শেষটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের
শেষ ভালো যার সব ভালো তার- বাংলার এই প্রবাদ বাক্যটি এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের ক্ষেত্রে সততার ঢালি নিয়ে হাজির হয়েছিল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নামার আগে বাংলাদেশ দল নিউ জিল্যান্ডে স্বাগতিকদের সঙ্গে পাকিস্তানের অংশগ্রহণে তিন জাতির আসর খেলেছিল। এই আসর বাংলাদেশ খেলতে গিয়েছিল পেছনে বিবর্ণ অতীতকে সঙ্গী করে। যদি এই আসর দিয়ে ঢাকা যায় বিবর্ণ অতীত।
তবে আসরে বাংলাদেশ দল কোনো ম্যাচ জিততে পারেনি। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের ক্রমেই উন্নতির দিকে নিয়ে গিয়েছিল। হারের মাঝেও যে উন্নতির ছায়া থাকে এই আসর ছিল তারই জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। যার বাস্তবায়ন দেখা যায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। যেখানে বাংলাদেশ খেলতে গিয়েছিল লক্ষ্য ছাড়া। সেখানে জিতেছে দুইটি ম্যাচ। যা ছিল আবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে এক আসরে বাংলাদেশের সেরা সাফল্য। এর আগে জয় ছিল মাত্র একটিতে। ২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত প্রথম আসরে উইন্ডিজের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে।
নিউ জিল্যান্ডে তিন জাতির আসরে বাংলাদেশ ক্রমেই উন্নতির দিকে ধাবমান হলেও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ২টি জয় তুলে নেয়। যা আবার ছিল উত্থান-পতনের মাঝে। এক ম্যাচ জিতে, পরের ম্যাচ হারে বাজেভাবে। আবার পরের ম্যাচ জিতে টানটান উত্তেজনায়, এরপরের ম্যাচ আবার হার একইভাবে টানটান উত্তেজনায়।
এরই ধারবাহিকতায় ঝড়ে কুঁড়িয়ে পাওয়া আমের মতো নেদারল্যান্ডসের কাছে দক্ষিণ আফ্রিকার হারে বাংলাদেশের জন্য সরাসরি সেমি ফাইনালে খেলার দুয়ার উন্মুক্ত হয়ে যায়। ভারতের বিপক্ষে বহুল আলোচিত-সমালোচিত হারের তরতাজা স্মৃতি, যে স্মৃতি মনোবল বৃদ্ধিতে উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে, তা পুঁজি করে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতে নেমেছিল। কিন্তু এমন একটি সুযোগ হাতে পেয়ে বাংলাদেশ দল যেখানে নিজেদের সেরাট দিবে, সেখানে তারা ফিরে যায় নিজেদের চিরচেনা রূপে। লড়াই-ই করতে পারেনি।
এ যেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই গানের কথাই মনে করিয়ে দেয় সবাইকে-
‘পুরানো সেই দিনের কথা
ভুলবি কি রে হায়
ও সেই চোখের দেখা প্রাণের কথা
সে কি ভোলা যায়’
নিউ জিল্যান্ডে তিন জাতির আসরে শেষ ভালো ছিল বলে তার সুফল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কম-বেশি বাংলাদেশ দল পেয়েছে। কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তো শেষ ভালো হয়নি।
ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের পরে ও পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের আগে পেসার তাসকিন আহমেদ, টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট শ্রীধরন শ্রীরাম বলেছিলেন শেষ ম্যাচে তারা ভালোভাবে শেষ করতে চান। পাকিস্তানকে হারাতে চান। তখনো সেমিতে যাওয়ার রাস্তা সরাসরি উন্মুক্ত ছিল না। যে কারণে এই দুইজনই সেমিতে খেলার প্রসঙ্গটি মাথায়ই ঢোকাননি। কিন্তু তাদের কথার সঙ্গে মাঠের লড়াইয়ের মিল খোঁজে পাওয়া যায়নি। তাহলে কি বাংলাদেশ দল নিজেদের সেই চেনা রূপেই ফিরে গেল?
জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার জাভেদ ওমর বেলিম তা মনে করেন না। তিনি মনে করেন এটি আবেগের কথা। এখানে আবেগের কোনো জায়গা নেই।
তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়া বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। তারা সেমিতে যেতে পারেনি তাই বলে তারা কি সব সময় বাজে খেলবে? দক্ষিণ আফ্রিকা গোটা আসর ভালো খেলে শেষ ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছে। তাই বলে কি তারা আর ভালো খেলতে পারবে না? এটা ঠিক, শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ প্রত্যাশা মতো খেলতে পারেনি। কিন্তু এখানে আবেগের জায়গা নেই। বাংলাদেশ অবশ্য অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা নয়। তাদের সব সময় নিজেদের প্রমাণ করতে হয় ভালো খেলার জন্য। এটি এখন করে যেতে হবে।
এমপি/এসজি