নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে চান তাসকিন
বাংলাদেশ দল এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিল কোন রকম আশা ছাড়াই। যতটুকু সম্ভব ভালো খেলে নিজেদেরকে মেলে ধরা এতে করে যদি প্রত্যাশার বাক্সে কিছু ঢুকে তবে তাই প্রাপ্তি, সেখানেই তৃপ্তি। এখানে বাংলাদেশ দলকে অনেকাংশেই সফল বলা যায়। এখন পর্যন্ত টিকে আছে সেমিফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে। এমন সম্ভাবনা থাকার পরও কিন্তু বাংলাদেশ সে পথে হাঁটছে না তাদের চাওয়া শেষ ম্যাচটা ভালোভাবে শেষ করা জয় দিয়ে। দলীয় এই যে সাফল্য সেখানে কিন্তু আছে ব্যক্তিগত সাফল্যের সমষ্টিগত ফলাফল।
এই ব্যক্তিগত সাফল্যে সবার চেয়ে এগিয়ে আছেন তাসকিন আহমেদ। এবারের বিশ্বকাপে টেস্ট বোলিংয়ের সবচেয়ে নজর কাড়া বোলার কি দারুন বোলিংই না করে যাচ্ছেন। প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের জন্য তিনি যেন সাক্ষাৎ একজন যমদূত। তিনি কি পরিমান যমদূত এবং তার বল খেলতে ব্যাটসম্যানরা কি পরিমান অস্বস্তিতে ভুগে থাকেন তার ছোট্ট একটি পরিসংখ্যান হতে পারে চার ম্যাচে ১৫ ওভার বল করে ৫৪ বলে কোন রান না দেওয়া। তার মানে তিনি ১৫ ওভারে ৯০ বল করে অর্ধেকেরও বেশি বলে পরান দেননি। ১০৫ রান দিয়ে উইকেট নিয়েছেন ৮টি। ইকোনমি রেট ৭.০০। সেরা বোলিং নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে চারবারে ২৫ রান দিয়ে চার উইকেট। লক্ষ্যনীয় বিষয় বাংলাদেশ যে দুটি ম্যাচে জয়ী হয়েছে সেই দুই ম্যাচেই ম্যাচ সেরা হয়েছেন তাসকিন। এতেই বুঝা যায় তিনি কি পরিমাণ জ্বলছে উঠেছেন। এখানেই শেষ নয় তাসকিনের কীর্তি ৫ ম্যাচের প্রথম তিনটিতে তিনি উইকেট পেয়েছেন ৮টি। মে ম্যাচে উইকেট পাননি সেই ম্যাচে তার বোলিং ছিল আরও ক্ষুরধার। প্রতিপক্ষ ছিল বিশ্বকাপ শিরোপার অন্যতম দাবিদার বিশ্বের সেরা ব্যাটিং লাইন সমৃদ্ধ ভারতীয় দল লোকেশ রাহুল রোহিত শর্মা বিরাট কোহলি সূর্য কুমার যাদবের মত ব্যাটসম্যানরা তাসকিনকে খেলতে অস্বস্তিতে পড়েছিলেন। ম্যাচে তাসকিন চার ওভারে মাত্র ১৫ রান দেন আর ডট বলছিল ১৬টি। তার বলে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা অস্বস্তিতে ভুগতে থাকায় অধিনায়ক সাকিব তাসকিনকে দিয়ে টানা চারবার বোলিং করিয়ে রান নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে সম্পূর্ণভাবে সফল।
রোহিত শর্মা তাসকিনের ৫ বল খেলে চার বলেই কোন রান নিতে পারেননি অপর বলে নিয়েছিলেন ১ রান। লুকেশ রাহুল ১০ বল খেলে ৫ রান করেন। ডট বলছিল ৬টি। এমনকি যে বিরাট কোহলি তাসকিনের প্রথম দু'বলেই বাউন্ডারি হাতে ছিলেন সেই বিরাট কোহলি ও পরে আর তাসকিনকে মারতে পারেননি। পরে আরো ৭ বল খেলে তিনি মাত্র ১ রান করেন। এতেই বুঝা যায় তাসকিন সেদিন কি অগ্নিঝরা বোলিং করেছেন। নিজের বোলিং নিয়ে তাসকিন বলেন, 'প্রত্যেক ম্যাচই আমার জন্য ইম্পোর্টেন্ট। উইকেট অনেক সময় পাবো, অনেক সময় পাবো না। আমি আমার প্রসেসে এগোচ্ছি। আমার লক্ষ্য প্রতিটি দিন, প্রতিটি ম্যাচে নিজেকে আরো উন্নতির দিকে নিয়ে যাওয়া। সবদিক থেকে উন্নতি করে নিজেকে আরো ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে চাই।'
ওরা আমাদের চেয়ে এগিয়ে আছে পাকিস্তানি বেটার টিম সবাই জানে। মেইন টার্গেট ইমপ্রুভমেন্ট করা। আগেও বলেছি আমরা গ্রেট টিম হইনি হব ইনশাল্লাহ।
অস্ট্রেলিয়ার দর্শক সবাইকে ধন্যবাদ ব্যস্ততার মাঝেও মাঠে এসে আমাদেরকে উৎসাহিত করার জন্য। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে অসাধারণ ক্লাউড ছিল এটা আমাদের জন্য বাড়তি অনুপ্রেরণা ছিল। আপনারা সব সময় এভাবে আমাদের সাপোর্ট করেন এটা আমাদের জন্য অনেক ভালো হবে।'
ভারতের বিপক্ষে তাসকিন মনে করেন তিনি শতভাগ দিয়ে বোলিং করতে পেরেছেন।তিনি বলেন ,' হ্যা, ১০০% দিতে পেরেছি। প্রত্যেকটা ম্যাচে আমি আসলে আমার নিজের বোলিংকে ফোকাস করছি। সবাই ভাই ভালো ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে বোলিং ভালো করে। আমি আমার স্ট্রেংথ বিলিভ করছি। কে ভালো খেলে সেটা আমি দেখিনা। বেশি কিছু না করে প্রসেসে এগোচ্ছি। উইকেট কি পারমিট করে, সেদিন সেই পার্টিকুলার উইকেটটা বুঝে বোলিং করার চেষ্টা করি।'
যে দুই ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছে সে দুই ম্যাচে তিনি সেরা হয়েছেন। যে দুই ম্যাচে সেরা হতে পারেননি, সে দুই ম্যাচে বাংলাদেশ হেরে গেছে। এ নিয়ে তাসকিন বলেন, যে কোন ম্যাচ হারলেই খুবই খারাপ লাগে। ঐদিন রাতে সবারই কষ্ট হয় ঘুমাতে। ম্যাচ সেরা হওয়ার পর এখানে খুবই খারাপ লেগেছে। তবে এখান থেকে অনেক পজিটিভ কিছু নেয়ার আছে। দোয়া করবেন যাতে শেষটা ভালো করে আমরা যেতে পারি।'
এমপি/এএস