লিটনের সেঞ্চুরিতেও বাংলাদেশের ইনিংস হার
তিন দিনেই শেষ হয়ে গেল বাংলাদেশ-নিউ জিল্যান্ডের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। প্রথম ইনিংসেই ফলাফল অনেকটা অনুমান করা গেলেও টপ অর্ডারের লড়াই ও লিটন দাসের চমৎকার ব্যাটিং খানিকটা আশা জাগিয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত ইনিংস ব্যবধানে হার এড়ানো সম্ভব হলো না। ক্রাইস্টচার্চের দ্বিতীয় টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে ও ১১৭ রানে হেরেছে বাংলাদেশ দল।
এরকম ইনিংসেও লড়াই করেছেন লিটন দাস। লিটন দাস ১১৪ বলে রান করেছেন ১০২। ছোট ছোট ইনিংস খেলার পথে সাদমান ইসলাম ৪৮ বলে ২১ রান, মোহাম্মদ নাঈম শেখ ৯৮ বলে ২৪ রান, মুমিনুল হক ৬৩ বলে ৩৭ এবং নুরুল হাসান সোহান ৫৪ বলে ৩৬ রান করেছেন।
এ ছাড়া ৩৬ বলে ২৯ রানের ইনিংস খেলার পথে নাজমুল হাসান শান্ত কিছুটা আক্রমণাত্মক ছিলেন। কিন্তু তা সত্বেও বাংলাদেশ সারা দিন টিকতে পারেনি। ২৭৮ রানে অলআউট হয়ে মেনে নিতে হয়েছে ইনিংস ব্যবধানেই হার। হেরেছে ইনিংস ও ১১৭ রানে। ফলে দুই টেস্টের সিরিজ ১-১ ড্র হলো। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে প্রথম টেস্ট বাংলাদেশ জিতেছিল ৮ উইকেটে। যা ছিল নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে সব ফরম্যাটে ৩২ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশের প্রথম জয়।
তৃতীয় দিন বাংলাদেশ টিকে ছিল ৭৯ ওভার ৩ বল পর্যন্ত। উইকেটের মড়ক লাগেনি। প্রথম সেশনে উইকেট পড়েছে দুইটি। দ্বিতীয় সেশনে তিনটি। শেষ সেশনে পাঁচটি। প্রথম সেশনে রান উঠেছে ৭৪, দ্বিতীয় সেশনে ৭৮ রান এবং তৃতীয় সেশনে ১০ ওভার ৩ বল কম খেলেও রান সংগ্রহ হয় ১২৮। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ যে রকম প্রতিরোধের ডাক দিয়েছিল, তা কিছুটাও প্রথম ইনিংসে করে দেখাতে পারলে তিন দিনে কিংবা ইনিংসে ব্যবধানে হারতে হতো না। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে চা বিরতির এক ঘণ্টা আগে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা নিউ জিল্যান্ডের পেসারদের সামালই দিতে পারেননি। তিন ঘণ্টায় মাত্র ৪১ ওভার ২ বলে অলআউট হয়ে যায়।
মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) তৃতীয় দিন নিউ জিল্যান্ডের সেই পেসারই কিন্তু আবার বাংলাদেশের ব্যাটারদের উপর ছড়ি ঘুরাতে পারেননি। দিনের প্রথম বলেই টিম সাউদিকে চার মেরে সাদমান ইসলাম জানান দিয়েছিলেন আজ তাদের চেপে বসতে দেবেন না। সংযমের সঙ্গে আক্রমণও চলবে। শেষ পর্যন্ত হয়েছেও তাই। সাদমান, নাঈম, মুমিনুলের ব্যাটে ছিল সংযম। নাজমুল, নুরুল হাসান আর লিটনের ব্যাট ছিল আগ্রাসী।
