ফাইনালে মেলবোর্নের টিকিট পেল পাকিস্তান
২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত ফাইনালে ক্রিকেট বিশ্ব প্রথমবারের মতো দেখেছিল ভারত ও পাকিস্তানের স্বপ্নের ফাইনাল। এরপর পাকিস্তান ও ভারত আরও দুইবার ফাইনাল খেলেছে। যেখানে প্রতিপক্ষ ছিল অপর দল। এবার অষ্টম আসরে আবার সেই সম্ভাবনা প্রবলভাবে জেগে উঠেছে।
প্রথম সেমি ফাইনালে সহজেই নিউজিল্যান্ডকে ৭ উইকেটে হারিয়ে পাকিস্তান নিজেদের কাজটি করে রেখেছে। এখন ভারতকে করতে হবে তাদের কাজ। আগামীকাল (১০ নভেম্বর) বৃহস্পতিবার অ্যাডিলেডে দ্বিতীয় সেমিতে তাদের হারাতে হবে ওয়ানডে ক্রিকেটের বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের মুকুটধারী ইংল্যান্ডকে। তাহলেই ১৩ নভেম্বর রবিবার মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হবে পাক-ভারত স্বপ্নের ফাইনাল।
একটি সেমি ফাইনাল ম্যাচ যে রকম হাড্ডাহাড্ডি হওয়ার কথা ছিল, তার ছিটে-ফোঁটাও হয়নি। এই না হওয়ার কারণ পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের লড়াকু খেলা। যে দলের সেমি ফাইনাল খেলাই ছিল অনিশ্চিত। প্রথম দুই ম্যাচ হেরে ‘যদি’র উপর বেঁচে ছিল সেমিতে খেলার সম্ভাবনা। সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে অঘটনের জন্ম দেওয়া নেদারল্যান্ডস সেই সম্ভাবনার দ্ধার খুলে দেয়। এমন সুযোগ পেয়ে পাকিস্তান মোটেই হাত ছাড়া করেনি।
অলিখিত কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশকে লড়াই করারই সুযোগ দেয়নি। ভারত ও জিম্বাবুয়ের কাছে প্রথম দুই ম্যাচে হারের পরই পাকিস্তান নিজেদের ফিরে পেতে শুরু করেছিল। সেই ধারবাহিকতা ধরে রেখেই তারা পেয়ে গেছে মেলবোর্নের টিকিট।তাদের উদ্যেমী লড়াইয়ের সামনে নিউজিল্যান্ডও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। নিউজিল্যান্ডের করা ৪ উইকেটে ১৫২ রান পাকিস্তান অতিক্রম করে ৫ বল হাতে রেখে ৩ উইকেট হারিয়ে ১৫৩ রান করে।
পাকিস্তানের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা মাত্র ২টি ছক্কা ও ১০টি চার হাঁকাতে পেরেছিলেন। ৩৭ বলে তারা কোনো রান নিতে পারেননি। পকিস্তানের ব্যাটসম্যানদের মারমুখি ব্যাটিংয়ে ইনিংসে ছয় ছিল ১টি, বাউন্ডারি ছিল ১৪টি। ডট বল ছিল ৩৩টি।
৪৮ হাজার ধারণ ক্ষমতার সিডরি ক্রিকেটে স্টেডিয়ামে সাপ্তাহিক কর্মদিবসে প্রায় ভরে উঠেছিল। দর্শক উপস্থিতি ছিল ৩৬,৪৪৩। যার অধিকাংশই ছিলেন পাকিস্তানের সমর্থক। তাদের সমস্বরে পাকিস্তান পাকিস্তান ধ্বনি মাঠ প্রকম্পিত করে তুলে। তাদের এই আওয়াজে বাবার আজম বাহিনীও যেন আরও বেশি করে উজ্জ্বীবিত হয়ে উঠেন। এক একটি উইকেট পতন কিংবা চার-ছক্কার সময় গোটা স্টেডিয়াম দোলে উঠেছে। বল হাতে বোলাররা যেন নিজেদের সেরাটা ঢেলে দেন, তেমনি ব্যাট হাতে ব্যাটসম্যানরা। এই দুই সমন্বয়ে পাকিস্তানের জয় আসে অবলীলায়।
