ভারতের এক ইনিংসেই বাংলাদেশের বিপক্ষে রেকর্ড পাতায় ওলট-পালট
আগের দিন রাতে বিশ্বকাপ ফুটবলে ঘটে গেছে অম্ল-মধুর স্মৃতি। কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ব্রাজিলের বিদায় আর আর্জেন্টিনার সেমিফাইনালে উঠার আনন্দ-বেদনার এই মিশ্র অনুভূতি নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ ঘুমাতে যান। এদিকে সকাল হতে না হতেই সবার দৃষ্টি আবার বিএনপির সমাবেশকে নিয়ে। কী হয়, না হয় এই রকম একটা সংখ্যা সবার মাঝে।
এসবের কারণে অনেকটা আড়ালেই পড়ে যায় চট্টগ্রামে বাংলাদেশ ভারতের তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচ। সিরিজ খোয়ানো ম্যাচে ভারত রেকর্ড বইয়ের পাতা ওলট-পালট করে দিয়েছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে হয়েছে প্রথমবারের মতো অনেক রেকর্ড। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ভারত করেছে ৮ উইকেটে ৪০৯ রান। বাংলাদেশের বিপক্ষে এটি দলগত সর্বোচ্চ রান এবং প্রথম চারশোর্ধ্ব রানের ইনিংস। এর আগে সর্বোচ্চ রান ছিল ইংল্যান্ডের। ২০০৫ সালে নটিংহ্যামে তারা ৪ উইকেটে করেছিল ৩৯১ রান। বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম হলেও ওয়ানডে ক্রিকেটে এটি ছিল ২২তম বার চারশোর্ধ্ব রানের ইনিংস।
বিশ্ব রেকর্ড গড়ে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন সিরিজে প্রথমবারের মতো খেলতে নামা ইশান কিশান। সবচেয়ে কম মাত্র ১২৬ বলে করেছেন ডাবল সেঞ্চুরি। আগের রেকর্ড ছিল ক্রিস গেইলের। তিনি ১৩৮ বলে করেছিলেন এই সেঞ্চুরি।
ইশানের ডাবল সেঞ্চুরিও বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম। আগে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ছিল জিম্বাবুয়ের চার্লস কভেন্ট্রির। ২০০৯ সালে বুলাওয়েতে তিনি করেছিলেন অপরাজিত ১৯৪ রান। ইশানের ২১০ রান ঘরের মাঠেও বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ। আগের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ছিল অস্ট্রেলিয়ার ওয়াটসনের। তিনি ২০১১ সালে মিরপুরে করেছিলেন ১৮৫ রান।
ইশান আউট হন তাসকিনের বলে লিটন দাসের হাতে ক্যাচ দিয়ে। তার ১৩১ বলের ইনিংসে ছিল ২৪টি চার ও ১০টি ছক্কা। সেঞ্চুরি করেছিলেন ৮৫ বলে ১৪টি চার ও ২ ছক্কায়। সেঞ্চুরি থেকে ডাবল সেঞ্চুরিতে পৌঁছাতে বল খেললেন মাত্র ৪১টি। ছিল ৯টি চার ও ৭টি ছক্কা। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তিনি আরও বেশি আক্রমণাত্মক হচ্ছিলেন। ডাবল সেঞ্চুরির পর এক ছক্কা ও চারে ১০ রান যোগ করার পর তিনি আউট হয়ে গেলে বাংলাদেশ যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে।
ইশান ও কোহলি দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে যোগ করেন ২৯০ রান। এই রান যে কোনো জুটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ। আগের সর্বোচ্চ রান ছিল ২৮২। ২০১৭ সালে হাসিম আমলা ও কুইন্টন ডি কক কিম্বারলিতে করেছিলেন এই রান।
রেকর্ডের এই মিছিলে বিরাট কোহলি সামিল হয়েছেন অন্যভাবে। একসময় যেখানে তিনি সেঞ্চুরি করতেন হরহামেশা, সেখানে হঠাৎ করেই সেঞ্চুরি হয়ে উঠে আকাশের চাঁদ। সেঞ্চুরি না পাওয়ার সঙ্গে যোগ হয়েছিল রান খরাও। আজ তিনিও সেঞ্চুরি পেয়ে যান ৪৩ ওয়ানডে পর। সেঞ্চুরি করতে কোহলি বল খেলেন ৮৫টি। ১১টি বাউন্ডারির সঙ্গে ছক্কা ছিল একটি। সাকিব আক্রমণে ফিরে এসে তাকে আউট করেন মেহেদি হাসান মিরাজের সহায়তায়। তার ৯১ বলে ১১৩ রানের ইনিংসে ছিল ১১টি বাউন্ডারি ও একটি ওভার বাউন্ডারি।
এই দুই ব্যাটসম্যান আউট হওয়ার পর বাংলাদেশের বোলাররাও যেন নিজেদের ফিরে পান। যে কারণে ভারতের পরবর্তী ব্যাটসম্যানরা তেমন সুবিধা করতে পারেননি। ওয়াশিংটন সুন্দর ৩৭ ও অক্ষর প্যাটেল ২০ রান করেন।
ভারতের ইনিংস যে এমন আকাশছোঁয়া হবে তা কিন্তু তাদের ইনিংসের শুরু দেখে বুঝা যায়নি। কারণ লিটন টানা তৃতীয়বারের মতো টস জিতে ভারতকে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানানোর পর দলীয় ১৫ রানে মিরাজ বল হাতে নিয়েই প্রথম বলে শেখর ধাওয়ানকে আউট করে আঘাত এনেছিলেন। তখন মনে হয়েছিল ভারত আজকেও সুবিধা করতে পারবে না। কিন্তু অধিনায়ক রোহিতের ইনজুরিতে ইশান কিশান খেলার সুযোগ পেয়ে সব পাল্টে দেন।
সাকিব ৬৮, এবাদত ৮০ ও তাসকিন ৮৯ রানে দুটি করে উইকেট নেন। একটি করে উইকেট নেন মোস্তাফিজ ও মিরাজ।
এমপি/এসজি