নেইমার-রোনালদো পারেননি, মেসি কি পারবেন?
বিশ্বকাপ ফুটবলে জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে সবার শীর্ষে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল। এই দু'দলের ধারে-কাছেও নেই আর কোনো দল। ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের দিক দিয়েও জনপ্রিয়তার শীর্ষে এই দুই দেশের দুই খেলোয়াড় নেইমার ও লিওনেল মেসি। কিন্তু এখানে তাদের সমান জনপ্রিয়তা আছে পর্তুগালের রোনালদোরও। নৈপুণ্য আর জনপ্রিয়তায় কেউ কারও থেকে কম নয়। তিনটি দলই এই তিন খেলোয়াড়ের উপর একটু বেশিই নির্ভরশীল। তিনটি দলই শিরোপা প্রত্যাশী।
নেইমারের জন্য না হলেও মেসি-রোনালদোর জন্য এবার শেষ বিশ্বকাপ। নেইমারের বয়স ৩০। ফর্ম ধরে রাখতে পারলে তার পক্ষে পরবর্তী দুইটি না হলেও একটি বিশ্বকাপ খেলা সম্ভব। মেসির বয়স ৩৫। এটিই তার শেষ বিশ্বকাপ। রোনালদোর বয়স ৩৭। তার পক্ষে আর বিশ্বকাপ খেলা সম্ভব নয়। কিন্তু ইতোমধ্যে স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে নেইমার ও রোনালদোর। এখনো টিকে আছেন মেসি। পারবেন কি তিনি শেষ পর্যন্ত চূড়ায় উঠতে?
নেইমার-রোনালদো ভক্তদের জন্য শুক্র ও শনি এই দুটি রাত ছিল কালোরাত। শুক্রবার নেইমারের দল ও শনিবার রোনারদোল দল কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নেয়। ব্রাজিল টাইব্রেকারে ক্রোয়েশিয়ার কাছে এবং পর্তুগাল আফ্রিকার প্রতিনিধি প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা মরক্কোর কাছে হেরে বিদায় নেয়। বিপরীতে মেসির আর্জেন্টিনা টাইব্রেকারে হার মানায় নেদারল্যান্ডসকে।
মেসি-নেইমার-রোনালদো তিনজন জগদ্বিখ্যাত ফুটবলার হলেও এবারের বিশ্বকাপে নেইমার-রোনালদো পুরোপুরি নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি। এই নিয়ে নেইমার তিনটি বিশ্বকাপ খেলে দলকে একবারও ফাইনালে নিতে পারেননি। আগের দুইবারও তাকে ইনজুরি বেশ ভুগিয়েছে। এবারও তাই। সার্বিয়ার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই তিনি ইনজুরিতে পড়ে ছিটকে পড়েন। আবার ফেরেন শেষ ষোলোতে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে। ৪-১ গোলে জেতা ম্যাচে নেইমারের গোল ছিল একটি। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালেই থেমে যেতে হয় নেইমারকে। এবারের আসরে তিনি গোল করেন দুইটি। প্রথমটি ছিল সার্বিয়ার বিপক্ষে। হারের পর নেইমারের চোখ ছিল ভেজা।
রোনালদো এ নিয়ে পাঁচটি বিশ্বকাপ খেলে দলকে কোয়ার্টার ফাইনালের বেশি নিতে পারেননি। মেসি-নেইমারের মতো এবার রোনালদোও প্রথম ম্যাচে গোল করেছিলেন ঘানার বিপক্ষে। তার গোলেই এবারের আসরে গোলের খাতা খুলেছিল পর্তুগাল। কিন্তু গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে একপর্যায়ে ৬৫ মিনিটে কোচ সান্তোস তাকে তুলে নিলে রোনালদো বিষয়টি ভালোভাবে মেনে নিতে পারেনি। মাঠ থেকে বের হয়ে আসার সময় তিনি মুখে আঙ্গুল দিয়ে অঙ্গভঙ্গিতে বুজিয়ে দেন চুপ থাকার জন্য। বিষয়টি তখন ভালোভাবে নেননি কোচ। পরে ছড়িয়ে পড়ে নকআউট পর্বে তিনি সেরা একাদশে রোনালদোকে খেলাবেন না। পরে তাই করেনও। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ৬-১ গোলে ম্যাচ জেতা অবস্থায় শেষের দিকে ৭৩ মিনিটে মাঠে নামানো হয় তাকে। ভাবা হয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনালে মরক্কোর বিপক্ষে সেরা একাদশে আবার ফেরানো হবে তাকে। কিন্তু কোচ তাকে সেরা একাদশে রাখেননি। বদলি হিসেবে নামান ৫১ মিনিটে। তখন দল ১-০ গোলে পিছিয়ে। এই ব্যবধানেই পরে পর্তুগাল হেরে যায়। দলের পরাজয়ে তিনি কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছাড়েন সবার আগে। তাই রোনালদো এবার নিজেকে সেভাবে মেলে ধরার সুযোগই পাননি। গোল করেছেন একটিই।
এই দুইজনের তুলনায় মেসি আবার বেশ অপ্রতিরোধ্য। প্রতিটি ম্যাচই (কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত পাঁচটি) তিনি খেলেছেন পুরো সময়। গোল করেছেন চারটি। পোল্যান্ডের বিপক্ষে পেনাল্টি মিস না করলে প্রতিটি ম্যাচেই তার গোল থাকত। দুটি গোলে আছে তার সহযোগিতাও। নেইমার ও রোনালদোর তুলনায় মেসি নিজ দলকে এ পর্যন্ত নিয়ে আসার পেছনে রেখেছেন বড় ভূমিকা। বিশ্বকাপে নকআউট পর্বে তার কোনো গোল ছিল না আগে। এবার সেই খরা কাটিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে। বিশ্বকাপের শিরোপা উঁচিয়ে ধরতে মেসির প্রয়োজন আর মাত্র দুইটি ম্যাচের বাধা টপকানো। আপাতত ১৩ ডিসেম্বর রাত ১টায় শুরু হওয়া প্রথম সেমি ফাইনালে টপকাতে হবে বর্তমান রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়া বাধা। এখানে সফল হলে তখন বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স ও এবারের আসরের চমক মরক্কোর দ্বিতীয় সেমিতে বিজয়ী দলকে পাবে ফাইনালে।
মেসি কি পারবেন বিজয়ের হাসি হাসতে? নাকি নেইমার-রোনালদোর মতো চোখের জলে নেবেন বিদায়!
এমপি/এসজি