বিশ্বকাপে বাংলাদেশ কি আসলেই ভালো খেলেছে?
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ কেমন খেলেছে? এমন প্রশ্নের উত্তর যে কেউ দেবেন অনেক ভালো খেলেছে। যারা এ রকম উত্তর দেবেন তাদের পক্ষে যুক্তিও আছে। কারণ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাংলাদেশ খেলতে গিয়েছিল খুবই নাজুক অবস্থায়। লক্ষ্যহীন অংশগ্রহণ। নেই কোনো আশা। জয় পাওয়া দূর আকাশের চাঁদ। যদি ভালো খেলা যায় তাতেই মঙ্গল।
প্রাথমিক রাউন্ড থেকে জিম্বাবুয়ে নেদারল্যান্ডস বাংলাদেশের গ্রুপে আসার পর জয়ের আশা উঁকি দিতে শুরু করে। জয় পাবই-মনে কিন্তু এরকম জোর ছিল না দলের। অথচ এই নেদারল্যান্ডনস জিম্বাবুয়েকে এক সময় বাংলাদেশ বলে-কয়ে হারাত। সময়ের পরিক্রমায় বাংলাদেশ সেই মনের জোরও হারিয়ে ফেলেছ! শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ এই দুইটি দলকেই হারিয়েছে। তবে সেই জয় সহজ ছিল না। কন্টাকাকীর্ণ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে কোনো রকমে পার পায়। ম্যাচ জিতে ৯ রানে। আর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তো হারতে হারতে শেষ পর্যন্ত জিতেছিল ৩ রানে।
এই দুটি জয়কে খুবই বড় করে দেখা হচ্ছে। কিন্তু আসলেই কি এগুলো বড় জয়? ১৫ বছর পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এক আসরে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো পেয়েছে দুই জয়। এটিকে বলা হচ্ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বড় সাফল্য। অথচ ১৫ বছর আগে প্রথম আসরে বাংলাদেশ যে প্রথম জয় পেয়েছিল, তা ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের মত দলের বিপক্ষে। সেখানে জিম্বাবুয়ে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয় কি আহামরি কিছু? এই দুইটি জয়কে কিন্তু প্রত্যাশীতই বলা যায়। বাংলাদেশ কিন্তু বড় কোনো দলকে হারাতে পারেনি। যেমনটি নামিবিয়া হারিয়েছিল শ্রীলঙ্কাকে, ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল আয়ারল্যান্ড, আর দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে আসর থেকে তো বিদায়ই করে দিয়েছে নেদারল্যান্ডস।
বাংলাদেশ যে তিনটি ম্যাচে হেরেছে সেখানে একমাত্র ভারত ছাড়া বাকি দুটি ম্যাচে ছিল খুবই শোচনীয় হার। দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ১০৯ রানে, পাকিস্তানের কাছে ৫ উইকেটে। আলোচিত সমালোচিত ম্যাচে ভারতের কাছে হেরেছে ৫ রানে।
বাংলাদেশের শেষ দুটি ম্যাচ ছিল ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে আ্যডিলেডে। এই দুটি ম্যাচই বাংলাদেশকে আসরে আলোচিত দলে পরিণত করে। দুইটি ম্যাচেই বাংলাদেশ পক্ষপাতদুষ্ট ও ভুল আম্পায়ারিংয়ের শিকার হয়। যা নিয়ে ক্রিকেট বিশ্ব তোলপাড়। সাবেক ক্রিকেটার থেকে শুরু করে ক্রিকেট বিশ্লেষক,সবাই বাংলাদেশের বিপক্ষে যাওয়া সিদ্ধান্তগুলোর তুমুল সমালোচনা করছেন। আর এই সমালোচনায় আড়ালে পড়ে গেছে বাংলাদেশ বিশ্বকাপে সফল হয়েছে, না ব্যর্থ হয়েছে। আক্ষরিক অর্থে বাংলাদেশকে সফল বলা যায় না। তবে সময়ের প্রেক্ষাপটে আগের তুলনায় কিছুটা ভালো খেলেছে।
ভারতের বিপক্ষে ফেক ফিল্ডিং থেকে পেনাল্টি হিসেবে ৫ রান না পাওয়া কিংবা ভেজা মাঠে খেলা শুরু করার পর লিটন দাসের পড়ে যাওয়া অথবা পরে রান আউটকে দেখা হচ্ছে দলের মোমেন্টাম নষ্ট হওয়া হিসাবে । কিন্তু বাংলাদেশ কি শুধু লিটন দাসের উপরে নির্ভরশীল! পাকিস্তানের বিপক্ষে টিভি আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তের শিকার হয়ে অধিনায়ক সাকিবের আউট হওয়াকেও বলা হচ্ছে মোমেন্টাম নষ্ট হওয়ার কারণ। এখানেও সেই একই প্রশ্ন চলে আসে বাংলাদেশ কি তাহলে শুধু সাকিবের উপরে নির্ভরশীল!
জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার জাভেদ ওমর বেলিম গুল্লু বলেন, ‘দেখুন বিশ্বকাপে বাংলাদেশ আহামরি ভালো করেছে এটা বলা যাবে না। আমরা কিন্তু বড় কোনো দলকে হারাতে পারেনি। নেদারল্যান্ডস জিম্বাবুয়েকে আমরা সব সময় হারাতাম। এবারও হারিয়েছি। তবে সহজে নয়। ভারতের বিপক্ষে জয়ী হতে পারলে সেটা আমাদের অনেক বড় অর্জন হতো। এই একটি ম্যাচেই আমরা সবচেয়ে ভালো খেলেছি। আমাদের এই ভালো খেলাটা ধরে রাখতে হবে। তা ছাড়া বাংলাদেশকে সবসময়ই কিন্তু ভালো খেলার পরীক্ষা দিতে হচ্ছে।'
এমপি/আরএ/