টস জিতে নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বড় সংগ্রহের আশায়। কিন্তু তার সেই আশায় পানি ঢেলে দিয়েছিলেন পাকিস্তানের বোলাররা। যে কারণে তাদের সংগ্রহ মাত্র ১৫২ রানে আটকে যায়। যদিও তারা উইকেট হারিয়েছিলেন মাত্র ৪টি। এতেই বোঝা যায় শাহিন শাহ আফ্রিদী (৪-০-২৪-২), নাসিম শাহ (৪-০-৩--০), হারিস রউফ ( ৪-০-৩২-০) মোহাম্মদ ওয়াসিম (২-০-১৫-০), মোহাম্মদ নেওয়াজরা (২-০-১২-০) কী আগুন ঝরা বোলিং করেছিলেন। নিউজিল্যান্ডের হয়ে ৩৫ বলে সর্বোচ্চ অপরাজিত ৫৩ রান করেন ড্যারেল মিশেল। অধিনায়ক উইলিয়ামসন করেন ৪২ বলে ৪৬। ডেভন কনওয়ে ২০ বলে করেন ২১ রান।
মেলবোর্নের টিকিট পেতে হলে করতে হবে ১৫৩ রান। একেবারে সহজ নয়। আবার কঠিনও নয়। পাকিস্তানের বোলাররা অন্তত ব্যাটসম্যানদের জন্য খুব কঠিন টার্গেট দেননি। কিন্তু মোহাম্মদ রিজওয়ান ও বাবার আজম এমন খেলা শুরু করেন, যে ১৫২ রান অতিক্রম করা তখন মামুলি হয়ে উঠে। যে বাবর আজম ধুকছিলেন রান খরায়।
এবারের আসরে আগের ৫ ম্যাচে তার সাকুল্যে রান ছিল মাত্র ৪০। দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পেরেছিলেন শুধুমাত্র বাংলাদেশের বিপক্ষে ২৫ রান করে, সেই বাবর আজম ফিরে পান নিজেকে। খেলেন ৪২ বলে ৭ চারে ৫৩ রানের ইনিংস। অপরদিকে মোহাম্মদ রিজওয়ান এমনিতেই আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। খেলতে নামলেই হাঁকাচ্ছেন হাফ সেঞ্চুরি। তিনি এই ম্যাচেও ছিলেন যথারীতি ফর্মে। খেলেন ৫৭ রানের ইনিংস।।
দুই প্রান্তে দুই জন জ্বলে উঠাতে, নিউজিল্যান্ডের বোলিং আক্রমণ মুখ থুবড়ে পড়ে। তারা যেভাবে খেলছিলেন তাতে করে মনে হয়েছিল পাকিস্তান ১৫৩ রান নয়, ২৫৩ রানের লক্ষ্য নিয়ে খেলছে। তাদের উ্মাতাল ব্যাটিংয়ে পাকিস্তানের ১০ উইকেটে জয়ের সম্ভাবনা জেগে উঠেছিল। ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে রান আসে বিনা উইকেটে ৫৫। উদ্বোধনী জুটি ভাঙে ১০৫ রানে ১২.৪ ওভারে। ৬ ম্যাচ পর ক্যারিয়ারের ৩০তম ফিফটি তুলে নিয়ে আউট হন বাবর আজম বোল্টের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে মিচেলের হাতে। ৩৮ বলে পেয়েছিলেন হাফ সেঞ্চুরির দেখা। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ১ রানের জন্য হাফ সেঞ্চুরির দেখা না পাওয়া মোাহম্মদ রিজওয়ান আজ হাফ সেঞ্চুরির দেখা পান ৩৬ বলে ।
এটি ছিল তার ক্যারিয়ারের ২৩তম। ৪৩ বলে ৫৭ রান করে বোল্টের বলে ফিলিপের হাতে ধার পড়ে বিদায় নেন। রিজাওয়ান যখন আউট হন, পাকিস্তান তখন জয় থেকে মাত্র ২১ রান দূরে। সেই কাজটি মোহাম্মদ হারিস ও শান মাসুদ করার পথেই ছিলেন। কিন্তু জয় থেকে ২ রান দূরে থাকতে মিচেল স্যান্টনারে বলে ফিন অ্যালেনের হাতে ধরা পড়ে মোহাম্মদ হারিস ২৬ বলে ১টি করে চার ও ছয় মেরে ৩০ রানে আউট হয়ে যান। বাকি কাজ করেন শান মাসুদ ৩ ও ইফতেখার আহমেদ ০ রানে অপরাজিত থেকে। নিউজিল্যান্ডের হয়ে বোল্ট ৩৩ রানে ২টি ওে স্যান্টনার ২৬ রানে নেন ১টি করে উইকেট।
এমপি/এমএমএ/