বাংলাদেশের আশাভঙ্গ, সেমিতে পাকিস্তান
ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের যে লড়াকু খেলা দেখা গিয়েছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে তার ছিটে-ফোঁটাও ছিল না। নেদারল্যান্ডসের কাছে দক্ষিণ আফ্রিকার ১৩ রানে পরাজয় বাংলাদেশ-পাকিস্তানের ম্যাচ হয়ে উঠেছিল অলিখিত কোয়ার্টার ফাইনাল।
খেলা শুরু হওয়ার আধ ঘণ্টা আগে হঠাৎ করে এ রকম সমীকরণে দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে অন্যরকম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। মাঠে এসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রাও সশরীরে দেখেছেন নিজেদের অবস্থানের পরিবর্তনের। সব সমীকরণ উধাও। সেমিফাইনালে খেলার সমীকরণ সহজ হয়ে উঠে। শুধু জয়। তার জন্য প্রয়োজন ছিল নিজেদের সেরাটা খেলা। কিন্তু এবারের আসরে দারুণ খেলতে থাকা বাংলাদেশ দল আসল সময় এসেই খেই হারিয়ে ফেলে। ফিরে যায় নিজেদের চিরচেনা রূপে। যেখানে আছে শুধুই ব্যাটিং ব্যর্থতা। যে ব্যাটিং ব্যর্থতার শিকার হয়ে বাংলাদেশ করে ৮ উইকেটে মাত্র ১২৭। যে রান পাড়ি দিতে গিয়ে পাকিস্তানকে কোন সমস্যাই পড়তে হয়নি। ১৮.১ ওভারে ৫ উইকেটে ১২৮ রান করে পাকিস্তান। তারা ৫ উইকেটে ম্যাচ জিতে পৌঁছে গেছে সেমিতে। ৯ নভেম্বর তারা সিডনিতে প্রথম সেমিফাইনাল খেলবে ‘এ’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।
ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের যে চমৎকার ব্যাটিং শৈলি দেখা গিয়েছিল, তা পাকিস্তানের বিপক্ষে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত ছিল। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ ১৬ ওভারে করেছিল ৬ উইকেটে ১৪৫। আর এ ম্যাচে এ রান করার জন্য সংগ্রাম করতে হয়েছে ব্যাটসম্যানদের।
রোদ ঝলমলে আবহাওয়া থাকায় টস জিতে বাংলাদেশ এদিন ব্যাটিং বেছে নিয়েছিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব। পাশাপাশি আগের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ব্যাটিং সাফল্যও একটি কারণ হয়ত ছিল। সেখানে বাংলাদেশ অনেকটা সফলও হয়েছিল। আগের ম্যাচে উন্মাতাল ব্যাটিং করা লিটন দাস এদিনও শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ৮ বলে ১০ রান করে ফিরে যাওয়ার পর নাজমুল ও সৌম্য মিলে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এই জুটির ৭.৫ ওভারে ৫১ রান বাংলাদেশের সংগ্রহ দেড়শ ছাড়ার ইঙ্গিত ছিল। এ সময় বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ৭০। কিন্তু এই জুটি ভেঙ্গে যাওয়ার পর বাংলাদেশ পথ হারিয়ে ফেলে। একই ওভারে পরপর ২ বলে সৌম্য ও সাকিব আউট হওয়ার পর নাজমুল হোসেন শান্ত ৪৬ বলে এবারের বিশ্বকাপে দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পরপরই আউট হলে বাংলাদেশের বড় সংগ্রহের আশা মাটিচাপা পড়ে যায়। এর মাঝে অধিনায়ক সাকিব আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে শিকার হন। ব্যাটে বল লাগার পরও আম্পায়ার আউট দিলে সাকিব সঙ্গে সঙ্গেই রিভিউ নেন। কিন্তু টিভি আম্পায়ারও তার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। স্নিকোমিটারে যেটি ধরা পড়ে সেটি ব্যাট মাটিতে লাগার শব্দ। তাই টিভি আম্পায়ার এই সিদ্ধান্ত দেন।
পথ হারানো বাংলাদেশ তাই প্রথম ১০ ওভারে যেখানে ১ উইকেট হারিয়ে ৭০ রান করেছিল, সেখানে পরের ১০ ওভারে ৭ উইকেটে যোগ করে ৫৭ রান। শেষ ৫ ওভারে বাংলাদেশ মাত্র ২৮ রান যোগ করে। বাউন্ডারি ছিল মাত্র ৪টি। নাজমুল হোসেন শান্তর ৫৪ রান ছাড়া আফিফ হোসেন ২০ বলে অপরাজিত ২৪, সৌম্য সরকার ১৭ বলে ২০ ও লিটন দান ৮ বলে ১০ রান করেন। শাহীন শাহ আফ্রিদী ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং করেন। সাদাব খান ৩০ রানে নেন ২ উইকেট।
বাংলাদেশের বোলিং লাইন খুবই ভালো। কিন্তু এই বোলিং লাইনের হাতে যদি মাত্র ১২৭ রানের পূঁজি দেওয়া হয়, সেখানে কি আর সম্ভব ম্যাচ জেতা কিংবা লড়াই করা। বাংলাদেশের বোলারদের পক্ষেও সম্ভব হয়নি। ১০ ওভারের আগে মোহাম্মদ রিজওয়ান ও বাবার আজমের উদ্বোধনী জুটিই ভা্ঙ্গা সম্ভব হয়নি। এতেই এক প্রকার নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল পাকিস্তানের জয়। কিন্তু বাংলাদেশের শক্তিশালী বোলিং লাইন পাকিস্তানকে একেবারে সহজেই জিততে দেয়নি। ৫ উইকেট তুলে নেন তারা। ৫৭ থেকে ৬১ এই ৪ রানে দুই ওপেনার বাবার আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান ফিরে যান। দুই জনকেই আউট করেন এবারের বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতে খেলতে নামা নাসুম আহমেদ ও এবাদত হোসেন। মোহাম্মদ নেওয়াজকে রান আউট করে বাংলাদেশ কিছুটা লড়াই করার ইঙ্গিত দিয়েছিল। কিন্তু মোহাম্মদ হারিস এসে ১৮ বলে ২ ছক্কা ও ১ চারে ৩১ রান করলে বাংলাদেশের লড়াই করার শেষ সম্ভাবনারও অপমৃত্যু ঘটে। শান মাসুদ ১৪ বলে ২৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেললে পাকিস্তান ১১ বল থাকতেই সেমিতে উঠে যায়।
এমপি/আরএ/