শূন্য হাতে ফিরছে না বাংলাদেশ
প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির যোগসূত্র স্থাপন হয়নি। মাউন্ট মাঙ্গানুইয়ে ৮ উইকেটে ম্যাচ জিতে ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দেওয়ার পর ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট নিয়ে বাংলাদেশকে নিয়ে অনেক আশার জন্ম নিয়েছিল। কোনো রকমের রাখঢাক না করেই সরাসরি জয়ের কথা বলা হয়েছিল দলের পক্ষ থেকে। সেই আলোকে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার কথা।
কিন্তু বাস্তবে সেখানে ছিল বিরাট শূন্যতা। কোনো রকমের লড়াই করতে পারেনি বাংলাদেশ দল। হেরেছে তিন দিনে ইনিংস ও ১১৭ রানে। ফিরে গেছে নিজেদের চিরচেনা রূপে।
এ ম্যাচ শেষে দলনেতা মুমিনুল হক বলেন, ‘প্রথম টেস্ট জয়ের পর দ্বিতীয় টেস্টটা আমাদের জন্য ছিল খুব চ্যালেঞ্জিং। প্রথম টেস্টের ফলাফল নিয়ে আমি সত্যিই খুশি, কিন্তু দ্বিতীয় টেস্ট হতাশাজনক ছিল। প্রথম টেস্ট জয়ের পর মোমেন্টাম ধরে রাখা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল। বিদেশের মাটিতে খেলা পুরোপুরি নির্ভর করে মানসিকতা, ভাবনা এগুলোর উপর।’
দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশ ভালো করতে না পারলেও ফিরছে না শূন্য হাতে। অর্জনের তহবিলে আগেই জমা হয়েছে প্রথম টেস্ট জয়। এই জয়ের তাৎপর্য অনেক। নিউ জিল্যান্ডের মাটিতেই নিউ জিল্যান্ডকে হারানো সহজ ছিল না। তারপর যেখানে বাংলাদেশ দল তিন ফরম্যাটে আগের ৩২ ম্যাচের একটিতেও জয়, এমন কি ড্র পর্যন্ত ছিল না। দলপতি মুমিনুলকে এই অর্জনেই গর্বিত করে তুলেছে।
তিনি বলেন, ‘প্রথম টেস্ট জয়ের পর আমি প্রচণ্ড আনন্দিত ও গর্বিত। এই সিরিজে আমাদের অনেক ভালো ও ইতিবাচক দিক আছে। এবাদত সত্যিই ভালো বোলিং করেছে, আর লিটনও দারুণ খেলেছে। যখন সে ব্যাটিং করেছে, তখন এটাকে কঠিন পিচ বলে মনে হয়নি।’
তিনি আরও কিছু ইতিবাচক দিক তুলে ধরে বলেন, ‘ইতিবাচক তো অনেক কিছুই আছে। প্রথম টেস্ট যদি দেখেন, আমি সব সময় সংবাদ সম্মেলনে বলি, আমাদের দলীয় ফল তখনই ভালো হয়, যখন আমরা সম্মিলিতভাবে ভালো খেলি। সেটা ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং যাই বলেন। আমার মনে হয়, এটা একটা ইতিবাচক ব্যাপার ছিল।’
এই সফরের পর মুমিনুল মনে করেন এখন থেকে দেশের বাইরে তাদের সফরগুলো হবে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। বাংলাদেশ দলকে প্রতিপক্ষ দলগুলোর দৃষ্টিভঙ্গিও পরিবর্তন হবে। হালকা করে দেখার অবকাশ থাকবে না।
তিনি বলেন, ‘এই সিরিজের পর আমি মনে করি আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ আরও অপেক্ষা করছে। আগে আমরা যখন বিদেশে টেস্ট খেলতে যেতাম, তখন সবাই ধরেই নিত, আমরা হারব। খুব একটা ভালো করতে পারব না। কিন্তু নিউ জিল্যান্ড সিরিজের পর এই ব্যাপারটা বদলে যাবে, সবাই সচেতন হয়ে যাবে। সামনে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ আছে, শ্রীলঙ্কা সিরিজ আছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজে খেলা আছে। আমার মনে হয় কাজটা কঠিন হয়ে গেল।’
প্রথম টেস্ট জয়ে দলের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে জানিয়ে মুমিনুল বলেন, ‘প্রথম টেস্ট জেতা খুবই দরকার ছিল। এখন সবাই বিশ্বাস করতে পারছি, আমাদের সামর্থ্য আছে। বিদেশে গিয়ে টেস্ট ম্যাচ জেতা যায়। এখন একটা টেস্ট জিতলাম, পরে আরেকটা টেস্ট জিতব, এভাবে এক সময় আমরা সিরিজ জিতব। তো ওই বিশ্বাসটা মনে হয়, সবার ভেতরে আনা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। প্রথম টেস্ট জেতাতে মনে হয় ওই বিশ্বাসটা সবার ভেতরে এসেছে।
মুমিনুল জানান এই অর্জনের পর টেস্ট দল নিয়ে এখনো অনেক কাজ করার বাকি আছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের টেস্ট দল নিয়ে তো কাজের অনেক বাকি আছে। উন্নতির তো অনেক কিছুই বাকি আছে। অনেক কিছু করা যাবে। আপনারা জানেন, আমি খুব কঠিন সময়ে নেতৃত্ব পেয়েছিলাম। তখন তো আমি স্বপ্ন দেখতাম বড় দলের বিপক্ষে ম্যাচ জেতার। মানুষ কোনো কিছু বিশ্বাস করে সেটা করে দেখানোর জন্য। আমাদের বিশ্বাস করার জন্য একটা ফল দরকার ছিল, অন্তত সবাই বিশ্বাস করবে যে, আমরা পারি।’
নিউ জিল্যান্ডে এই অর্জন ছিল খুবই বাজে সময়ে। ঘরের মাঠে পাকিস্তানের কাছে বাজেভাবে সিরিজ হারের পর। তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য অসাধারণ এক অর্জন। দেশের বাইরে আমরা তেমন ভালো করি না। সেদিক থেকে এই জয়টা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এই মোমেন্টাম ধরে রাখতে চাই।’
এমপি/এমএমএ/