মেসি-আলভারেজের গোলে প্রথমার্ধ আর্জেন্টিনার

দোহার লুসাইল স্টেডিয়ামের রাতের আকাশ ধারন করেছে আকাশি রঙে। আর্জেন্টাইন দর্শকদের গগনবিদারী আওয়াজে মুখরিত। আর মুখরিত হবেই না কেন? তাদের প্রিয় দল আর্জেন্টিনা যে প্রথমার্ধেই এগিয়ে গেছে ২-০ গোলে। ফুটবল বিশ্বের খুদে যাদুকর মেসির হাতে শিরোপা উঠতে সেমির বাঁধা অতিক্রমের পথে আর্জেন্টিনা এখন বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে। প্রয়োজন এই দুই গোল ধরে রাখা।
সেমিতে আর্জেন্টিনা কখনই হারেনি। এই ধারনা সত্য প্রমাণ করতে মেসি নিজেই করেছেন প্রথম গোল। গোলটি ছিল পেনাল্টি থেকে। পরেরটি আসে আলভারেজের পা থেকে। দুইটি গোলের মাঝে সময়ের ব্যবধান ছিল মাত্র পাঁচ মিনিট।
প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনা ২-০ গোলে এগিয়ে থাকলেও প্রথম ২০ মিনিট কিন্তু তাদের খোঁজেই পাওয়া যায়নি। বলের নিয়ন্ত্রণ ছিল ক্রোয়েশিয়ার খেলোয়াড়দের পায়েই বেশি। যদিও এ সময় তারা কোনও সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। আর্জেন্টিনাও পারেনি কোনও সুযোগ সৃষ্টি করতে।
আর্জেন্টিনা ৪-৪-২ এবং ক্রোয়েশিয়া ৪-৩-৩ পদ্ধতিতে খেলা শুরু করে। প্রথম ১০ মিনিট কোন দলই গোছালো কোনও আক্রমণ গড়ে তুলতে পারেনি। নিজেদের মাঝে আল-প্রদানেই সীমাবদ্ধ ছিল এই সময়।কোনও কর্ণার হয়নি। কোনও অফসাইড হয়নি। গোল পোষ্ট করে কোনও শটও নিতে পারেনিকোনও দল। বল পজিশনে ক্রোয়েশিয়া এগিয়ে ছিল । তাদের দখলে ছিল শতকার ৫৫ শতাংশ। আর্জেন্টিনার দখলে ছিল ৪৫ শতাংশ। ক্রোয়েশিয়া পাসদিয়েছে ৫৫ টি। আর্জেন্টিনা ৪০টি।
পরের ১০ মিনিটে গিয়ে প্রথম কর্ণার পায় ক্রোয়েশিয়া। এ সময় বল দখলে তাদের পজিশনও বেড়ে যায়। তাদের দখলে ছিল শতকরা ৬৫ ভাগ। আর্জেন্টিনার কমে আসে ৩৫ ভাগে। এ সময় আর্জেন্টিনার সীমনায় বল ছিল বেশি। আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়রা নিজেদের পায়ে বল রাখতেই পারছিলেন না। বল নিজেদের মাঝে আদান-প্রদান করতে গিয়ে তারা বলের নিয়ন্ত্রণ হারান। ক্রোয়েশিয়ার খেলোয়াড়রা বল কেড়ে নিয়ে যান। এই সময় পর্যন্ত দুই দলের গোলরক্ষকেই বল ধরতে হয়নি।
২১ থেকে ৩০ মিনিট আবার আর্জেন্টিনা নিজেদের খেলায় ফিরিয়ে আনে। বলের দখলও বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩ ভাগে। মেসিকেও বিপজ্জনকভাবে বল নিয়ে ভেতরে ডুকার চেষ্টা করতে দেখা গেছে। ২৪ মিনিটে গোলপোষ্ট লক্ষ্য করে প্রথম শটও নেয় আর্জেন্টিনা। বক্সের উপর থেকে ফার্নান্দেজের ডান পায়ের শট গোলরক্ষক লিভাকোভিচ ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে রক্ষা করেন।
২০ মিনিট পর আর্জেন্টিনা ধীরে ধীরে যে খেলায় ফির আসছিল তার পুরো ফায়দা তুলে নেয় ৩১ থেকে ৪০ মিনিটে। এ সময় তারা দু্ইটি গোলও আদায় করে নেয়। প্রথমটি পেনাল্টি থেকে মেসি, পরেরটি আলভারেজ।
৩২ মিনিটে পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা। মাঝ মাঠ থেকে উড়ে আসা বল ফাঁকায় পেয়ে যান আলভারেজ। বিপদ বুঝে পোষ্ট ছেড়ে বের হয়ে আসনে গোলরক্ষক লিভাকোভিচ। কিন্তু আলভারেজ ঠিকই গোলরক্ষকে ফাঁকি দিয়ে বল জালের দিকে ঠেলে দেন। কিন্তু লিভাকোভিচ মারাত্বকভাবে ফাউল করেন আলভারেজকে। রেফারি দেন পেনাল্টির নিদের্শ। এদিক আলভারেজের ঠেলে দেয়া বল জালে প্রবেশের আগে রক্ষণের একজন খেলোয়াড় এসে বিপদমুক্তও করেন। পরে ৩৪ পেনাল্টি থেকে মেসি নিশানাভেদ করেন। তিনি যখন পেনাল্টি শট নিচ্ছিলেন, তখন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক ইমি মার্টিনেজ টেনশনে মুখ ঘুরিয়ে নিজেদের পোষ্টের দিকে থাকিয়ে থাকেন। এবারের আসরে মেসির এটি ছিল পঞ্চম গোল। এই গোলের রেশ কাটতেনা কাটতেই আর্জেন্টিনা দ্বিতীয় গোল পেয়ে যায় আলভারেজের মাধ্যমে। ৩৯ মিনিটে নিজেদের সীমান থেকে গড়ে উঠে আক্রমণ। সেই আক্রমণ থেকে আলভারেজ মধ্য মাঠ থেকে বলের নিয়ন্ত্রণ নেন। তারপর ডুকতে থাকেন এককভাবে। এ সময় দলের দুই জন খেলোয়াড় দুই দিক দিয়ে জায়গা করে নেন। আর আলভারেজকে আটকানোর জন্য ক্রোয়েশিয়ার দুই জন খেলোয়াড় ছুটতে থাকেন। কিন্তু তাকে আটকে রাখা সম্ভব হয়নি। এই দুই জনকে পরাস্ত করে পরে গোলরক্ষকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন। ৪১ মনিটে আর্জেন্টিনার তৃতীয় গোল না হওয়া ছিল দুভার্গ্য জনক। মেসির কর্ণার থেকে নিকোলাস টাগলিয়াফিকোর হেড গোলে প্রবেশের মুহুর্তে গোলক্ষক লিভাকোভিচ বাম দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে রক্ষা করেন।
এমপি/এএস
