ভেজা মাঠে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার
শেষ ১২ বলে দরকার ছিল ৩১ রান। ১৯তম ওভারে বোলিংয়ে আসা হার্দিক পান্ডিয়ার প্রথম বলে চার হাঁকান তাসকিন আহমেদ। তৃতীয় বলে মারেন বিশাল ছক্কা। পরের বলে ১ রান নিয়ে নুরুল হাসান সোহানকে স্ট্রাইক দেন তাসকিন। ওভারের শেষ দুই ডট দেন কিপার-ব্যাটার। তাতে শেষ ওভারে জিততে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ২০ রান।
আর্শদীপ সিংয়ের প্রথম বলে ১ রান নেন তাসকিন। দ্বিতীয় বলে সোহানের ছক্কা। তৃতীয় বল হয় ডট। চতুর্থ বলে ২ রান নিয়ে স্ট্রাইকে টিকে থাকেন সোহান।
পঞ্চম ওভারে চার হাঁকান তিনি। শেষ বলে বাংলাদেশের দরকার ছিল ৭ রান। সোহান নিতে পারেন ১ রান। ভেজা মাঠের সুবিধা কাজে লাগিয়ে ভারত জিতে ৫ রানে।
লিটনের ব্যাটে যে আশা জেগেছিল, বৃষ্টি এসে সেখানে দাড়ি টেনে দেয়। বৃষ্টি থামার পর আবার খেলা শুরু হলে লিটন পারেননি সেই তাল মেলাতে। বৃষ্টির পর প্রথম ওভারেই তিনি রান আউট হয়ে গেলে,বাংলাদেশের যে ছন্দ পতন ঘটে. সেখানে পরে আর কেউ তাল মেলাতে না পারাতে শেষ পর্যন্ত ভারতের কাছে ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে হার মান ৫ রানে।
ভারতের ৬ উইকেটে ১৮৪ রানের জবাবে দিতে নেমে বৃষ্টির কারণে বাংলাদেশের সামনে টাগর্টট ছিল ১৬ ওভারে ১৫১ রান। সেখানে তারা করে ৬ উইকেটে করে ১৪৫ রান। এই হারে বাংলাদেশের সেমি ফাইনালে খেলার সম্ভাবনা অনেকটাই শেষ সঞ্চয়ে গেছে। ভারতের সেমির দরজা খুলে গেল।
চার পেসার নিয়ে খেলার কারণে সৌম্য সরকারকে একাদশ থেকে বাদ দে্ওয়াতে দারুণ ফর্মে থাকা লিটন দাস আবার নিজের জায়গা ফিরে পান ইনিংসের উদ্বোধন করতে এসে। বাংলাদেশের নড়বড়ে ব্যাটিং লাইন যেখানে ১৪০. ১৫০ রান করতেই হিমসিম খায়. সেখানে ভারতের ১৮৪ রান তাড়া করে জয় আশাই করা যায় না। কিন্তু তারপরও সেই কঠিন টার্গেটের পেছনে ঠিকই ছুটেছিল বাংলাদেশ।
তাদেরকে অবিশ্বাস্য জয়ের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেন লিটন দাস। ভারতের শক্তিশালী বোলিং আক্রমণকে মাটিতে নামিয়ে এনে লিটন রানের ফুলঝুরি ছিটাতে থাকেন পিচের চারিদেকে। মাত্র ২১ বলে তিনি যখন ফিফটি তুলে নেন, তখন অপরপ্রান্তে নাজমুল হোসেন শান্তর রান মাত্র ৩। ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে রান আসে বিনা উইকেটে ৬০।
৩৩ ম্যাচ পর আসে উদ্বোধনী জুটিতে অর্ধশত রান। ব্যাটিং পাওয়ার প্লে শেষেও লিটনের রান তুলার মেশিন সচল ছিল। ৭ ওভার শেষে দলের রান যখন ৬৬, তখনই আসে বৃষ্টি। এই বৃষ্টিই বাংলাদেশের সর্বনাশ করে দেয়। ৭ ওভারের সময় বৃষ্টি এসে খেলা বন্ধ করে দেয়ার সময় ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে বাংলাদেশ ১৭ রানে এগিয়ে ছিল। এ অবস্থায় আর খেলা শুরু না হলে বাংলাদেশ ১৭ রানে জয়ী হতো। ৪০ মিনিট পর আবার যখন খেলা শুরু হয়, তখন বাংলাদেশের সামনে নতুন করে টার্গেট দেয়া হয় ১৬ ওভারে ১৫১।
তার মানে বাকি ৯ ওভারে করতে হবে ৮৫ রান। হাতে পুরো ১০ উইকেট। বৃষ্টির আগে ওভারপ্রতি রান সংগ্রহ হয়েছিল ৭.৩৩। বৃষ্টির পর খেলা শুরু হলে বাকি ৯ ওভারে ওভারপ্রতি টার্গেট দাঁড়ায় ৯.৪৪। লিটন যেভাবে খেলছিলেন তাতে করে বাংলাদেশের পালে হাওয়া ছিল। কিন্তু বৃষ্টির কারণে রান করার সেই গতিতে ভাটা পড়ে। পিচ ভিজে যাওয়াটা ছিল তার অন্যতম কারণ। যে কারণে লিটন দাস বৃষ্টির পর খেলা শুরু হলে প্রথম ওভারেই রানআউট হয়ে যান। তার আগে তিনি যে ১ রান যোগ করেন সেই রান নিতে গিয়ে স্লিপ খেয়ে পড়ে যান। শেষ হয়ে তার ২৭ বলে ৩ ছক্কা ও ৭ চারে সাজানো ৬০ রানের নান্দনিক ইনিংসের।
লিটন আউট হওয়ার পর আর কেউ সেভাবে রানের চাকা বাড়ানোর কাজে নামতে পারেননি। শুরু থেকেই ধুঁকতে থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত নিজেকে ধীরে ধীরে ফিরে পেতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু খুব বেশি দূর যেতে পারেননি। লিটন আউট হওয়ার সময় নাজমুল হোসেনের রান ছিল ১৭ বলে ৮ রান। পরে ৮ বল খেলে ১৩ রান যোগ করে ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হয়ে যান ২১ রানে। পরবর্তীকালে সাকিব (১২ বলে ১১ রান). আফিফ (৫ বলে ৩ রান) ইয়াসির আলী ( ৩ বলে ১ রান) মোসাদ্দেক (৩ বলে ৬ রান) ব্যর্থ চেষ্টা করেন।
শেষের দিকে নুরুল হাসান সোহান ও তাসকিন আহমেদ জুটিতে ৩.১ ওভার অপরাজিত ৩৭ রান যোগ করে লড়াইকে জমিয়ে তুলে হার মানেন। এই দুই জনের কারণেই শেষ বল পর্যন্ত বাংলাদেশ সম্ভাবনা ছিল। শেষ ওভারে প্রয়োজন ঠিল ২০ রানের। সেটিকে শেষ বলে তারা দুই জনে নামিয়ে আনেন ৭ রানে। ছক্কা হলে খেলা টাই। কিন্তু নুরুল হাসান সোহান নিতে পারেন মাত্র ১ রান। সোহান ১৩ বলে ১ ছক্কা ও ২ চারে ২৪ ও তাসকিন ৭ বলে ১টি করে চার ও ছক্কা মেরে ১২ রানে অপরাজিত থাকেন। হাদিক পান্ডিয়া ২৮ ও আর্শদ্বীপ সিং ৩৮ রানে নেন ২টি করে উইকেট।
এমপি/এমএমএ/