মেলবোর্নে শেষ হাসি ইংল্যান্ডের
কে বসবে উইন্ডিজের পাশে? পাকিস্তান, না ইংল্যান্ড। যে দল জিতবে সে দলই হবে দুই বারের চ্যাম্পিয়ন। শেষ পর্যন্ত সেখানে বসেছে ইংল্যান্ড। লো-স্কোরিং ম্যাচে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে ইংল্যান্ড এখন উইন্ডিজের পাশে। উইন্ডিজ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ২০১২ ও ২০১৬ সালে। ইংল্যান্ড এর আগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ২০১০ সালে। আগামী ২ বছর তারাই থাকবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের রাজা হয়ে যেমনটি তারা এখন ওয়ানডে বিশ্বকাপেরও রাজা। ইংল্যান্ডের রাজা হওয়াতে রাজত্ব হারিয়েছে গতবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া।
আজ রবিবার (১৩ নভেম্বর) মেলবোর্ন যেন সাজানো হয়েছিল পাকিস্তানের জন্য। কারণ খেলা শুরু হওয়ার আগে সেখানে দর্শকদের যে স্রোত ছিল— সেই স্রোত ছিল শুধুই পাকিস্তানের দর্শকদের। জাতীয় পতাকা ও জার্সি গায়ে পাকিস্তানের দর্শকদের উপস্থিতি মেলবোর্নের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিল। তাদের উচ্ছ্বাস আর উল্লাস দেখে যে কারও মনে হবে ফাইনালের মঞ্চ সাজানো হয়েছে শুধুই পাকিস্তানের জন্য। ফাইনাল খেলাটা শুধুই আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। ট্রফিটা তুলে দেওয়া শুধুই সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু পাকিস্তানের সাজানো বাগানে ফুল ফুটিয়েছে ইংল্যান্ড। তবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর তাদের খেলোয়াড়দের মাঝে যেমন উচ্ছ্বাসের বহি:প্রকাশ ছিল কম, তেমনি মাঠে উপস্থিত স্বল্প সংখ্যক দর্শকদের মাঝেও। যেখানে (প্রেস বক্সের সামনে) ইংল্যান্ডের দর্শকদের একটু বেশি উপস্থিতি ছিল, সেখানে এসে তারা হাত নেড়ে দর্শকদের প্রত্যাশা ফিরিয়ে দেওয়াটা উদযাপন করেন।
দুটি সেমিফাইনাল যেমন একপেশে হয়েছে, তেমনি ফাইনালও। মেলবোর্নে ৮০৪৬২ জন দর্শকের উপস্থিতিতে লো-স্কোরিং ম্যাচটি তাই হয়েছে একপেশে। টস হেরে ব্যাট করতে নামা পাকিস্তানের পুঁজি যদি মাত্র ১৩৭ রান হয়, সে রান নিয়ে কি আর লড়াই করা যায়। তারপরও পাকিস্তানের বোলাররা প্রথম ওভারেই উইকেট নিয়ে লড়াই করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। ১৫ ওভার পর্যন্ত তারা ম্যাচে ছিল। এ সময় ইংল্যান্ডের রান ছিল ৪ উইকেটে ৯৭, পাকিস্তানের ছিল ৪ উইকেটে ১০৬। এরপর পাকিস্তানের বোলাররা আর পেরে উঠেননি। এই না পারার কারণ ছিল ইংল্যান্ডের একজন বেন স্টোকস আছেন। ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে তিনি যেমন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দলকে অনেক নাটকীয়তার পর চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন, এবারও সেই কাজটি করেন। শেষের দিকে যাতে বলের সঙ্গে রানের ব্যবধান না বেড়ে যায়, সে্ কাজটি তিনি করেন খুবই বিচক্ষণতার সঙ্গে। সঙ্গি হিসেবে পেয়ে যান মঈন আলীকেও। যেখানে বাউন্ডারি, ওভার বাউন্ডারি মারা ছিল কঠিন, সেখানে তারা দুই জনেই সমান তালে কাজটি করে যান।
