২১টি আসরের পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যায়, দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সঙ্গে গোল্ডেন বুট জেতা খেলোয়াড়— এমন নজির মাত্র তিন তিনটি।
১৯৩০ সালে আসর শুরু হওয়ার পর এই নজির প্রথম স্থাপিত হয় ১৯৭৮ সালে। চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আর্জেন্টিনা। ছয় গোল করে গোল্ডেন বুট জিতেছিলেন দলটির স্ট্রাইকার মারিও ক্যাম্পাস। পরের আসরে একই দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ইতালির হয়ে ছয় গোল করা পাওলো রশি। ২০ বছর পর ২০০২ সালে কোরিয়া-জাপানে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের আসরে ব্রাজিলের রোনালদো স্থাপন করেন তৃতীয় দৃষ্টান্ত। রোনালদো করেছিলেন ৮ গোল।
কাতার বিশ্বকাপের সামনে দাঁড়িয়ে আর্জেন্টিনা- ফ্রান্সের চার খেলোয়াড় মেসি-আলভারেজ ও এমবাপে-জিরোড। যে দলই চ্যাম্পিয়ন হোক না কেন গোল্ডেন বুট এই দুই দলের বাইরে যাচ্ছে না। এমনও হতে পারে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে একদল কিন্তু মেসি কিংবা এমবাপ্পে কোনো গোল না করায় গোল্ডেন বুট জিতেছেন যৌথভাবে। আবার এ দুজনকে টপকে আলভারেজ কিম্বা জিরোডও জিতে নিতে পারেন গোল্ডেন বুট। অন্য হিসাবও আছে। দেখা গেল গোল্ডেন বুট জিতেছে একজন কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হয়েছে অন্য দল।
মেসি ও এমবাপ্পে পাঁচ গোল করে এগিয়ে থাকলেও জিরোড ও আলভারেজকে পিছিয়ে রাখার কোনো অবকাশ নেই।
পাঁচটি করে গোল করে মেসি ও এমবাপ্পে এগিয়ে থাকলেও এখানে এককভাবে এগিয়ে থাকতে পারতেন মেসি যদি তিনি পোল্যান্ডের বিপক্ষে পেনাল্টি থেকে গোল মিস না করতেন। এই একটি ম্যাচ ছাড়া মেসি বাকি পাঁচটি ম্যাচেই একটি করে গোল করেছেন। তার প্রতিপক্ষ ছিল সৌদি আরব, মেক্সিকো গ্রুপ পর্বে এবং নকআউট পর্বে অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস ও ক্রোয়েশিয়া।
এমবাপ্পের পাঁচ গোল এসেছে তিন ম্যাচ থেকে প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এক গোল করার পর দ্বিতীয় ম্যাচে ডেনমার্কের বিপক্ষে তিনি করেছিলেন দুই গোল। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে তিউনিসিয়ার বিপক্ষে এমবাপ্পে কোনো গোল পাননি। নকআউট পর্বে আবার পোল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি দুই গোল করেন। কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ড ও সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে কোনো গোল করতে পারেননি।
আলভারেজ চার ম্যাচে করেছেন চার গোল। গ্রুপ পর্বে সৌদি আরব ও মেক্সিকোর বিপক্ষে ম্যাচে তিনি সেরা একাদশে ছিলেন না, এমনকি বদলি হিসেবেও। পোল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম মাঠে নামেন সেরা একাদশে থেকেই। নেমেই নজর করেন। গোলও করেন একটি। নকআউট পর্বে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে মেসির সঙ্গে আলভারেজের গোলও ছিল একটি। কোয়াটার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে আলভারেজ কোনো গোল পাননি। ফাইনালে উঠার পথে সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে তিনি করেন আবার দুই গোল।
ফ্রান্সের হয়ে প্রতিটি ম্যাচই মাঠে নেমেছে জিরোড। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই তার কাছ থেকে এসেছিল দলের দ্বিতীয় গোল। গ্রুপ পর্বে পরের দুই ম্যাচে তিনি আর কোনো গোল পাননি। নকআউট পর্বে পোল্যান্ডের বিপক্ষে এমবাপ্পে দুই গোল করার আগে প্রথম গোল করেছিলেন জিরোডই। কোয়াটার ফাইনালে শক্তিশালী ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও তিনি গোল করেন একটি। সেমিফাইনালে আবার মরক্কোর বিপক্ষে তিনি কোনো গোল পাননি।
এখন অপেক্ষার পালা গোল্ডেন বুটের মালিক হবেন কে?
এমপি/আরএ/