বারবার কেন বাংলাদেশের বিপক্ষে সিদ্ধান্ত যায়?
সিডনির নবীন ইচ্ছেমতো মনের ঝাল মেটালেন আইসিসি ও আম্পায়ারদের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করে। মেলবোর্নের ইমুর মতে, নিদাহাস ট্রফিতে যদি আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে দলকে মাঠ থেকে তুলে নিতে পারেন, তাহলে এবারও উচিত ছিল দলকে তুলে নেওয়া। অ্যাডিলেড সিটি সেন্টারে সিঙ্গাপুর থেকে আসা কামারুজ্জামান এমন পক্ষপাতিত্ব ম্যাচ দেখার জন্য আসেননি বলে জানান।
বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) এমনই ছিল বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ পরবর্তী দিন। বাংলাদেশের একজনের সঙ্গে আরেকজনের দেখা হলেই ভেজা মাঠে খেলা শুরু আর ফেক ফিল্ডিং থেকে বাংলাদেশ দলকে ৫ রান না দেওয়ার বিষয় নিয়ে আলোচনা গরম করে তোলা হয়েছে। অনেকেরই প্রশ্ন, বারবার কেন ভারতের সঙ্গে খেলার সময় বাংলাদেশের বিপক্ষেই সিদ্ধান্ত যায়।
২০১৫ সালে এই অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে ওয়ানডে বিশ্বকাপের সময় কোয়ার্টার ফাইনালে রোহিত শর্মা আউট হলে আম্পায়ার নো বল ডেকে বাাঁচিয়ে দিয়েছিলেন। ২০১৮ সালে নিদাহাস ট্রফিতে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তো সাকিব দলই মাঠ থেকে নিয়ে গিয়েছিলেন।
বিষয়টি এখন অনেকটা ওপেন সিক্রেটের মতোই। ভারতকে সব সময় আইসিসি সুবিধা দিয়ে আসে। আবার উল্টোভাবে বলা যায়, ভারত যা চায় আইসিসি সেটা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। এবার অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের যে আসর চলছে, সেটি হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালে। কিন্তু কোভিডের কারণে তা পিছিয়ে যায়। পরের আসরের ভেন্যু ছিল ভারত। কিন্তু কোভিডের কারণে তারা নিজেদের দেশ থেকে টুর্নামেন্ট সরিয়ে নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে গত বছরই করে ফেলে। অর্থাৎ আগেরটা পরে হচ্ছে, পরেরটা হচ্ছে আগে। কারণ এখানে ভারতের ইচ্ছেই কর্ম!
আইসিসি যেখানে ভারতকে তোষণ করে, সেখানে এসিসি কি আর ভারতের উপর কথা বলার সাহস রাখে। ২০১৮ সালে ওয়ানডে এশিয়া কাপের ভেন্যু ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ও আবুধাবিতে। ৬ দলের আসরে ভারত ছাড়া বাকি ৫ দলের ম্যাচই রাখা হয়েছিল দুই ভেন্যুতে। শুধুমাত্র ভারতের সব ম্যাচ ছিল দুবাইয়ে। এটি করা হয়েছিল ভারতের আবুধাবিতে গিয়ে না খেলার অনাগ্রহের কারণে। পাকিস্তান গিয়ে ভারত খেলবে না বলে এশিয়া কাপের ভেন্যুও পরিবর্তন করতে বাধ্য হয় এসিসি।
