কাতার বিশ্বকাপের বিস্ময় ‘এফ’ গ্রুপ
কাতার বিশ্বকাপ ফুটবল যেন যোগীন্দ্রনাথ সরকারের ‘হারাধনের দশটি ছেলে’ কবিতার মতোই। একটি একটি করে খসে পড়তে থাকে।
এমনি করে ৩২ দলের আসর নেমে এসেছে ৪ দলে। চূড়ান্ত ধাপে ওঠার অপেক্ষায় সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স ও মরক্কো এবং বর্তমান রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়া ও আর্জেন্টিনা।
আগামী ১৩ ডিসেম্বর প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা ও ক্রোয়েশিয়া পরের দিন ফ্রান্স ও মরক্কো। গতবারে দুই ফাইনালিস্ট ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়াকে দেখা যেতে পারে এবারও ফাইনালে। আবার এমনও হতে পারে ফাইনাল খেলছে আর্জেন্টিনা ও মরক্কো। এর বাইরে অন্য সমীকরণও হতে পারে।
বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দলগুলো নিজেদের যোগ্যতা দেখিয়ে ৩২ দলের মূল পর্বে জায়গা করে নেয়। মূল পর্ব শুরু হওয়ার পর ক্রমেই বিশ্বকাপ ছোট হয়ে আসতে থাকে। ৩২ দল নেমে আসে ১৬ দলে, তারপর ৮ দল, ৪ দল, ২ দল। অতঃপর পাওয়া যায় চ্যাম্পিয়ন দলকে। চ্যাম্পিয়ন দলকে পেতে অনেক সেরা সেরা দল খসে পড়ে।
গ্রুপ পর্ব থেকে দুটি করে দল নকআউট পর্বে উঠে আসাতে শেষ ষোলতে প্রতি গ্রুপেরই প্রতিনিধিত্ব থাকে। কিন্তু এর পরের ধাপে বা কোয়ার্টার ফাইনালে প্রতি গ্রুপের প্রতিনিধিত্ব করার কোনো নিশ্চয়তা থাকে না। কোনো গ্রুপের দুই দলই বিদায় নেয়, আবার কোনো গ্রুপের দুই দলই শেষ আটে জায়গা করে নেয়।
শেষ আটে কোনো গ্রুপের দুটি দলই জায়গা করে নিলেও সেমিফাইনালে গিয়ে সেটা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু এবার কাতার বিশ্বকাপে তাই ঘটেছে। ‘এফ’ গ্রুপের দুটি দল মরক্কো ও ক্রোয়েশিয়া শেষ চারে উঠে এসেছে। বর্তমান রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়ার সেমিফাইনালে উঠে আসাটা খুব একটা অবাক করার মতো না হলেও আফ্রিকার প্রতিনিধি মরক্কোর উঠে আসাটা ছিল চমক জাগানোর মতনই! যেন রূপকথার গল্প।
কাতার বিশ্বকাপে সবচেয়ে কঠিন ছিল ‘ই’ গ্রুপ। এটি ছিল ‘ডেথ’ গ্রুপ। চারবারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানি, একবারের চ্যাম্পিয়ন স্পেনের সঙ্গে ছিল জাপান ও কোস্টারিকা। এটি যে ‘ডেথ’ গ্রুপ ছিল তা বোঝা যায় গ্রুপ পর্ব থেকেই জার্মানির বিদায়ে। গ্রুপ পর্বে এটি ছিল সবচেয়ে বড় অঘটন।
এ ছাড়া, ‘এফ’ গ্রুপ থেকে গতবারের সেমিফাইনালিস্ট বেলজিয়ামের বিদায়টাও ছিল অঘটন। এই গ্রুপ থেকে ক্রোয়েশিয়া ও বেলজিয়ামে ছিল সে ষোলোতে উঠে আসার তালিকায় সম্ভাব্য দল। মরক্কোর উত্তানে বাদ পড়ে যায় বেলজিয়াম। নক আউট পর্বে জায়গা করে নিতে মরক্কো হারিয়েছিল বেলজিয়ামকেই ২-০ গোলে। তারা ৭ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই শেষ ষোলোতে জায়গা করে নেয়। ক্রোয়েশিয়া হয় রানার্সআপ ।
তাদের পয়েন্ট ছিল ৫। ৪ পয়েন্ট নিয়ে বাদ পড়ে বেলজিয়াম ।সবার নিচে ছিল কানাডা। তাদের কোনো পয়েন্ট ছিল না।
সেমিফাইনালে উঠে আসা মরক্কো ও ক্রোয়েশিয়া এবারের আসল শুরু করেছিল নিজেদের মধ্যে খেলা দিয়ে। যেখানে কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলেনি ।খেলা হয়েছিল গোলশূন্য ড্র। পরের দুটি খেলায় মরক্কো বেলজিয়ামকে ২-০ গোলে ও কানাডাকে ২-১ গোলে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়।
ক্রোয়েশিয়া ৪-১ গোলে কানাডাকে হারালেও শেষ ম্যাচে বেলজিয়ামের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে। কিন্তু মরক্কো যে সেমিফাইনাল পর্যন্ত উঠে আসবে, তা অন্যরা চিন্তা করাতো দূরের কথা, নিজেরাও ভুলে ভেবেছিল কি না সন্দেহ আছে। গতবার রাশিয়া বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে তাদের অবস্থান ছিল সবার নিচে। ‘বি’ গ্রুপে ইরান ও পর্তুগাল দুটি দলের কাছেই হেরেছিল ১-০ গোলে। স্পেনের বিপক্ষে ড্র করেছিল ২-২ গোলে।
এবার দেখার পালা ‘এফ’ গ্রুপের দুই দলের যাত্রা সেমি ফাইনালেই থেমে যাবে, নাকি সবাইকে আরও বেশি অবাক করে দিয়ে দুই দলই ফাইনালে খেলবে? আবার যেকোনো একদলও ফাইনালে খেলতে পারে?
তবে কাতার বিশ্বকাপে ‘এফ’ গ্রুপ থেকে দুটি দলেরই সেমিফাইনাল পর্যন্ত উঠে আসাটা ছিল গ্রুপ পর্বে জার্মানির বিদায়ের চেয়েও বড় অঘটন।
এমপি/এমএমএ/