পেনাল্টি মিসের খেসারত দিল ইংল্যান্ড, সেমিতে ফ্রান্স
বর্তমান রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়া আগেই পৌঁছে গিয়েছিল সেমিফাইনালে। এবার সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। ইংল্যান্ডের অগ্রযাত্রাকে ফ্রান্স থামিয়ে দেয় ২-১ গোলে ম্যাচ জিতে। ফ্রান্সের হয়ে দুইটি গোলই করেন জিরুড। ইংল্যান্ডের হয় পেনাল্টি থেকে একটি গোল পরিশোধ করেন হ্যারিকন। তিনি পরে আবারও পেনাল্টি থেকে গোল করতে ব্যর্থ হন। রোনালদোর পর্তুগালকে ১-০ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে জায়গা করে নেওয়া মরক্কোর বিপক্ষে ১৪ ডিসেম্বর আল বায়াত স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে ফ্রান্স।
আল বায়াত স্টেডিয়ামে কোয়ার্টার ফাইনালের শেষ ম্যাচে প্রথমার্ধে ফ্রান্স ১-০ গোলে এগিয়ে ছিল। তাদের গোল মেশিন এমবাপ্পেকে এদিন চেনা রূপে দেখা যায়নি। তিনি ছিলেন কড়া মার্কিংয়ে। এই সুযোগে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেন জিরুড। দুইটি গোল করা ছাড়াও তিনি আরও একাধিক সুযোগ হাতছাড়া করেন। বারবার ইংল্যান্ডের গোলপোস্টে ভীতি ছড়ান। ইংল্যান্ডের হয়ে এ কাজটি করেছিলেন সাকা। যে গোলটি ইংল্যান্ড পেনাল্টি থেকে পেয়েছিল তা আদায় করেছিলেন সাকাই। এ ছাড়া এ দিন তাকে আটকে রাখতে বারবার হিমশিম খেয়েছে ফ্রান্সের রক্ষণভাগ।
১০ মিনিটে ডান প্রান্ত দিয়ে দেম্বেলের ক্রস থেকে বক্সের ভেতর জিরুড শুয়ে পড়ে হেড করলে তা সরাসরি গোলরক্ষক পিকফোর্ডের গ্লাভসে জমা পড়ে। ১৬ মিনিটে একটি পরিকল্পিত আক্রমণ থেকে গোল করে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। বলটি ছিল ফ্রান্সের সীমানায়। আক্রমণে ছিলেন ইংল্যান্ডের সাকা। তা কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে ফ্রান্সের একজন খেলোয়াড় বল নিয়ে বাম প্রান্ত দিয়ে উপরে উঠে আসেন। এমবাপে-গ্রিজম্যান-দেম্বেলে হয়ে বল চলে যায় পান প্রান্তে। সেখান থেকে আবার দেম্বেলে-গ্রিজম্যান হয়ে বক্সের বাইরে বল পেয় যান টিচোয়ামিনে। তিনি ডান পায়ের বুলেট শটে পিকফোর্ডকে হার মানান। পিকফোর্ড বল ধরার জন্য ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েও নাগাল পাননি। জাতীয় দলের হয়ে এটি ছিল তার দ্বিতীয় গোল
গোল হজম করার পর পরিশোধের জন্য ইংল্যান্ড মুহুর্মুহু আক্রমণ শুরু করে ফ্রান্সের সীমানায়। বিপজ্জনক হয়ে উঠেন সাকা। কিন্তু তাদের আক্রমণগুলো গিয়ে বাঁধাপ্রাপ্ত হয় ফান্সের গোলরক্ষক লরিসের কাছে। ১৯ মিনিটে লুক শ’র ফ্রি কিক সরাসরি লরিসের হাতে চলে যায়। ২৩ মিনিটে হ্যান্ডারসনের ক্রস থেকে হ্যারিকেনের চেষ্টা বাধাগ্রস্ত হয় লরিসের কাছে। ২৬ মিনিটে হ্যারিকেন একক ভাবে বল নিয়ে বক্সে ডুকার মুহূর্তে ফ্রান্সের রক্ষণভাগ কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত হন। ভিএআরের সহায়তা নিয়ে রেফারি পেনাল্টি চেক করেছিলেন। কিন্তু ফলাফল ইংল্যান্ডের পক্ষে আসেনি। ২৯ মিনিটে ২৫ গজ থেকে হ্যারিকেন বুলেট শট লরিস বাম দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কর্নার করে রক্ষা করেন। ফুডেনের নেওয়া সেই কর্নার থেকে বক্সে জটলা সৃষ্টি হয়। গোলরক্ষক লরিস গোলপোস্টে ছিলেন না। অরক্ষিত গোল পোস্ট। শুধু পা ছুঁয়াতে পারলেই গোল। কিন্তু ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়রা তা করতে পারেননি। সহজ সুযোগ ছিল।