১৫ ওভার শেষে ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৩০ বলে ৪১ রানের। সেখানে এই দুই জন ইফতেখার আহমেদের ওভারের শেষ দুই বলে বেন স্টোকস ৪ ও ৬ এবং মঈন আলী পরের ওভারে মোহাম্মদ ওয়াসিমের প্রথম ২ বল দুইটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ম্যাচকে আর শেষ ওভারের উত্তেজনায় নিতে দেননি। এই দুই ওভারে ইংল্যান্ড ২৯ রান নিয়ে শেষ ৩ ওভারে টার্গেট ১২ রানে নামিয়ে আনে। মঈন আলী ১২ বলে ১৯ রান করে আউট হলেও বেন স্টোকস শেষ পর্যন্ত দলকে চ্যাম্পিয়ন করে মাঠ ছাড়েন ৪৯ বলে বলে অপরাজিত ৫২ রানের ইনিংস খেলে। এটা তার ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি। সেটি তুলে নেন ৪৭ বলে। হারিস রউফ ৪ ওভারে ২৩ রানে নেন ২ উইকেট। ১টি করে উইকেট নেন শাহিন শাহ আফ্রিদি, সাদাব খান ও মোহাম্মদ ওয়াসিম।
দুইটি সেমিফাইনালই ছিল দুই দলের ওপেনারদের ব্যাটিং প্রদশর্নী। যে প্রদশর্নীতে পড়ে ছারখার হয়ে গিয়েছিল নিউজিল্যান্ড ও ভারত। ফাইনালেও ওপেনারদের লড়াই দেখার বিপুল আগ্রহ ছিল ক্রিকেটপ্রেমীদের। কিন্তু সেখানে এসেছে দুই পক্ষ থেকেই ব্যর্থতা। পাকিস্তানের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ২৯, ইংল্যান্ডের ৭। মোহাম্মদ রিজওয়ান ১৫ ও অ্যালেক্স হেলস ১ রান করেন। বাবর আজম ৩২ রান করেন ২৮ বলে। বাটলালের ২৬ রান আসে ১৭ বল থেকে। ওপেনারদের এই ব্যর্থতা সংক্রমিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। যে কারণে ম্যাচ হয়ে উঠে লো-স্কোরিং। পাকিস্তানের ৮ উইকেটে করে মাত্র ১৩৭ রান। সেই রান তাড়া করতে গিয়ে বড় ধাক্কা খায় ইংল্যান্ড।
টি-টোয়েন্টি রানের খেলা। সেই রানের খেলায় ফাইনালে রান সাগরের ম্যাচ দেখার জন্য লোভাতুর হয়ে থাকেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। তাদের সেই প্রত্যাশার সাগরে পানি ঢেলে দেন ব্যাটসম্যানরা। ফাইনাল হয়ে উঠে বোলারাদের ম্যাচ।
বৃষ্টির আসার কথা ছিল। বৃষ্টি আসেনি। কিন্তু আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। ছিল বাতাস। এই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে বোলাররা হয়ে উঠেন অপ্রতিরোধ্য। তাদের এই অপ্রতিরোধ্য গতির কাছে হার মানেন ব্যাটসম্যানরা। এক লাখ ধারণক্ষমতা সম্পন্ন মেলবোর্ন ক্রিকেট স্টেডিয়াম অনেকটাই পূর্ণ হয়ে উঠা দর্শকদের মাঝে ঝরে হতাশা।
দর্শকদের হতাশা না ঝরার কোনো কারণও নেই। পাকিস্তানের ইনিংসে ছক্কা হয়েছে মাত্র ২টি। বাউন্ডারি ছিল ৮টি। ৪৮ বলে তারা কোনো রান নিতে পারেনি। ইংল্যান্ডের ইনিংসে ২ ছক্কার সঙ্গে বউন্ডারি ছিল ১৩টি। তাদের ব্যাটসম্যানরা ৪৯ বলে নিতে পারেননি কোনো রান।
ম্যাচ যদি হয়ে উঠে বোলারদের আগ্রাসীর বিচরণ ক্ষেত্রে, তা’হলে সেখানে কি আর ব্যাটসম্যানদের আগ্রাসী হওয়ার কোনো সুযোগ থাকে। পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৮ রান করা শান মাসুদ বল খেলেন ২৮টি। অধিনায়ক বাবর আজমের ৩২ রান ছিল ইনিংসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তার জন্য তিনি বলের ব্যবহার করেছিলেন ২৮টি। শাদাব খানের ২০ রান এসেছে ১৪ বলে। মোহাম্মদ রিজওয়ান ১৬ রান করেন ১৫ বলে। আর কোনো ব্যাটসম্যান দুই অংকের রান করতে পারেননি। ভয়ঙ্কর হয়ে উঠা ইংল্যান্ডের পেসার সাম কোরান ৪ ওভারে মাত্র ১২ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। পেয়ে ফাইনালে ম্যাচ সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও। আদিল রশিদ ২২ ও ক্রিস জর্ডান ২৭ রানে নেন ২টি করে উইকেট। দুই জনেই বোলিং করেন ৪ ওভার করে।
এমপি/আরএ/