মেলবোর্নে যত ফাইনাল
এক সময় আইসিসির ডালে ছিল একটি মাত্র ফুল। সে ফুলটির নাম ছিল বিশ্বকাপ ক্রিকেট। আর বিশ্বকাপ ক্রিকেট মানেই ছিল ৫০ ওভারের ম্যাচ। এখন আইসিসির ডালে আরও ফুল ফুটেছে। যে কারণে বিশ্বকাপ বললেই এখন আর ৫০ ওভারের ম্যাচ বোঝায় না। আরও দু'টি বৈষয়িক আয়োজন আছে। একটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, অপরটি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। এখন চলছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। রবিবার (১৩ নেভম্বর) মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে এর পর্দা নামবে ইংল্যান্ড ও পাকিস্তানের ফাইনাল খেলা দিয়ে।
এক সময় আইসিসির বিশ্বকাপ বলতেই যেমন ৫০ ওভারের ম্যাচকে বোঝানো হতো। ঠিক তেমনি সেই আয়োজন বলতেই ছিল ইংল্যান্ড আর ফাইনাল মানেই লর্ডস। আইসিসি প্রথম তিনটি আসরের ভেন্যু ছিল ইংল্যান্ড এবং লর্ডস। সেই বৃত্ত ভেঙ্গে আইসিসি বের হয়ে এসেছিল ১৯৮৭ সালে উপমহাদেশে বিশ্বকাপের আয়োজন করে। তারপর থেকেই বিশ্বকাপ ঘুরছে চক্রাকারে মহাদেশ থেকে মহাদেশে। সঙ্গে অন্য আসরগুলোও।
লর্ডসে ওয়ানডে বিশ্বকাপের প্রথম তিনটি আসরের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হওয়ার পরও ১৯৯৯ ও ২০১৯ সালের আসরের ফাইনালেরও ভেন্যু ছিল লর্ডস। এ ছাড়া, ২০০৯ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ প্রথমবার আয়োজন করেও ফাইনালের ভেন্যু লর্ডস রাখা হয়েছিল। ফাইনাল ম্যাচ আয়োজনের দিক দিয়ে অন্য যেকোনো ভেন্যুর চেয়ে লর্ডস তাই এগিয়ে। এর পরই আছে মেলবোর্ন। আগামীকাল এই ভেন্যু অনুষ্ঠিত হবে তৃতীয় ফাইনাল। আগের দুটি ছিল ওয়ানডে বিশ্বকাপের ১৯৯২ ও ২০১৫ সালে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অস্ট্রেলিয়া এককভাবে আয়োজন করলেও ওয়ানডে বিশ্বকাপ আয়োজন করেছিল নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে যৌথভাবে আর ফাইনাল ম্যাচের ভেন্যু হয়েছিল মেলবোর্ন। ১৯৯২ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল পাকিস্তান ২০১৫ সালে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। এবার কে পাকিস্তান, না ইংল্যান্ড?
১৯৯২ সালের মতো দুই দল এবার ও মুখোমুখি। সেবার ছিল ওয়ানডে, এবার টি-টোয়েন্টি।১৯৯২ সালের ফাইনালে পাকিস্তান ২২ রানে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। টস জিতে ইমরান খানের পাকিস্তান ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেটে করেছিল ২৪৯ রান। তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামা অধিনায়ক ইমরান খানের ৭২, জাভেদ মিয়ানদাদের ৫৮, ইনজামামুল হকের ৪২ ও ওয়াসিম আকরামের ১৮ বলে ৩৩ রানের ইনিংস পাকিস্তানকে এই রান সংগ্রহ করতে বড় ভূমিকা রেখেছিল। ইংল্যান্ডের ডেরেক প্রিঙ্গল ১০ ওভারে মাত্র ২২ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন।
৩০ বছর আগে এই রান ছিল অনেক নিরাপদ সেই নিরাপদ সংগ্রহটা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল ইমরান খান, ওয়াসিম আকরাম, আকিব জাভেদ, মোস্তাক আহমেদের মত বোলারদের কারণে। এদের তোপে পড়ে গ্রায়াম গুচ, আয়ন বোথাম,স্টুয়ার্ট, গ্রায়াম হিক, নেইল ফেয়ার ব্রাদার, অ্যালান ল্যাম্বের মতো শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনও টিকে থাকতে পারেনি ৫০ ওভার পর্যন্ত। ৪৯.২ ওভারে ২২৭ রান করে ইংল্যান্ড অল আউট হয়েছিল। নেইল ফেয়ার ব্রাদার সর্বোচ্চ ৬২ রান করেছিলেন। দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান এসেছিল অতিরিক্ত থেকে রান ২৪। মোস্তাক আহমেদ ৪১ ও ওয়াসিম আকরাম ৪৯ রানে ৩টি করে এবং আকিব জাভদ ২৭ রানে ২টি উইকেট নিয়েছিলেন। ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন ওয়াসিম আকরাম।
১৯৯২ সালে মেলবোর্নে দ্বিতীয় ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। প্রতিপক্ষ ছিল আয়োজক আরেক দেশ নিউজিল্যান্ড। দুই স্বাগতিকদের লড়াইটা যেমন জমে ওঠার কথা ছিল তেমনটি হয়নি। এই না হওয়ার কারণ ছিল অস্ট্রেলিয়ান বোলাররা। টস জিতে নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক ব্র্যান্ডন ম্যাককালামের ব্যাটিং করার সিদ্ধান্তটা ভুল প্রমাণ করে দেন অজি বোলাররা মাত্র ১৮৩ রানে অলআউট করে দিয়ে। দলেরপক্ষে সর্বোচ্চ ৮৩ রান করেন গ্রান্ট ইলিয়ট। এ ছাড়া ৪০ রান এসেছিল করস টেলরের ব্যাট থেকে। হ্যাজেলহুড ৩০ ও জেমস ফকনার ৩৬ রানে নেন তিনটি করে উইকেট। মিচেল স্টার্ক ২০ রান খরচ করে নেন দশ ২ উইকেট। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে অস্ট্রেলিয়ানরা মাত্র ৩৩.১ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে যায় ১৮৬ রান করে। অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক ৭৪, স্টিভেন স্মিথ অপরাজিত ৫৬ ও ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ৪৫ রান করেন। ম্যাট হ্যানরি ৪৬ রানে নেন দুই উইকেট। ম্যাচ সেরা হন জেমস ফকনার।
এমপি/এমএমএ/