মিরাজ-মাহমুদউল্লাহর রেকর্ড জুটিতে লড়াকু পুঁজি
ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে দুর্দান্ত এক জুটি গড়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মেহেদি হাসান মিরাজ উদ্ধার করলেন বাংলাদেশকে। ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে নির্ধারিত ৫০ ওভারে বাংলাদেশ সংগ্রহ করে ২৭১ রান।
মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টসভাগ্য ছিল বাংলাদেশের পক্ষে। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাস।
কিন্তু ১৯তম ওভারে ৬৯ রানেই নেই ৬ উইকেট। বাংলাদেশের জন্য বড় লজ্জাই অপেক্ষা করছিল। তবে ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে লড়াই করেন অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর আগের ম্যাচের নায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ।
মেহেদী হাসান মিরাজের ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি অপরাজিত ১০০ ও অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ৭৭ রানে ভর করে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত সংগ্রহ করেছে সাত উইকেটে ২৭১ রান। মিরাজ ইনিংসের শেষ বলে এক রান নিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। মাহমুদুল্লাহ সঙ্গে সপ্তম উইকেট জুটিতে যোগ করেন ১৪৮ রান।
প্রথম ম্যাচে অধিনায়ক লিটন দাস জিতে ভারতকে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানিয়ে পুরো ফায়দা তুলে নিয়েছিলেন। আজ দ্বিতীয় ম্যাচেও টস জিতেন লিটন দাস।
কিন্তু এবার তিনি নিজেই ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিপদে পড়ে গিয়েছিলেন। ইনিংসের বয়স মাত্র ১৯ ওভার। ৬৯ হারিয়ে ছয় উইকেট হারিয়ে দল পড়েছিল ভয়াবহ বিপদে। এ সময় একে একে আউট হয়ে যান এনামুল হক বিজয় (১১), লিটন দাস (৭), নাজমুল হক শান্ত (২১) সাকিব আল হাসান (৮) মুশফিকুর রহিম(১২) ও আফিফ হোসেন (০)।
এ সময় ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হন প্রথম ম্যাচে ভারতের মুখের খাবার কেড়ে নিয়ে বাংলাদেশকে স্মরণীয় জয় উপহার দেওয়া মেহেদি হাসান মিরাজ। সঙ্গী হিসেবে পেয়ে যান অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে। দুজনে মিলে ভারতের ভয়ংকর বোলিং আক্রমণ মোকাবিলা করে বাংলাদেশের ইনিংসকে মজবুত করার সংগ্রামে লিপ্ত হন এবং সেখানে তারা সফল হন।
যেখানে কিছুক্ষণ আগেও ভারতের বোলাররা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের উপর জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসেছিলেন সেখানে তা আস্তে আস্তে আলগা হতে থাকে। পাল্টাতে থাকে চিত্রনাট্য। অভাব বিস্তার করতে থাকেন মাহমুদুল্লাহ ও মিরাজ।
তাদের লড়াকু ও অসাধারণ ব্যাটিংয়ের কারণে বাংলাদেশের ১০০ রান আসে ২৫.৫ ওভারে ২০০ রান আসে ৪৪.৩ ওভারে। এক পর্যায়ে নিজেদের জুটিতেও শতরান চলে আসে ১২৭ বলে। হাফ সেঞ্চুরি প্রথমে পূর্ণ করেন মিরাজ। বল খেলেন ৫৩টি। তিনটি বাউন্ডারির সঙ্গে ছিল দুটি ওভার বাউন্ডারি। মাহমুদুল্লাহ হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৭৪ বলে। বাউন্ডারি ছিল চারটি। এটি ছিল তার ক্যারিয়ারের ২৭তম হাফ সেঞ্চুরি।
এই জুটি যখন ভাঙে, তখন বাংলাদেশের আকাশে চাঁদ জলমল করছে। বিপদ কাটিয়ে লড়াকু পুঁজি। জুটিতে ২৭.১ ওভারে ১৪৮ রান যোগ হওয়ার পর মাহমুদুল্লাহ ৭৭ রান করে ওয়াশিংটন সুন্দরের বলে উইকেট এর পেছনে লোকেশ রাহুলের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান। সপ্তম উইকেট জুটিতে টিতে ১৪৮ রান ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। এ সময় দলীয় রান ছিল ২১৭।
মাহমুদুল্লাহ আউট হওয়ার সময় মিরাজের রান ছিল ৬৬ ওভার বাকি ছিল ৩.৫ টি। সে সময় মিরাজের সেঞ্চুরি দূর আকাশের চাঁদ। এক কথায় অসম্ভব। কিন্তু তারপরও মিরাজ সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন নাসুমকে নিয়ে মার মুখী ব্যাটিং করে। অষ্টম উইকেটটিতে মাত্র ২৩ বলে তারা যোগ করেন অপরাজিত ৫৪ রান। যেখানে মাসুম ১১ বল খেলে এক ছক্কা ও দু চার এ করেন অপরাজিত ১৮ রান। মিরাজ বাকি ১২ বল খেলে সেঞ্চুরির জন্য প্রয়োজনীয় ৩৬ রান যোগ করেন।
এ সময় তিনি চারটি বাউন্ডারি ও দুটি ওভার বাউন্ডারি মারেন। শেষ তিন ওভারে তারা ৪০ রান যোগ করেন। এর ৩০ রানই আসে মিরাজের ব্যাট থেকে। শেষ ওভারে গিয়েও মিরাজের সেঞ্চুরি নিশ্চিত ছিল না তখন তার রান ছিল ৮৫। বোলার ছিলেন শার্দুল ঠাকুর। প্রথম রোল থেকে নাসুম লেগ বাই এক রান নেন। পরের বলে মিরাজ ফাইন লেগ দিয়ে ছক্কা হাঁকান। তৃতীয় বলে কোনো রান নিতে পারেননি। তখনো মিরাজের সেঞ্চুরি অনেক দূরে।
কিন্তু চতুর্থ বলে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা মারলে সেঞ্চুরি সম্ভাবনা জেগে ওঠে। পঞ্চম বলে দুই রান নিয়ে পৌঁছে যান ৯৯ রানে। ইনিংসের শেষ বল। মিরাজের কি সেঞ্চুরি হবে? তিনি কি এক রান নিতে পারবেন? নাকি দুই রান বা বাউন্ডারি, অথবা ওভারে বাউন্ডারি। নাকি আউট হয়ে যাবেন। এমন নানামুখী চিন্তার মধ্যে শার্দুল ঠাকুরের করা ফুলটস বলকে তিনি সাফলিং করে এক রান নিয়ে ব্যাট উঁচিয়ে ধরেন।
সেঞ্চুরি করেন ৮৩ বলে চার ছক্কা ও আট বাউন্ডারিতে। ভারতের হয়ে ওয়াশিংটন সুন্দর ৩৭ রানে তিনটি ইমরান মালিক ৫৮ রানে ও মোহাম্মদ সিরাজ ৭৩ রানে দুটি করে উইকেট নেন
এমপি/আরএ/এমএমএ/