আবার জেগে উঠার অপেক্ষায় অ্যাডিলেড ওভাল
অস্ট্রেলিয়ার সেরা ভেন্যুগুলোর একটি অ্যাডিলেড ওভাল। নয়নাভিরাম। সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান স্যার ডন ব্যাডম্যানের অবসরকালীন জীবনের ঠিকানা এই অ্যাডিলেড। এখানে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের খেলাগুলো পড়েছে সবার শেষে। অন্য ভেন্যুগুলোতে যখন একের পর এক খেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, ঘটছে অঘটন। অ্যাডিলেড তখন নীরব দর্শক। সেই অ্যাডিলেড জেগে উঠেছিল বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ দিয়ে। এরপর পাকিস্তানের বিপক্ষেও ছিল বাংলাদেশের খেলা। এই দুটি ম্যাচ এবারের বিশ্বকাপের সবচেয়ে বেশি আলোচিত-সমালোচিত।
অ্যাডিলেড ওভাল বিলম্বে খেলা পেলেও বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারত ও পাকিস্তানের ম্যাচ দিয়ে আলোচনার শীর্ষে। এবারের আসরে এমন আলোচিত-সমালোচিত ম্যাচ আর হয়নি। বিলম্বে খেলা শুরু হলেও এখানে খেলা হয়েছে ৩ দিনে মোট ৬টি। বাংলাদেশ-ভারতের আলোচিত ম্যাচের আগে এই ভেন্যুতে প্রথম ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল জিম্বাবুয়ে ও নেদারল্যান্ডসের। বাকি তিনটি ম্যাচ ছিল নিউ জিল্যান্ড-আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া-আফগানিস্তান এবং দক্ষিণ আফ্রিকা-নেদারল্যান্ডসের। অ্যাডিলেড ওভালে শুধু বাংলাদেশের বিপক্ষে পাকিস্তান ও ভারতের আলোচিত-সমালোচিত ম্যাচই অনুষ্ঠিত হয়নি। এখানে আসরের অন্যতম অঘটনও ঘটে। যে অঘটনের জন্ম দিয়েছিল নেদারল্যান্ডস দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে।
এবারের আসরে অঘটন অনেক ঘটেছে। যেমন জিম্বাবুয়ের কাছে পাকিস্তানের হার, আয়ারল্যান্ডের কাছে ইংল্যান্ডের হার। কিন্তু এই হারগুলো শুধুই অঘটনের জন্ম দিয়েছে। পাকিস্তান ও ইংল্যান্ডের সেমিতে যাওয়ার পথ আটকাতে পারেনি। শুধু একটু কঠিন হয়ে উঠেছিল। কিন্তু নেদারল্যান্ডসের কাছে দক্ষিণ আফ্রিকার হারে শুধু তাদেরই সেমি ফাইনালে খেলা বঞ্চিত করেনি, পাকিস্তান-বাংলাদেশের সেমি ফাইনালে যাওয়ার ‘যদি’ নির্ভর ম্যাচটি হয়ে উঠে অলিখিত কোয়ার্টার ফাইনাল। আবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচের উপর নির্ভর করছিল ভারতের সেমিতে খেলা। দক্ষিণ আফ্রিকার হারে ভারতও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মাঠে নামার আগেই সেমিতে খেলা নিশ্চিত হয়ে যায়। অথচ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা জয়ী হলে তারা সরাসরি চলে যেত সেমিতে। পাকিস্তানেরও সেমিতে যাওয়া হতো না। পরে জিম্বাবুয়েকে হারানোতে ভারত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই সেমিতে উঠে। সেই ওভালে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের ম্যাচের পর নীরবতা নেমে এসেছিল। আবার জেগে উঠার অপেক্ষায়। কারণ এখানে অনুষ্ঠিত হবে ভারত ও ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় সেমি ফাইনাল, আগামী ১০ নভেম্বর।
বিশ্ব ক্রিকেটে ভারতের ম্যাচ মানেই অন্যরকম উত্তেজনা। দর্শকদের হুমড়ি খেয়ে পড়া। সেখানে সেমি ফাইনাল ম্যাচ হওয়ায় দর্শকদের উত্তেজনায় ঢেউ বেশি লাগবে এটাই স্বাভাবিক। সেটার ঢেউ অ্যাডিলেডে ইতোমধ্যে লাগতে শুরু করেছেও। লিগ পর্বের খেলা চলাকালীন হোটেল, বাসা, ব্যাকপ্যাকার্সের ভাড়া খুব বেশি বেড়ে গিয়েছিল। ৬ নভেম্বর খেলা শেষ হওয়ার পর আবার তা স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরে আসে। কিন্তু অ্যাডিলেডে ভারতের সেমি ফাইনাল খেলা নিশ্চিত হওয়ার পর আবার ভাড়া বাড়তে শুরু করেছে। অনলাইনে বুকিং চাপের খুব বেশি। অ্যাডিলেডে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভারতীয়র বসবাস। তারপরও সিডনি, মেলবোর্ন, ব্রিসবেন, পার্থ, ক্যানবেরা থেকে ভরাতীয় দর্শকরা আসার জন্য বুকিং দেওয়া শুরু করেছেন। বেড়ে গেছে বিমানের ভাড়াও। কাজেই বোঝা যাচ্ছে ১০ নভেম্বর অ্যাডিলেড ওভাল আবার সরগরম হয়ে উঠবে।
মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) সকালে অ্যাডিলেড কিছুটা নীরব ছিল। নিরাপত্তাকর্মীরা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত মুষ্টিমেয় কিছু সংখ্যক লোক ছাড়া আর তেমন একটা লোকজন চোখে পড়েনি। কিন্তু বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে অ্যাডিলেড ওভাল কিছুটা নড়েচড়ে উঠে। কারণ ভারতীয় দল অনুশীলন করছে। ভারতীয় সাংবাদিকদের উপচে পড়া ভিড়। তাদের আলোচনায় ইংল্যান্ডের চেয়েও বেশি অধিনায়ক রোহিত শর্মার ইনজুরি নিয়ে। তিনি খেলবেন, নাকি খেলবেন না এটি নিয়ে চলছিল ভারতীয় সাংবাদিকদের আলোচনা-গবেষণা।
এদিকে নিরাপত্তাকর্মীরাও তটস্থ হয়ে উঠেন। কারণ ভেতরে প্রবেশধারীদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড পরীক্ষা করতে হচ্ছিল। সঙ্গে থাকা ব্যাগও। উৎসাহী ভারতীয় দর্শকরাও চলে আসেন রোহিত-কোহলিদের অনুশীলন দেখতে। এদিন ইংল্যান্ড দল অনুশীলন করেনি।
দ্বিতীয় সেমি ফাইনালকে সামনে রেখে আবহাওয়ার যে পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে তাতে করে তিন দিনের বিরতির পর আবার জেগে উঠার অপেক্ষায় অ্যাডিলেড ওভাল।
এমপি/এসজি