এই দুই সংগঠনের ভারতপ্রীতির কারণ হলো বাণিজ্য আর টুর্নামেন্টের আকর্ষণ। আইসিসি কিংবা এসিসির ইভেন্টে টিভিস্বত্ব থেকে শুরু করে টাইটেল স্পন্সর সবই ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের। একশ কোটির উপরে মানুষের দেশটিতে ক্রিকেট অসম্ভব জনপ্রিয়। বিশ্বের যেসব দেশে ক্রিকেট খেলা হয়ে থাকে, সেখানেও ভারতীয় জনগণের বসবাস খুব বেশি। ভারতের খেলা হলে তারা হুমড়ি খেয়ে পড়েন। তাই আইসিসি ও এসিসি চায় তাদের টুর্নামেন্টের শেষ পর্যন্ত যেন ভারত টিকে থাকে। ভারতের ছিটকে যাওয়া টুর্নামেন্ট পানসে হয়ে পড়া। ফাইনাল সব সময় ভারত খেলতে পারে না। কিন্তু এমন অনেক নজির আছে যেখানে ভারত সেমিতে উঠার আগেই বিদায় নিয়েছে। এমন সর্বশেষ নজির ছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গত আসরে।
এবার বাংলাদেশের বিপক্ষে যেটি হয়েছে তা ছিল খুবই ন্যাক্কারজনক। দুই দলই খেলতে নেমেছিল সেমিতে যাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে। যে দল জিতবে সেমিতে যাওয়ার সম্ভাবনার দুয়ার উন্মুক্ত হয়ে যাবে। হেরে গেলে পথ হবে কণ্টকাকীর্ণ। তাই ভারত ‘বাঁচাও’মিশনে যেন নেমেছিলেন ম্যাচ রেফারি ও দুই ফিল্ড আম্পায়ার। ভারতকে সুবিধা দিতে গিয়ে কোনো রাখঢাক না করে খোলামেলাভাবে করা হয়েছে পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ।
ক্রিকেটের আজন্ম শত্রু বৃষ্টি। বৃষ্টি হলে মাঠ উপযুক্ত করে খেলা শুরু করা কঠিন হয়ে পড়ে। আর শুরু করা হলেও ওভার কমে আসে। বৃষ্টির কারণে যে অবস্থায় খেলা বন্ধ হয়েছিল তাতে পরে আর খেলা শুরু করা সম্ভব না হলে বাংলাদেশ জয়ী হতো ১৭ রানে। তাই ভারতকে বাঁচাতে ভেজা মাঠেই অনেকটা জোর করে নামিয়ে দেওয়া হয় বাংলাদেশ দলকে। এ নিয়ে আম্পায়ারদের সঙ্গে অধিনায়ক সাকিবের তর্কের একটা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। সাকিব চেয়েছিলেন মাঠ আরেকটু শুকানোর পর খেলা শুরু করতে। কিন্তু আম্পায়াররা তা মানতে রাজি ছিলেন না। কারণ খেলার দৈর্ঘ্য যত কমে আসবে ভারতের হার ততটা ঘনিয়ে আসবে। যত বেশি ওভার খেলানো যাবে ভারতের ততই সুবিধা হবে। যে কারণে ৫২ মিনিট বন্ধ থাকার পর ভেজা মাঠেই খেলা শুরু করা হয়। তার প্রমাণ পাওয়া যায় বৃষ্টির পর প্রথম ওভারেই দুর্দান্ত খেলতে থাকা লিটন দাস দুই দুইবার স্লিপ করে পড়ে যাওয়াটা।
বৃষ্টির শুরুর আগের ওভারে ফেক ফিল্ডিং করে আইসিসিরও নিয়মের ব্যত্যয় ঘটান বিরাট কোহলি। বিষয়টি নাজমুল হোসেন শান্ত বার কয়েক আম্পায়ারের নজরে আনলেও আম্পায়ার তা আমলে নেননি তিনি দেখেননি বলে। চাইলেই কিন্তু থার্ড আম্পায়ারের সহায়তা নেওয়া যেত। কিন্তু তা করা হয়নি। কারণ তাহলে সত্য বের হয়ে আসত। এ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যমেও ছবি দিয়ে তীর চিহ্ন ব্যবহার করে দেখিয়েছে। পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার ওয়াসিম আকরাম খেলার আয়োজন না করে সরাসরি ভারতীয় দলের হাতে ট্রফি তুলে দিতে বলেছেন।
এমপি/এসজি