উদ্বোধনী জুটিতে ১৩ ওভার ৫ বলে রান আসে ২৭। সাদমান আউট হন ৪৮ বলে ২১ রান করে। নাজমুল ৩৬ বলে দ্রুত খেলে ২৯ রান করেন। বাংলাদেশের শততম টেস্ট খেলতে নামা মোহাম্মদ নাঈম প্রথম ইনিংসে কোনো রান করতে পারেননি। এ ইনিংসে মাত্র ২৪ রান করলেও এর বিপরীতে বল খেলেন ৯৮টি, তখনই সেখানে টেস্ট ক্রিকেটের এক প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠে। মুমিনুল হক এগোচ্ছিলেন ধীরলয়ে। ৬৩ বলে ৩৭ রানে তাকে থামিয়ে দেন ওয়েগনার। ইয়াসির আলীও দ্রুত ফিরে যান।
এরপর শুরু হয় লিটন ও নুরুল হাসানের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং প্রদশর্নী। যে আক্রমণে সামনে থেকে বেশ ভালোভাবে নেতৃত্ব দেন লিটন দাস। তুলে নেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় শতক। তার শতকটি ছিল ওয়ানডে মেজাজে ১০৬ বলে। ৬২ রানই এসেছে না দৌড়ে চার আর ছক্কা থেকে। ১৪টি চারের সঙ্গে একটি ছক্কা। নব্বই’র ঘর থেকে শতকে পৌঁছাতে লিটন কোনো সময়ই নেননি। জেমিসেনর ওভার থেকেই ২, ২, ৪ ও ২ রান নিয়ে শতক পূর্ণ করেন রাজকীয় ঢংয়ে। তার পর উদযাপন করেন স্যালুট দিয়ে।
নুরুল হাসান সোহানের সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে দুইজনেই ছিলেন আক্রমণাত্মক। যে কারণে ১০১ রান আসে ১০৪ বলে। ৫৪ বলের ইনিংসে ছিল সাতটি চারের মার। চা বিরতির আগে এ দুইজনে জুটি বেঁধে আক্রমণাত্মক মেজাজে খেলছিলেন। চড়াও হয়েছিলেন পেসারদের উপর। জেমিসনের এক ওভারে ১৭, আরেক ওভারে ১১, বোল্টের এক ওভারে ১৬, ওয়েগনারের এক ওভারে ১৩ রান আসে।
এ জুটিতে শতরান পার হওয়ার পরপরই মিচেলের বলে ওয়েগনার মিডঅফে সোহানের ক্যাচ নিলে জুটি ভেঙে যায়। তখন লিটন দাসে অপরাজিত ৮১ রানে। এরপর অপরপ্রান্তে আর কেউ সেভাবে সময় দিতে পারেননি। মেহেদী হাসান মিরাজ চেষ্টা করেছিলেন। ৩০ বল খেলে ৩ রান করার পর জেমসিনের শর্ট পিচ বল রক্ষণাত্মক খেলতে গিয়ে দ্বিতীয় স্লিপে লাথামের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন। এরপর লিটন দাস আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেন। এ আক্রমণ অব্যাহত রেখেই তিনি সেঞ্চুরি তুলে নেন ১০৬ বলে। সেঞ্চুরি করার পার আর বেশি দূর যেতেই পারেননি। ১০২ রানে তিনি ফিরে আসেন সাজঘরে জেমিসনের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি। চার টেস্টে এটি তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি।
প্রথম সেঞ্চুরি করেছিলেন ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে ১১৪ রান। মাউন্ট মঙ্গানুইয়েও তিনি সেঞ্চুরির কাছাকাছি গিয়ে আউট হয়েছিলেন ৮৬ রানে। লিটন আউট হওয়ার পর বাংলাদেশের শেষ তিন ব্যাটার তাসকিন, শরিফুল আর এবাদতকে আউট করতে খুব বেশি সময় নেননি কিউই পেসাররা।
নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে শরিফুলকে জেমিসন আউট করার পর শেষ জুটি ক্রিজে। কী মনে করে দলপতি লাথাম ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলতে নামা রস টেলরের হাতে বল তুলে দেন। তৃতীয় বলেই তিনি এবাদতকে আউট করে বিদায়ী উপহার পেয়ে যান। মিডউইকেটে তার ক্যাচ ধরেন লাথাম। জেমিসন ৮২ রানে ৫ উইকেট। ওয়েগনার ৩ উইকেট নিতে খরচ করেন ৭৭ রান।
এমপি/এসএন