দর্শকদের অন্য রকম জয়
পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচ দেখার জন্য মেলবোর্ন থেকে অনেক দর্শক এসেছেন। গ্রুপে দুই দলের যে সমীকরণ তাতে করে জিতলেও ‘যদি’ নির্ভর সম্ভাবনা। কিন্তু সেমিফাইনালের বিষয়টি যেমন বাংলাদেশ দল মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়েছে, তেমনি দর্শকরাও। পাকিস্তানের বিপক্ষে ভালো একটি ম্যাচ দেখার আশা নিয়ে তারা এসেছেন। দলকে সমর্থন দিবেন। বাংলাদেশ বাংলাদেশ বলে গলা ফাটাবেন। নিজেদের ছোট ছোট বাচ্চাদের বাংলাদেশকে সচিত্র বুঝাবেন। জয় দিয়ে শেষ হলে খুবই ভালো। না হলেও আফসোস নেই।
এদিকে অ্যাডিলেডে যারা থাকেন তাদের অনেকেই আবার ট্রেনে করে মাঠে আসছেন। তাদের অনেকেই ভারতের বিপক্ষে মাঠে ছিলেন। পাকিস্তানের বিপক্ষেও মাঠে যাচ্ছেন। সেমিফাইনালের বিষয়টি তাদেরও মাথায় নেই। যাচ্ছেন বাংলাদেশকে সমর্থন দিতে, পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় দেখতে।
অ্যাডিলেড ওভালের ফান জোনে ভারতের বিপক্ষে দর্শকদের যে রকম উন্মাদনা ছিল। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। পাকিস্তানের বিপক্ষে সে রকম উন্মাদনা ছিল না। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও কোনও আয়োজন ছিল না। স্থানীয় বাংলাদেশি কমিনিউটরি অনেক পরিচিত মুখই ছিল অনুপস্থিত। সবাই নিজেদের মতো করে হালকা উৎসবে সময় কাটাচ্ছিলেন। আর মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকা-নেদারল্যান্ডসের ম্যাচের দিকে নজর রাখছিলেন। এই ম্যাচের উপরই নির্ভর করছিল বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচের ভাগ্য। দক্ষিণ আফ্রিকা হেরে গেলে বাংলাদেশ-পাকিস্তান যেকোনও দলের সেমির দুয়ার খুলে যাবে। আর হেরে গেলে পরের ম্যাচে জিম্বাবুয়ের কাছে ভারতের হার কামনা করতে হবে। কিন্তু সেই অপেক্ষায় আর বাংলাদেশ দর্শকদের থাকতে হয়নি। নেদারল্যান্ডসের কাছে ১৩ রানে দক্ষিণ আফ্রিকার হার নিশ্চিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফান জোনে উৎসবের ঢেউ লেগে যায়। যে উৎসবের ঢেউ দেখে যে কারও মনে হবে বাংলাদেশ জিতে গেছে। সেমিতে চলে গেছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামার আগেই বাংলাদেশ জিতে গেছে। এ এক অন্য রকম জয়। এ সময় দর্শকদের কণ্ঠে ছিল শুধুই দুইটি শব্দ ‘বাংলাদেশ জিতবেই’।
আসলেই দর্শকদের এ রকম উন্মাদনা ছিল যথাযথ। কারণ যে ম্যাচে সেমিতে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল সেই ম্যাচে যদি সরাসরি দুয়ার খুলে যায় এ রকম একটি উৎসবতো হতেই পারে। মোলবোর্ন থেকে দুই পুত্রকে নিয়ে খেলা দেখতে আসা আরিফের আনন্দের সীমা নেই। সেমিফাইনালে যাওয়ার রাস্তা যখন খুলে গেছে তখন সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ জিতবেই। সেমিফাইনালে খেলবে। মেলবোর্নের আরেক বাসিন্দা হাসান দম্পতি এক সঙ্গে গর্জন করে বলে উঠেন ‘খেলা হবে’। অ্যাডিলেডে থাকা দিনের কাজের ব্যস্ততার কারণে একটু পরে আসেন মাঠে। কিন্তু যখন এই সমীকরণ মিলে গেছে, তখন তার আর বিলম্ব সহ্য হচ্ছিল না।
এসআইএইচ