ইংল্যান্ডের ক্রমাগত আক্রমণ সামলে ফ্রান্স আবার আক্রমণে যাওয়ার চেষ্টা করে। ৩৮ মিনিটে তারা ফ্রি কিক থেকে কয়েকজনের পা ছুঁয়ে বক্সের ভেতর থেকে এমবাপের বামপায়ের শট বারের অনেক উপর দিয়ে চলে যায়।
দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু হলে ইংল্যান্ড গোল পরিশোধের জন্য আক্রমণের গতি বাড়িয়ে দেয়। ৫১ মিনিটে ডান প্রান্ত দিয়ে সাকার ক্রস ফ্রান্সের রক্ষণভাগের খেলোয়াড়রা ফিরিয়ে দিলেও ফিরতি বলে হ্যান্ডারসনের তীব্র শট আবারও বাধাপ্রাপ্ত হয় ফ্রান্স রক্ষণে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। পরের মিনিটে সাকা আবারও বিপজ্জনকভাবে বক্সের ভেতর ডুকতে গেলে তাকে ফাউল করে ফেলে দেওয়া হয়। রেফারি পেনাল্টি বাঁশি বাজালে এ নিয়ে ফ্রান্সের খেলোয়াড়রা খুব একটা আপত্তি করেননি। পেনাল্টি থেকে হ্যারিকেন গোল করে সমতা আনেন। এই গোল করে হ্যারিকেন ৫৩ গোল করে সবার উপরে থাকা ওয়েন রুনির সমান হন। আর একটি গোল করলে তিনি হবেন ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা।
খেলায় সমতা আসার পর ফ্রান্স আবার আক্রমণে যেতে থাকে। নিজেদের সীমানা থেকে উঠে আসা আক্রমণ থেকে ৬১ মিনিটে রাবিয়েটের শট পিকফোর্ড পাঞ্চ করে রক্ষা করেন। পাল্টা আক্রমণ থেকে হ্যারিকেন শট লরিসে আটকা পড়ে। ৬৯ মিনিটে সাকাকে ফাউল করলে ইংল্যান্ড ফ্রি কিক পায়। ফি কিক থেকে হ্যারি মেগুউরির হেড সাইডবার ঘেষে বাইরে চলে গেলে ইংল্যান্ড নিশ্চিত গোল বঞ্চিত হয়। ৭১ মিনিটে লুক শর বামপ্রান্ত থেকে ক্রস বক্সের ভেতর থেকে সাকা সঠিকভাবে শট নিতে ব্যর্থ হলে ইংল্যান্ড এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ হারায়। ৭৬ মিনিটে ইংল্যান্ডকে নিশ্চিত গোল হজম করার হাত থেকে রক্ষা করেন পিকফোড। বক্সের ভেতর থেমে জিরুডের বাম পায়ের ভলি শট পিডেফোর্ড পাঞ্চ করে রক্ষা করেন। পরে এই জিরুডই আবার ঘাতক হয়ে উঠেন। পরের মিনিটে বাম প্রান্ত আবার গড়ে উঠা আক্রমণ থেকে গ্রিজম্যানের ক্রস থেকে বক্সের ভেতর লাফিয়ে উঠে হেড করে পিকফোর্ডকে পরাস্ত করেন। ইংল্যান্ডের একজন খেলোয়াড় বাধা দিয়েও তাকে রুখতে পারেননি।
এই গোলের রেশ কাটতে না কাটতেই ফ্রান্সের বিপক্ষে আবারও পেনাল্টি বাঁশি বাজান রেফারি। ৮১ মিনিটে হ্যান্ডারসনকে বক্সে ফাউল করলে রেফারি ভিএআর পরীক্ষা করে পেনাল্টি দেন। কিন্তু হ্যারিকেন নেওয়া শট অবিশ্বাস্যভাবে বারে অনেক উপর দিয়ে চলে গেলে ইংল্যান্ডের আকাশে কালো মেঘ এসে ভর করে। গোলটি করতে পারলে তিনি ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা হতে পারতেন। ইনজুরির টাইমের শেষ সময়ে ফ্রি কিক থেকে রাশফোর্ডের শট ক্রস বার কাঁপিয়ে চলে গেলে ইংল্যান্ডের শেষ সুযোগ হাতছাড়া হয়। সেমিতে যাওয়ার আনন্দে মেতে উঠে ফরাসীরা। ইংল্যান্ড শিবিরে তখন হতাশার চাদরে মুড়া।
এমপি/আরএ/